রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যকৃতিত্ব আলোচনা করো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যকৃতিত্ব আলোচনা করো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যকৃতিত্ব আলোচনা করো
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যকৃতিত্ব আলোচনা করো

আবির্ভাবকাল: পারিবারিক আবহেই রবীন্দ্রচিত্তে নাট্যভাবনার উদ্ভব হয়েছিল। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে যে অভিনয় হত তাতে বালক রবি বারে বারে যোগ দিতেন এবং পরে এরই প্রভাবে তিনি নাটক রচনায় ব্রতী হন।

নাট্যসম্ভার: রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলিকে বিষয়বস্তুর নিরিখে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-

গীতিনাটক : ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ (১৮৮১) তাঁর প্রথম গীতিনাটক এবং ১৯৩৯-এ শেষ নাটক লেখেন ‘শ্যামা’। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-র পর ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ‘কালমৃগয়া’, ‘মায়ার খেলা’ লেখেন। এই জাতীয় নাটকে প্রধান বিষয় সুরের অভিনবত্ব।

মনস্তাত্ত্বিক নাটক: এরপর মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার আশ্রয়ে লেখা নাটকগুলি হল-‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’, ‘রাজা ও রাণী’, ‘বিসর্জন’ ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের নাট্যরূপ), ‘মালিনী’, ‘তপতী’ ইত্যাদি।

কাব্যপ্রধান নাটক: এরপর তিনি কয়েকটি কাব্যপ্রধান নাটক লেখেন। যথা- ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘বিদায়-অভিশাপ’, ‘সতী’, ‘গান্ধারীর আবেদন’, ‘নরকবাস’, ‘কর্ণ-কুস্তী-সংবাদ’ ইত্যাদি। এই শ্রেণির নাটকে কাব্যগুণের প্রাধান্য থাকায় এদের কয়েকটি রচনাকে নাট্যকাব্য বলা যায়।

রূপক-সাংকেতিক নাটক: রবীন্দ্র নাট্যচিন্তায় এক বিশেষ নাট্য প্রকরণের জন্ম হয় পাশ্চাত্য নাট্যরীতির প্রভাবে। এই নাটকগুলিকে বলা হয় রূপক- সাংকেতিক নাটক। এগুলি হল- ‘রাজা’, ‘অচলায়তন’, ‘ডাকঘর’, ‘গুরু'[‘অচলায়তন’-এর অভিনয়যোগ্য সংক্ষিপ্ত রূপ (১৯১৮)], ‘অরূপরতন’, ‘ঋণশোধ’, মুক্তধারা’, ‘রক্তকরবী’ ও ‘কালের যাত্রা’।

নৃত্যনাট্য: এ ছাড়া কয়েকটি নৃত্যনাট্য লেখেন, সেগুলি হল- ‘নটীর পূজা’, ‘চণ্ডালিকা’, ‘তাসের দেশ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘শ্যামা’ ইত্যাদি।

কৌতুক নাটিকা: এ ছাড়া কয়েকটি কৌতুক নাটিকা বা প্রহসনও লেখেন। যথা- ‘গোড়ায় গলদ’, ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’, ‘চিরকুমার সভা’ ইত্যাদি।

কৃতিত্ব: চরিত্রনির্মাণ, নাট্যদ্বন্দ্ব উপস্থাপনা, সংলাপের বৈচিত্র্য ও কাহিনিবর্ণনার কুশলতায় রবীন্দ্রনাথের নাটক সমৃদ্ধ। ‘বিসর্জন’ নাটকে অধ সংস্কার ও ধর্মচেতনার জড়ত্ব, হিংসা ও স্বার্থসিদ্ধিকে তুলে ধরা হয়েছে। ‘অচলায়তন’-এ শাস্ত্রাচার ও পুথিবদ্ধ জড়ত্বকে ভাঙার প্রচেষ্টা রয়েছে। ‘ডাকঘর’-এ বন্ধনমুক্তির আহ্বান, ‘রক্তকরবী’তে পাশ্চাত্যের যন্ত্রসভ্যতার অহংকার, ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার আস্ফালন ও যান্ত্রিকতার যন্ত্রণা তুলে ধরে মানবতাবাদের জয় ঘোষিত হয়েছে। তাঁর নাট্যচেতনা উত্তরকালের বাংলা নাটককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। এজন্য বর্তমান কালেও তাঁর নাট্যাদর্শ অবিস্মরণীয় স্থান অধিকার করে আছে।

আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment