সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন প্রশ্ন ও উত্তর দ্বিতীয় অধ্যায় Class 11 Second Semester

সূচিপত্র

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন প্রশ্ন ও উত্তর দ্বিতীয় অধ্যায় Class 11 History Second Semester

সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন প্রশ্ন ও উত্তর
সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন প্রশ্ন ও উত্তর

১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?

২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?

৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।

৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি  কী ছিল?

৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?

৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।

৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

৯। মঠজীবনবাদ বলতে কী বোঝো?

১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।

১১। ইনভেস্টিচার দ্বন্দ্ব কী?

১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।

১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।

১৪। ক্রুসেড’ কী?

১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।

১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?

১৭। ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ আলোচনা করো।

১৮। ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো।

১৯। সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল- ব্যাখ্যা করো।

২০। সাধারণ মানুষ কেন দলে দলে ক্রুসেডে যোগ দিয়েছিল।

২১। ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ উল্লেখ করো।

২২। টীকা লেখো – প্রথম ক্রুসেড

২৩। টীকা লেখো – দ্বিতীয় ক্রুসেড।

২৪। প্রথম চারটি ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

২৫। টীকা লেখো- শিশুদের ক্রুসেড।

২৬। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

২৭। ক্রুসেডের ব্যর্থতার কারণসমূহ আলোচনা করো।

২৮। ক্রুসেড কী? এর ফলাফলগুলি লেখো

২৯। ক্রুসেডের মাধ্যমে কীভাবে পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল?

৩০। ক্রুসেডের পর সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে?

৩১। জাতিরাষ্ট্রের উত্থানে ক্রুসেডের ভূমিকা আলোচনা করো

৩২। কুসেডের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

৩৩। ক্রুসেডে কীভাবে বণিকগোষ্ঠী ও বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল?

৩৪। ক্রুসেডের সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

৩৫। ক্রুসেডের সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

৩৬। ইউরোপীয় সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ক্রুসেড কী ধরনের পরিবর্তন এনেছিল?

৩৭। ক্রুসেডের সূত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের (প্রতীচ্য) মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব কী ছিল?

৩৮। আধুনিক ইউরোপ গঠনের ক্ষেত্রে ক্রুসেডের কী ভূমিকা ছিল?

৩৯। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে কনস্ট্যান্টিনোপলের পতনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো

৪০। পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলতে কী বোঝো?

৪১। ইউরোপে নবজাগরণের কারণ কী ছিল?

৪২। ইউরোপে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে?

৪৩। ইউরোপের রূপান্তর ও পুনর্জন্মের ক্ষেত্রে স্কলাস্টিসিজম (Scholasticism)-এর ভূমিকা কী ছিল?

৪৪। রেনেসাঁ কী?

৪৫। ইউরোপীয় রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো

৪৬। ইটালিতে প্রথম রেনেসাঁ বা নবজাগরণ হওয়ার কারণ

৪৭। ইটালির নবজাগরণে ফ্লোরেন্স নগরের ভূমিকা কী ছিল?

৪৮। রেনেসাঁ পর্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশে মেডিচি পরিবারের ভূমিকা লেখো

৪৯। ইটালিতে নবজাগরণ আন্দোলনে সামাজিক শ্রেণিগুলির ভূমিকা আলোচনা করো

৫০। নবজাগরণের বিভিন্ন পর্যায়সমূহ আলোচনা করো

৫১। মানবতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো

৫২। মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

৫৩। নাগরিক মানবতাবাদ বলতে কী বোঝো?

৫৪। মানবতাবাদী আন্দোলনের প্রসারে রেনেসাঁর ভূমিকা লেখো

৫৫। ‘নিও-প্লেটোনিজম’ কী?

৫৬। ইতালীয় সাহিত্যে মানবতাবাদী ভাবধারার পরিচয় দাও।

৫৭। মানবতাবাদী সাহিত্যচর্চায় দান্তের ভূমিকা উল্লেখ করো

৫৮। মানবতাবাদী সাহিত্যচর্চায় পেত্রার্কের ভূমিকা উল্লেখ করো

৫৯। মানবতাবাদী সাহিত্যচর্চায় ম্যাকিয়াভেলির অবদান উল্লেখ করো।

৬০। উত্তরের মানবতাবাদ বা রেনেসাঁ কী?

৬১। জার্মানিতে সাহিত্যে রেনেসাঁর কীরূপ প্রভাব লক্ষ করা যায়?

৬২। মানবতাবাদী হিসেবে ইরাসমাসের ভূমিকা উল্লেখ করো

৬৩। ফ্রান্সে নবজাগরণের কী ধরনের প্রভাব পড়েছিল?

৬৪। স্পেনীয় সাহিত্যচর্চায় রেনেসাঁর প্রভাব আলোচনা করো।

৬৫। ইংল্যান্ডে নবজাগরণের কী ধরনের প্রভাব পড়েছিল?

৬৬। ইংল্যান্ডের সাহিত্যচর্চায় মানবতাবাদী ভাবধারার পরিচয় দাও

৬৭। ইংরেজি সাহিত্যের বিকাশে উইলিয়ম শেকস্পিয়র-এর ভূমিকা উল্লেখ করো

৬৮। দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ইউরোপে গথিক শিল্পের বিকাশ কীভাবে ঘটে?

৬৯। রেনেসাঁ শিল্পকলার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

৭০। রেনেসাঁ যুগের শিল্পীদের শিল্পচর্চার প্রধান বিষয়বস্তু কী ছিল?

৭১। ইটালির নবজাগরণের প্রেক্ষিতে শিল্পকলায় এর কী প্রভাব পড়েছিল তা সংক্ষেপে লেখো

৭২। নবজাগরণ যুগে ইউরোপে চিত্রকলার অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো

৭৩। চিত্রকলায় বত্তিসেল্লির অবদান আলোচনা করো

৭৪। দ্য গ্রেট থ্রি কারা? লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কেন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ?

৭৫। টীকা লেখো-মাইকেল এঞ্জেলো

৭৬। মানবতাবাদী শিল্পী হিসেবে রাফায়েল-এর অবদান লেখো

৭৭। চিত্রশিল্পের উপর মানবতাবাদের প্রভাব আলোচনা করো

৭৮। নবজাগরণের যুগে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো

৭৯। পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের স্থাপত্য-সংস্কৃতিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে?

৮০। নবজাগরণের সময়ে ভাস্কর্য ক্ষেত্রে কী ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটে?

৮১। নবজাগরণ যুগে সংগীতের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

৮২। রেনেসাঁ শিক্ষা বা মানবতাবাদী শিক্ষা কী?

৮৩। রেনেসাঁ শিক্ষার মধ্যে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা কীভাবে প্রতিভাত হয়েছিল?

৮৪। রেনেসাঁ যুগের শিক্ষার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করো

৮৫। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রেনেসাঁর প্রভাব লেখো

৮৬। নবজাগরণ-প্রসূত বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর অবদান উল্লেখ করো।

৮৭। আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রজার বেকন-এর অবদান আলোচনা করো।

৮৮। টীকা লেখো- বিজ্ঞানচর্চায় ফ্রান্সিস বেকন।

৮৯। বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে নবজাগরণের গুরুত্ব আলোচনা করো।

৯০। রেনেসাঁ পর্বে ইতিহাসচিন্তায় কী রূপান্তর ঘটে ব্যাখ্যা করো

৯১। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে নারীসমাজের অবস্থা কেমন ছিল?

৯২। নবজাগরণ পর্বে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও নাগরিক আদর্শ কীভাবে নারীদের প্রভাবিত করেছিল?

৯৩। নবজাগরণ পর্বে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নারী মানবতাবাদীদের সম্পর্কে লেখো

৯৪। রেনেসাঁ সংক্রান্ত বিতর্ক সম্পর্কে লেখো

৯৫। রেনেসাঁ বা নবজাগরণের সংজ্ঞা নিয়ে মিশলে ও বুর্খার্ড-এর মতবাদ আলোচনা করো। বুর্খার্ড বিরোধীদের বক্তব্য কী ছিল?

৯৬। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইউরোপে নবজাগরণের পিছনে পন্ডিতদের অবদান ব্যাখ্যা করো

৯৭। ইতালীয় রেনেসাঁর প্রভাব আলোচনা করো

৯৮। ইতালীয় রেনেসাঁর সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো

৯৯। রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল?

১০০। রেনেসাঁ বা নবজাগরণের নেতিবাচক প্রভাব আলোচনা করো

১০১। ইউরোপে রেনেসাঁর প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

১০২। রেনেসাঁ মানুষ বলতে কী বোঝো?

১০৩। ইটালির রেনেসাঁর সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের তুলনামূলক আলোচনা করো

১০৪। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

১০৫। রোমান ক্যাথলিক চার্চ কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

১০৬। রোমান ক্যাথলিক চার্চের উত্থান হয় কীভাবে?

১০৭। রোমান চার্চের প্রাধান্য বা শ্রেষ্ঠত্বের কারণগুলি কী ছিল?

১০৮। ক্যাথলিক চার্চের কর্তৃত্বের প্রতি নবজাগরণের আদর্শের প্রভাব সম্পর্কে যা জানো লেখো।

১০৯। ইউরোপে ক্যাথলিক চার্চ কেন সমালোচিত হয়েছিল?

১১০। ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

১১১। নবজাগরণ ও ধর্মসংস্কার সংক্রান্ত বিতর্কটি সম্পর্কে লেখো

১১২। প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন এবং নবজাগরণের মধ্যেকার সম্পর্ক লেখো

১১৩। ধর্মসংস্কার আন্দোলন বলতে কী বোঝো? খ্রিস্ট ধর্মের আদি সংস্কারক কারা ছিলেন?

১১৪। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন ওয়াইক্লিফ-এর ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

১১৫। প্রাক্-লুথার ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন হাসের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

১১৬। ‘লোলার্ড’ কারা? ‘হুসাইট’ কাদের বলে?

১১৭। জার্মানিতে ধর্মসংস্কার আন্দোলন প্রথমে হওয়ার কারণ কী ছিল?

১১৮। ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান আলোচনা করো।

১১৯। মার্টিন লুথারের মতাদর্শ সম্পর্কে যা জানো লেখো।

১২০। ৯৫ দফা প্রতিবেদন’ বা ‘Ninety Five Theses’ কী?

১২১। মুক্তিপত্র (Indulgence) কী?

১২২। মার্টিন লুথারের লোকায়ত দর্শনের মূল বক্তব্য আলোচনা করো

১২৩। জার্মানিতে লুথারবাদের সাফল্যের কারণগুলি কী ছিল?

১২৪। মার্টিন লুথারের আন্দোলন ইউরোপে কী ধরনের গুরুত্ব বহন করেছিল?

১২৫। লুথারবাদের সীমাবদ্ধতা কী ছিল?

১২৬। প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে ফিলিপ মেলাংকথনের ভূমিকা কী ছিল?

১২৭। প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে উলরিখ জুইংলির ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

১২৮। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন ক্যালভিনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

১২৯। জন ক্যালভিনের মতাদর্শ কী ছিল লেখো

১৩০। জন নক্স কে ছিলেন? তিনি কেন স্মরণীয়?

১৩১। ‘অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী’ কারা? অ্যানাব্যাপটিস্ট বা উগ্রবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

১৩২। অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

১৩৩। অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনে ভন কার্লস্টাড-এর ভূমিকা কী ছিল?

১৩৪। টীকা লেখো: টমাস মুনজের

১৩৫। ইংল্যান্ডের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি কী কী ছিল?

১৩৬। ইংল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ প্রচারে উইলিয়ম টিন্ডেল-এর ভূমিকা লেখো

১৩৭। অষ্টম হেনরির আমলে ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলন কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল?

১৩৮। ইংল্যান্ডে অষ্টম হেনরি পরবর্তী ধর্মসংস্কার সম্পর্কে যা জানো লেখো

১৩৯। ফ্রান্সে ধর্মসংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো

১৪০। হিউগেনট কাদের বলা হত?

১৪১। প্রোটেস্ট্যান্টদের বিভিন্ন শাখাগুলি কী ছিল?

১৪২। প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট কী ছিল? এর দুটি দিক বা বৈশিষ্ট্য লেখো

১৪৩। প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

১৪৪। ইনকুইজিশন কী?

১৪৫। কে জেসুইট সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? প্রতি-ধর্মসংস্কারে তাঁর অবদান লেখো।

১৪৬। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ধর্মীয় প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

১৪৭। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাবসমূহ আলোচনা করো

১৪৮। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাবসমূহ আলোচনা করো

১৪৯। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলি সংক্ষেপে লেখো

১৫০। মধ্যযুগের ভারতে হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়ের কারণ কী ছিল?

১৫১। সুলতানি যুগে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের পারস্পরিক ভাব সম্পর্কে আলোচনা করো

১৫২। ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝো? ভক্তিবাদের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব কী ছিল?

১৫৩। ভক্তিবাদের উত্থানের কারণগুলি কী ছিল? ভক্তিবাদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে লেখো।

১৫৪। ভক্তিবাদী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য লেখো। ভক্তিবাদের মূল আদর্শগুলি কী ছিল?

১৫৫। ভক্তিবাদের উৎপত্তি কীভাবে হয়?

১৫৬। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ভক্তিবাদের উত্থান বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো

১৫৭। টীকা লেখো: আলবার ও নায়নার সম্প্রদায়

১৫৮। ভক্তিবাদের আদি প্রচারক হিসেবে শংকরাচার্য ও মাধবাচার্যের ভূমিকা লেখো

১৫৯। টীকা লেখো: মধ্যযুগের ভক্তিবাদী সাধক রামানুজ

১৬০। ভক্তিবাদ প্রচারে রামানন্দের ভূমিকা কী ছিল?

১৬১। ভক্তিবাদ প্রচারে কবীরের ভূমিকা লেখো

১৬২। ভক্তিবাদী সাধকরূপে বা একেশ্বরবাদী তত্ত্বের প্রচারকরূপে গুরু নানকের অবদান উল্লেখ করো

১৬৩। টীকা লেখো: দাদু দয়াল

১৬৪। ভগবানের প্রতি অনন্ত প্রেমে বিশ্বাসী সাধক তুলসীদাস কেন স্মরণীয়?

১৬৫। টীকা লেখো: বল্লভাচার্য

১৬৬। সুফিবাদের উপর অন্যান্য সাহিত্য ও দর্শনের প্রভাব লেখো। সুফিবাদের উপর ভারতীয় প্রভাব কতটা ছিল?

সুফিবাদে ‘বা-শরা’ ও ‘বে-শরা’ বলতে কী বোঝায়? সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো

সুফিসাধকরা ছিলেন অতীন্দ্রিয়বাদী। তাঁরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলেন। সুফিসাধকদের এই গোষ্ঠীগুলিকে সিলসিলা বলা হয়। সুফিরা প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিলেন- বা-শরা এবং বে-শরা।

বা-শরা

সুফিসাধকদের যে মূল অংশ সিলসিলার সদস্য হিসেবে ইসলাম ধর্মতত্ত্ব ও শরিয়তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অতীন্দ্রিয় ধর্মচর্চা করতেন, তাঁদের বলা হয় বা-শরা।

বে-শরা

সুফিদের যে ছোটো অংশ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে এবং শরিয়তকে অস্বীকার করে রহস্যবাদী ও কঠোর ধর্মাচরণ তথা কৃচ্ছসাধন করতেন, তাঁদের বলা হয় বে-শরা। উপরোক্ত দুটি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ভারতে কালান্দার নামক ভ্রাম্যমাণ সুফিদের কথাও জানা যায়। এই সাধকেরা নির্দিষ্ট কোনও খাল্কা স্থাপন করেননি। তা সত্ত্বেও হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে কালান্দার সাধকেরা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।

সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

সুফিবাদ হল ইসলামের আধ্যাত্মিক এবং মরমী ধারার গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। এর মূল উদ্দেশ্য হল- আল্লাহ্র সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন। সুফিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ: আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা হল সুফিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুফিসাধকরা স্রষ্টার সঙ্গে মিলনের জন্য অবিরাম ঈশ্বরচিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন। তাঁদের মতে, ভালোবাসার মাধ্যমেই ঈশ্বরের সঙ্গে সত্যিকারের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব।

(2) পবিত্র জীবনযাপন: সুফিবাদের মূল বিষয় হল, আত্মার শুদ্ধি (তাজকিয়া বা Tazkiyah)। আর এরজন্য সুফিসাধকেরা মানুষের পবিত্র জীবনযাপনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

(3) মানসসন্ডার উপর গুরুত্ব আরোপ ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাস : সুফিবাদে মানুষের মানসসত্তার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুফিবাদী সন্তেরা মনে করতেন, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন। এঁরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।

(4) পির-মুরিদ সম্পর্ক: সুফিবাদে পির বা গুরুকে অত্যন্ত মান্যতা দেওয়া হয়েছে। একজন পির মানুষের আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শন করবেন এবং মুরিদ বা শিষ্যগণ পিরের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চলবেন।

(5) আধ্যাত্মিক অনুশীলন: সুফিসাধকেরা যাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁরা নিয়মিত প্রার্থনা, ধ্যান, আল্লাহর নামের স্মরণ তথা পুনরাবৃত্তি (জিকির) ইত্যাদি আধ্যাত্মিক অনুশীলন করতেন। 

(6) সহজ-সরল জীবনযাপন: সুফিরা ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য অতিরিক্ত জাগতিক সুখভোগ ত্যাগ করে কৃষ্ণসাধনের মাধ্যমে জীবনযাপন করতেন। পাছে ঐশ্বর্য ও সুখ তাঁদের ঈশ্বরবিমুখ করে- এই চিন্তায় তাঁরা সাধারণ ও সহজ-সরল জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন।

(7) ঐক্য ও সহিষুতা: সুফিবাদে তাওহিদ বা আল্লাহর সঙ্গে ঐক্যস্থাপনকে বিশ্বাস করা হয়। সুফিসন্তরা মানুষের প্রতি সহনশীলতা, ক্ষমা এবং ভালোবাসার নীতিকে আপন করে নিয়েছিলেন।

(8) আধ্যাত্মিক নৃত্য ও গীত: অনেক সুফি সম্প্রদায় আধ্যাত্মিক নৃত্য (যেমন- সমা বা ঘুর্ণন নৃত্য) ও সংগীতের (যেমন- কাওয়ালি) মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি নিজেদের ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করতেন। এর মাধ্যমেই সাধকেরা ঈশ্বরকে অন্তরে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন।

বস্তুত সুফিরা সর্বভূতে ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা মধ্যযুগীয় সময়ে দাঁড়িয়ে ইসলাম এবং মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

সুফিবাদী দর্শনে কী বলা হয়েছে?

অথবা,

সুফি মতবাদের মূলতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো

সুফিবাদের দর্শন/মূলতত্ত্ব

সুফিসাধকেরা হলেন ইসলামের শান্তিদূত। মহম্মদের ভাবধারা ও কর্মকে একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করাই তাঁদের ব্রত। সুফিবাদী দর্শনের স্বরূপটি হল-

(1) মুফিবাদের পথ: সুফিবাদে মূলত দুটি পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল- আপন অন্তরে ঈশ্বরকে (আল্লাহ) অনুভব করা এবং • সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সম্পর্ক উপলব্ধি করা। এজন্য দুটি পথের নিদের্শও দেওয়া হয়েছে- মার্গ বা তরীফৎ এবং জ্ঞান বা মরীফৎ। মার্গ হল সাতটি, যেমন- প্রেম, সেবা, ত্যাগ, ধ্যান, যোগ, সমীকরণ ও সংযোগ। জ্ঞান দুই প্রকার, যথা- বুদ্ধিনির্ভর জ্ঞান বা ইলম এবং অপরোক্ষ জ্ঞান বা মরীফৎ।

(2) সন্ডার ঐক্যপ্রতিষ্ঠা: সুফিবাদের অধ্যাত্মদর্শন সত্তার ঐক্য (Unity of being) বা ওয়াদাত-উল-ওয়াজুদ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মতে, স্রষ্টা (হক) এবং সৃষ্টি (খালক) অভিন্ন। এই প্রকৃতির দৃশ্যমান বৈচিত্র্য আসলে একই ঈশ্বরের বহুমুখী প্রকাশমাত্র। সুফিরা মনে করেন যে, একান্ত প্রেম ও ভালোবাসার মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোনো সম্ভব। অতীন্দ্রিয় সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের আশায় সুফিরা জাগতিক সুখ-সম্পদ ভোগ থেকে দূরে থাকা আবশ্যিক মনে করেন। এই কারণে পার্থিব শক্তি বা বিষয়- আশয় থেকে তাঁরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থেকে সাধনায় লিপ্ত থাকতেন। 

  • এজুদীয়া এবং সুহূদীয়া: স্রষ্টা (হক) ও সৃষ্টি (খাল)-এর সম্পর্ক বিষয়ে সুফিদের মধ্যে দুটি মতাদর্শ চালু আছে- ওজুদীয়া এবং শুহূদীয়া। ওজুদীয়া-রা বিশ্বাস করেন যে, সবকিছুই ঈশ্বরময় (হাস্য ওসৎ)। অন্যদিকে শুহূদীয়াদের মতে, বিশ্বের সবকিছুই ঈশ্বর থেকে সৃষ্ট (হামা আজ্ব ওসৎ)।

(3) সুফিসাধনার স্তর: একটি মতানুযায়ী, ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য সুফিসাধককে সাধনার মোট দশটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। সেগুলি হল- • তওবা (অনুশোচনা), ওয়ারা (নিবৃত্তি), জুহদ (ধার্মিকতা), • ফক্স (দারিদ্র্যের স্বাদগ্রহণ), সত্র (সহনশীলতা), শুক্র (কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন), খুফ (অন্যায়ের প্রতি ভয়), রজা (আল্লাহর করুণালাভের ইচ্ছা), তওয়াক্কুল (সুখে-দুঃখে অচঞ্চল থাকা) ও রিজা (সর্বশক্তিমানের কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ)। সুফিরাও ভক্তিসাধকদের মতো পার্থিব জগতের সঙ্গে সম্পর্কশূন্য থাকাকে গুরুত্ব দিতেন।

(4) গুরুবাদ: সুফিদর্শনে পির বা গুরুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ঈশ্বরের সান্নিধ্যলাভের জন্য পির তাঁর শিষ্য বা মুরিদ-কে সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন। গুরুর নেতৃত্ব ও প্রদর্শিত পথে অখণ্ড প্রেম এবং ভক্তিভাবনা দ্বারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মিলন সম্ভব বলে মনে করা হত। সুফি গুরুরা শেখ বা মুর্শিদ নামেও অভিহিত হতেন। এঁরা অধিকাংশই নির্জন স্থানে দরগা বা খাল্কা নির্মাণ করে বসবাস করতেন। এই সমস্ত দরগাগুলিতে পির তাঁর শিষ্যদের ইসলামীয় শাস্ত্র, আধ্যাত্মিক উন্নতি বিষয়ে শিক্ষাদীক্ষা দিতেন। অবশ্য খাকাগুলিতে দরিদ্রদের চিকিৎসা ও অন্নদানও করা হত। এই সমস্ত দরগাগুলিতে পির তাঁর শিষ্যদের ইসলামীয় শাস্ত্র, আধ্যাত্মিক উন্নতি বিষয়ে শিক্ষাদীক্ষা দিতেন। অবশ্য খাকাগুলিতে দরিদ্রদের চিকিৎসা ও অন্নদানও করা হত।

সুফি আন্দোলন বলতে কী বোঝো? সুফিবাদী আদর্শের পরিচয় দাও

সুফি আন্দোলন

সুফি আন্দোলন হল ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক ধারা, যা আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন এবং তার মাধ্যমে মানবজীবনের অন্তর্নিহিত ও আধ্যাত্মিক দিকের উন্নতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে। খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে এই আন্দোলন ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রসারিত হয়েছিল।

(1) মূল ধারণা: সুফি আন্দোলনে পার্থিব ভোগবিলাস এবং বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান থেকে মুক্ত হয়ে অন্তর্দৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ অর্জনের উপর জোর দেয়। সুফিরা বিশ্বাস করেন, আত্মশুদ্ধি, ধ্যান এবং গভীর প্রেমের মাধ্যমেই আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়া সম্ভব।

সুফিবাদী আদর্শ

ইসলাম ধর্মের উদারনৈতিক ভাবধারাই হল সুফিবাদ। সুফিসাধকেরা অতীন্দ্রিয়বাদের সাধনা করতেন এবং নিজেদের ইসলাম ও মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। অষ্টম শতকের মহিলা সুফি রাবিয়া এবং দশম শতকের সুফিসাধক মনসুর প্রেমের মধ্যেই ঈশ্বর ও মানুষের মিলনসেতুকে প্রত্যক্ষ করেছেন।

(1) আদর্শসমূহ: সুফিবাদে বলা হয় যে, ঈশ্বরের প্রেমই হল প্রকৃত অস্তিত্বের মূল। এই প্রেমের মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে একাত্মতা অর্জন করা সম্ভব। এই মতবাদে আত্মশুদ্ধি ও মোরাকাবা (ধ্যান), জিকির (আল্লাহর নামের পুনরাবৃত্তি), সুলুক (আধ্যাত্মিক ভ্রমণ) ইত্যাদি পালন করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি লোকশিক্ষার ব্যবস্থা করা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার করা, সহজ-সরল জীবনযাপন করা, মানবজাতির মধ্যে সাম্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবতা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি ছিল সুফিবাদের আদর্শ। সুফিদের এই মহান আদর্শগুলি এক শান্তিপূর্ণ, সুখী সমাজগঠনের ইঙ্গিতবাহী ছিল।

এখানে ধৈর্য, সন্তুষ্টি প্রভৃতি সদগুণের অনুশীলন করে, সামাজিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ও মৈত্রীর ভিত্তিতে পারস্পরিক অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মবিদ জাকারিয়া অল-আনসারি (Zakariyya al-Ansari)-র মতে, অনন্ত শান্তিলাভের জন্য আত্মাকে কীভাবে পরিশুদ্ধ করতে হয়, নৈতিক মান কীভাবে উন্নত করতে হয় এবং কীভাবেই বা ব্যাবহারিক জীবনে আচরণ করতে হয়, সুফিবাদ { সেই শিক্ষাই দান করে।

ভারতে সুফিবাদের প্রসারের কারণগুলি কী কী

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের (৭১২ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালে ভারতে সুফিদের প্রথম আগমন ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। এরপর প্রায় তিন শতকব্যাপী কালপর্বে সিন্ধুপ্রদেশে আরবদের আধিপত্যের যুগে কোনও কোনও সুফিসাধক ভারতে প্রবেশ করলেও তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠার পর দলে দলে সুফিরা মধ্য এশিয়া থেকে এদেশে আসতে থাকেন ও নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। ক্রমে উপমহাদেশে প্রসার ঘটতে থাকে সুফিবাদের। এর পশ্চাৎপটে বেশ কয়েকটি কারণ লক্ষণীয়।

ভারতে সুফিবাদের প্রসারের কারণসমূহ

(1) সুফিসাধকদের জীবনাদর্শ: সুফিসাধকেরা তাঁদের উদারতা, বৈরাগ্য ও সহজ-সরল জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে খুব দ্রুত দরিদ্র-শোষিত নিম্নশ্রেণির ভারতবাসীকে কাছে টানতে পেরেছিলেন।

(2) অলৌকিক শক্তিপ্রদর্শন: সুফি দরবেশ ও পিরগণ জনগণের সামনে নানান অলৌকিক শক্তি প্রদর্শন করতেন। সাধারণ মানুষের তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি আগ্রহ থাকায় তারা সহজেই সুফিসাধকদের দিকে আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। অনেকেই খাল্কা বা দরগাগুলিতে আসতে থাকেন। এমনকি ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেন।

(3) সুফিদের মতবাদ: সুফিদের সামাজিক সাম্যবাদ, একেশ্বরবাদ, জাতি- ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষের স্বাধিকারের ধারণা এদেশের জনগণকে মুগ্ধ করে। সুফিসাধকেরা হিন্দু সন্ন্যাসী ও তান্ত্রিকদের চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হন। তবে লক্ষণীয় যে, ভারতীয় সুফিরা গোঁড়া ধর্মকেন্দ্র বা রাজনীতির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রাখতে চাননি। তাঁরা মনে করতেন যে, বিষয়-বৈভব বা রাজনীতির সঙ্গে উলেমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা নিতান্তই ইসলামবিরোধী। এঁদের ধারণা ছিল যে, পৃথিবীতে এক নতুন যুগ আগত, যেখানে এক মেহদী (উদ্ধারকর্তা) ইসলামের মর্মবাণীকে পুনঃসংস্থাপন করবেন।

বিভিন্ন সুফি সম্প্রদায়ের পরিচয় দাও।

অথবা,

সুলতানি যুগের বিভিন্ন সুফি সিলসিলা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো

সুফি সম্প্রদায় / সিলসিলা

দ্বাদশ শতক নাগাদ সুফিরা ‘সিলসিলা’-র মাধ্যমে সংগঠিত হতে শুরু করেন। সিলসিলা-র আক্ষরিক অর্থ হল, গুরু ও শিষ্যের মধ্যে গড়ে ওঠা অখণ্ড সম্পর্কের শৃঙ্খল। এই অখন্ড ও ধারাবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে পয়গম্বর ও শিষ্যের মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাবের আদানপ্রদান সম্ভব হয়। সিলসিলাকে ভিত্তি করে সুফিরা নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হন। মুর্শিদের নাম বা পদবি অনুসারে তাঁরা পরিচিত হতে থাকেন। যেমন- চিক্তি সিলসিলা, সুরাবর্দি সিলসিলা, কাদিরিয়া সিলসিলা ইত্যাদি। ভারতে প্রবেশের আগে সুফিদের মধ্যে ১৭৫টি সিলসিলা বা সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল লিখেছেন যে, ভারতে সুফিদের ১৪টি সম্প্রদায় প্রবেশ করেছিল। অবশ্য এদের মধ্যে চিন্তি ও সুরাবর্দি সম্প্রদায়ই বেশি প্রভাবশালী ছিল। উভয় সম্প্রদায়ের সাধকেরা ছিলেন বা-শরা বা শরা-র অনুগামী

(1) চিহ্নি সিলসিলা: চিন্তি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা হলেন খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে তিনি এই সম্প্রদায় বা সিলসিলা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সহজ-সরল জীবনাদর্শ খুব শীঘ্রই সাধারণ মানুষের মন জয় করে। হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষই তাঁর শিষ্য হন। এই সম্প্রদায়ের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য সন্ত ছিলেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া। এ ছাড়া কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি, নাসিরুদ্দিন চিরাগ, সেলিম চিন্তি প্রমুখও ছিলেন অন্যতম।

(2) সুরাবর্দি সিলসিলা: শেখ শিহাবউদ্দিন সুরাবর্দি ছিলেন সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। এই সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। সুরাবর্দি সাধকেরা অর্থসম্পদকে ধর্মজীবনের উন্নতির বিঘ্ন বলে মনে করতেন না। বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, সৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারি ছিলেন এই সিলসিলার স্বনামধন্য সাধক।

(3) কাদিরিয়া সিলসিলা: সুফিদের একটি অন্যতম সম্প্রদায় ছিল কাদিরিয়া। শেখ আবদুল কাদির জিলানি ছিলেন এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। শেখ আবদুল হক, মিঞা মীর, মুল্লা শাহ ছিলেন উপমহাদেশে কাদিরিয়া শাখার কয়েকজন প্রতিথযশা সন্ত।

(4) নকশবন্দিয়া সিলসিলা: নকশবন্দিয়া সুফিদর্শনের প্রধান পুরুষ হলেন খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ। ভারতবর্ষে নকশবন্দিয়া মতাদর্শকে জনপ্রিয়তা দেন খাজা বাকিবিল্লাহ। শেখ আহমদ সিরহিন্দি হলেন একজন প্রখ্যাত নকশবন্দিয়া সাধক। উপরোক্ত সিলসিলাগুলি ছাড়াও ভারতবর্ষে মধ্যযুগে শত্তারি সিলসিলা, ফিরদোসি সিলসিলা

(5) ফিরদোসি সম্প্রদায় : ফিরদোসি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সমরখন্দের শেখ বদরউদ্দিন। প্রথমদিকে ভারতবর্ষের দিল্লিতে এই সম্প্রদায়ের বিকাশ ঘটলেও পরবর্তীতে বিহার ফিরদোসিদের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। শেখ শরফউদ্দিন ছিলেন ফিরদোসি সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ সাধক সুফিবাদের প্রচারকার্যে নিয়ত ছিল। আলোচ্য পর্বে এদেশে যে সুফি ভাবধারা প্রবাহিত হয়েছিল, এই সম্প্রদায় বা সিলসিলাগুলিই ছিল তার দ্যোতক।

ভারতে সুফিবাদের প্রসারে চিন্তি সম্প্রদায়ের ভূমিকা লেখো

চিস্তি সম্প্রদায়

চিন্তি সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয়েছিল আফগানিস্তানের চিন্ত-এ। প্রখ্যাত সুফিসাধক খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি প্রথম ভারতে এই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

(1) আদর্শ: চিশতি সাধকেরা ছিলেন উদার এবং সাদামাটা পবিত্র – জীবনযাপনে বিশ্বাসী। এই সাধকরা উপবাস ও কৃচ্ছসাধনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপর গুরুত্ব দিতেন এবং যাবতীয় পার্থিব ভোগবাদ থেকে দূরে থাকতেন। চিন্তি সম্প্রদায়ের সুফিরা মানুষে মানুষে প্রভেদ মানতেন না। দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, বিহার, গুজরাট এমনকি দাক্ষিণাত্যেও চিন্তি সম্প্রদায় তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল।

(2) প্রখ্যাত চিশতি সাধকগণ: ভারতের কয়েকজন বিশিষ্ট চিন্তি । সাধকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

  • খাজা মইনউদ্দিন চিস্তি: খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি (১১৪১ খ্রিস্টাব্দ, মতান্তরে ১১৪৩-১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ভারতে চিন্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শিস্তান থেকে ভারতে আসেন এবং লাহোর ও দিল্লিতে কিছুকাল অবস্থানের পর চলে যান আজমিরে (সম্ভবত ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ)। আজমিরই ছিল তাঁর প্রধান কর্মকেন্দ্র। আজমিরে মইনউদ্দিন চিন্তির সমাধিটি আজও জাতি-বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের কাছেই তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। 
  • শেখ হামিদউদ্দিন: খাজা মইনউদ্দিনের অন্যতম শিষ্য ছিলেন শেখ হামিদউদ্দিন। রাজস্থানের নাগাউর শহরকে তাঁর সুফিবাদ প্রচারের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেখানেই তিনি গৃহী জীবনযাপন করতেন। স্থানীয় হিন্দাভি (Hindavi) ভাষায় শেখ হামিদ সুফিতত্ত্ব প্রচার করতেন।
  •  কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি : বিশিষ্ট সুফিসাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি (১১৭৩ ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন খাজা মইনউদ্দিন চিন্তির উত্তরসূরি। ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে বখতিয়ার কাকি ভারতে আসেন। চিন্তি সিলসিলাকে দিল্লিতে প্রধান সুফি সম্প্রদায়রূপে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা তাঁরই ছিল। অনুমিত হয় যে, বখতিয়ার কাকির স্মৃতিরক্ষার্থেই দিল্লিতে কুতুবমিনার নির্মিত হয়েছিল।
  • হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া: হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (১২৩৮-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন চিপ্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফিসাধক। জানা যায়, সুলতানি আমলের জিয়াউদ্দিন বারানি এবং আমির খসরু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
  • নাসিরুদ্দিন চিরাগ: চিত্তি সিলসিলার অন্যতম বিখ্যাত সুফিসন্ত হলেন নাসিরুদ্দিন চিরাগ (১২৭৪-১৩৫৬ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি চিরাগ-ই-দিল্লি বা দিল্লির আলো নামে পরিচিত ছিলেন। উপরোক্ত চিতি সাধকগণ ছাড়াও শেখ ফরিদউদ্দিন-গঞ্জ-ই শক্কর, সেলিম চিত্তি ছিলেন এই সিলসিলার বিশিষ্ট প্রচারক। চিতি সন্তদের জীবনাদর্শ, ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাধনা ভারতের জনসাধারণকে প্রভাবিত করেছিল।
  • জ্শেখ ফরিদউদ্দিন-গঞ্জ-ই শম্ভুর: উত্তর ভারতে সুফিবাদের একজন বিশিষ্ট প্রচারক ছিলেন শেখ ফরিদউদ্দিন-গঞ্জ-ই শক্কর (আনুমানিক ১১৭৩-১২৬৬ খ্রিস্টাব্দ), যিনি বাবা ফরিদ নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। শেখ ফরিদউদ্দিন অল্প বয়সেই শেখ কুতুবউদ্দিনের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে হরিয়ানার হানসি প্রদেশে তিনি খাল্কা প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তীতে বর্তমান পাকিস্তানের অযোধানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। হিন্দু ভক্তিবাদী সাধকদের সঙ্গে শেখ ফরিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি পার্থিব বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, পরোপকারিতা ইত্যাদির উপর জোর দিয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এত উদার ছিল যে, শিখদের আদিগ্রন্থে শেখ ফরিদের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।

টীকা লেখো: হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া

হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া

বাবা ফরিদ গঞ্জ-ই- শক্করের যোগ্য উত্তরসূরি এবং চিন্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফিসাধক ছিলেন হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (১২৩৮-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ)। ভারতে সুলতানি আমলের এই বিখ্যাত সুফিসন্ত দিল্লির নানান রাজনৈতিক উত্থানপতনের সাক্ষী থেকেছেন।

(1) প্রথম জীবন: হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া উত্তরপ্রদেশের বদাউনে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তিনি পিতাকে হারান। মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজামউদ্দিন বাবা ফরিদের শিষ্য হন।

(2) কর্মজীবন: নিজামউদ্দিন আউলিয়ার জীবৎকালে ৭ জন সুলতান দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এঁদের মধ্যে একজনেরও দরবারে যাননি কিংবা সুলতানের সাহায্যও গ্রহণ করেননি। সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একবার এই মহান সাধককে শাস্তিদানের হুমকি দিলে তিনি বলেছিলেন দিল্লি হনুজ দূর অস্ত (দিল্লি এখনও বহুদূর)। কাকতালীয়ভাবে গৌড় অভিযান সমাপ্ত করে দিল্লিতে প্রবেশের আগেই সুলতান গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনা নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত করে।

(3) কৃতিত্ব: নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন একজন প্রকৃত জনদরদি। তিনি সুলতান খসরু কর্তৃক প্রদান করা অর্থ গরিব মানুষদের মাঝে বিতরণ করেন। সমগ্র দেশেই তাঁর খাকা প্রতিষ্ঠিত ছিল। বহু অভিজাত নাগরিক এই সাধককে ‘পির’ হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। সুলতানি আমলের সুবিখ্যাত ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারানি এবং কবি ও সংগীতজ্ঞ আমির খসরু ছিলেন তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম।

খাজা মইনউদ্দিন চিস্তি এবং সেলিম চিন্তির পরিচয় দাও

খাজা মইনউদ্দিন চিস্তি

ভারতীয় উপমহাদেশে চিন্তি ধারার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি (১১৪১, মতান্তরে ১১৪৩-১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি গরিব নওয়াজ নামেও সর্বজন পরিচিত।

(1) প্রথম জীবন: খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের মধ্যভাগে খাজা মইনউদ্দিন চিন্তি পারস্যের শিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। অল্পবয়স থেকেই তিনি অতীন্দ্রিয়বাদের দিকে আগ্রহী হয়ে পড়েন। এরপর ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। কিছু সময় লাহোর ও দিল্লিতে বসবাসের পর অবশেষে তিনি আজমিরে পদার্পণ করেন। এখানেই তিনি তাঁর ধর্মকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।

(2)মতাদর্শ ও প্রচার: খাজা মইনউদ্দিন চিত্তি বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন এবং আবদুল কাদির জিলানি, নজমউদ্দিন কুবরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি একজন হিন্দু সন্ন্যাসীর মতোই জীবনযাপন করতেন। বেদান্ত দর্শনের ন্যায় অদ্বৈতবাদ প্রচার করতেন তিনি। প্রভেদ শুধু এতটুকুই ছিল যে, তিনি সৃষ্টিকর্তাকে আল্লাহ্ নামে ডাকতেন। মইনউদ্দিন সাধারণ মুসলিমদের জীবন ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করার শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। শেখ হামিদউদ্দিন, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকি প্রমুখ ছিলেন তাঁর স্বনামধন্য শিষ্যবর্গ।

(3) মৃত্যু: ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে এই মহান সাধক পরলোকগমন করেন। আজমিরে মইনউদ্দিন চিন্তির সমাধিটি আজও জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের কাছেই তীর্থস্থান স্বরূপ। জানা যায়, সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর সমাধি পরিদর্শন করেছিলেন।

সেলিম চিস্তি

সেলিম চিস্তি (১৪৭৮-১৫৭২ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ভারতে চিন্তি ধারার একজন প্রতিথযশা সুফিসাধক। পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে তিনি পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন শেখ ফরিদের শিষ্য।

(1) কৃতিত্ব: মুঘল সম্রাট আকবর ছিলেন মহান সাধক সেলিম চিস্রতি একান্ত অনুরাগী। কথিত আছে, আকবর তাঁকে একজন পুরুষ উত্তরাধিকারীর জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। সেলিম চিন্তি আকবরকে আশীর্বাদ করেন এবং তাঁর নামানুসারেই আকবর তাঁর পুত্রসন্তান জাহাঙ্গিরের নাম রাখেন সেলিম। জানা যায়, সেলিম চিন্তির একমাত্র কন্যা নাকি জাহাঙ্গিরের পালক মাতা ছিলেন।

(2) সমাধি: এই খ্যাতনামা সন্তের মরদেহ ফতেহপুর সিক্রির জাম-ই- মসজিদে সমাধিস্থ করা হয়। সম্রাট আকবর এই সমাধির উপর নির্মাণ করেন এক অপূর্ব স্মৃতিসৌধ, যা আজও মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে বিস্ময়।

ভারতে সুফিবাদের প্রচারে সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের কী ভূমিকা ছিল?

অথবা,

টীকা লেখো: সুরাবর্দি সম্প্রদায়

সুরাবর্দি সম্প্রদায়

চিস্তি সম্প্রদায় ছাড়াও অপর এক উল্লেখযোগ্য সুফি সিলসিলা হল সুরাবর্দি বা সুহরাবর্দি সম্প্রদায়। বাগদাদে শেখ শিহাবউদ্দিন সুরাবর্দি এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন।

(1) মতাদর্শ: সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের সুফিরা কখনোই অতিরিক্ত কৃচ্ছসাধনের পক্ষপাতী ছিলেন না। এঁরা বিচারবিভাগীয় ও ধর্মসংক্রান্ত উচ্চপদে থেকে ধর্মচর্চায় লিপ্ত ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের সুফিরা বিলাসী জীবনযাপন পছন্দ করতেন। স্বভাবতই সমাজের নিম্নশ্রেণির দরিদ্র ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না।

(2) ভারতে সুরাবর্দি আদর্শ: মুলতানের শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া আরবদেশে গিয়ে সুরাবর্দির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। অতঃপর তিনি মুলতানে এসে খাল্কা প্রতিষ্ঠা করে সুরাবর্দির আদর্শ প্রচার করতে থাকেন। সিধু ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে সুরাবর্দি মতাদর্শের যথেষ্ট প্রভাব ছিল।

(3) বাহাউদ্দিন জাকারিয়া: ভারতে সুরাবর্দি সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (আনুমানিক ১১৭০ – ১২৬২ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত মুলতানের কাছে কোট কেহরর (বর্তমান নাম কারোর লাল এসান) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গোঁড়া উলেমাদের মতো রোজা, নামাজ ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠানের উপর জোর দেন। সুলতান ইলতুৎমিসকে। তিনি সিন্ধু প্রদেশে আহ্বান করেন এবং নাসিরুদ্দিন কুবাচার বিরুদ্ধে  সহায়তা দানও করেন। বাহাউদ্দিন জাকারিয়া সরকারি অনুদান নিয়ে গরিব- দুঃখীদের সাহায্য করতেন। জাকারিয়ার মৃত্যুর ১৫০ বছরের মধ্যে তাঁর অনুগামীরা সিধু প্রদেশ ও পাঞ্জাবে প্রভাব বিস্তার করেন। ক্রমে বাংলা, গুজরাট ও কাশ্মীরেও তারা ছড়িয়ে পড়েছিলেন।

(4) অন্যান্য সুরাবর্দি সাধকগণ: সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের অন্যান্য সাধকরা হলেন- সদরউদ্দিন আরিফ, সৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারি প্রমুখ। প্রথমদিকে জনপ্রিয় হলেও ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক পথ, মানুষের মঙ্গলসাধন, সমদর্শিতা, পরমত সহিষ্ণুতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রকট হতে থাকে। এর ফলে একটা সময় এই গোষ্ঠী জনপ্রিয়তা হারায়।

নকশবন্দিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে যা জানো লেখো

নকশবন্দিয়া সম্প্রদায়

নকশবন্দিয়া সুফিদর্শনের উদ্ভব হয়েছিল তুর্কিস্থানে এবং এই দর্শনের উদ্‌দ্গাতা ছিলেন খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (১৩১৮-১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ)। বাহাউদ্দিনের শিষ্য উবায়দুল্লা অল- আহরার এই মতবাদকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।

(1) খাজা বাকিবিল্লাহ: ভারতভূমিতে নকশবন্দিয়া মতবাদকে যিনি জনপ্রিয়তা দিয়েছিলেন, তিনি হলেন খাজা বাকিবিল্লাহ (১৫৬৪- ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ)। মাত্র ৪১ বছর বয়সে বাকিবিল্লাহ মারা গেলে তাঁর শিষ্য শেখ আহম্মদ সিরহিন্দি (১৫৬৪-১৬২৪ খ্রিস্টাব্দ) নকশবন্দিয়া মতবাদকে ছড়িয়ে দেন ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে।

(2) শেখ আহম্মদ সিরহিন্দি: সুফিসাধক শেখ আহম্মদ সিরহিন্দি ছিলেন ব্যক্তিত্ববান ও সুবক্তা। তিনি সাধারণ মুসলিমদের কাছে সহজ-সরলভাবে নকশবন্দিয়া ভাবধারা প্রচার করেন। তিনি ইৎবা-ই-সন্নত (ঐতিহ্য বা বিধিনিয়মের অনুসরণ) এবং বাকা-ই-বিদৎ (নতুনত্বের প্রতি অনাকর্ষণ) এই দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন। তাঁর মতবাদ ওয়াদাৎ-ই-শুহুদিয় নামে খ্যাত। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পৃষ্ঠপোষকতায় সিরহিন্দি ইসলাম ধর্মের পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও এই কাজ করতে গিয়ে তিনি সুফিদর্শনের মৌলিক দুটি বৈশিষ্ট্যকেই (ধর্মসহিষুতা, সমন্বয়) অগ্রাহ্য করেন। এতকাল যাবৎ সুফিবাদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের যেসব আচার-অনুষ্ঠান প্রবেশ করেছিল, তিনি সেগুলিকে পরিহার করতে বলেন। অনুদারতা ও অদূরদর্শিতার কারণে এই সুফিসাধক ভারতের জনমানসে কোনও স্থায়ী চিহ্ন রেখে যেতে পারেননি।

(3) অন্যান্য নকশবন্দিয়া সাধকগণ: শেখ আহম্মদ সিরহিন্দির প্রয়াণের পর তাঁর পুত্র খাজা মহম্মদ মাসুদ, খাজা মহম্মদ নকশবন্দ এবং খাজা মহম্মদ জুবেইর কিছুকাল নকশবন্দিয়া ভাবাদর্শকে সজীব রেখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই আদর্শের প্রভাব দ্রুত শিথিল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

1 thought on “সাংস্কৃতিক পরম্পরার পরিবর্তন প্রশ্ন ও উত্তর দ্বিতীয় অধ্যায় Class 11 Second Semester”

Leave a Comment