জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যকৃতিত্ব আলোচনা করো
ভূমিকা: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন- “হিন্দুমেলার পর হইতে কেবলই আমার মনে হইত-কি উপায়ে দেশের প্রতি লোকের অনুরাগ ও স্বদেশপ্রীতি উদ্বোধিত হইতে পারে।”- এরপরই তিনি ঐতিহাসিক কাহিনি নিয়ে নাটক লিখতে প্রবৃত্ত হলেন।
নাট্যসম্ভার: বিষয়বস্তু অনুযায়ী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকসমূহকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
ঐতিহাসিক নাটক: জ্যোতিরিন্দ্রনাথের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক নাটক হল- ‘পুরুবিক্রম’ (১৮৭৪), ‘সরোজিনী’ (১৮৭৫), ‘অশ্রুমতী’ (১৮৭৯), ‘স্বপ্নময়ী’ (১৮৮২) প্রভৃতি।
প্রহসন : জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রহসন হল- ‘কিঞ্চিৎ জলযোগ’ (১৮৭২), ‘এমন কর্ম আর করব না’ (১৮৭৭)-এই প্রহসন পরে ‘অলীকবাবু’ নামে প্রকাশিত হয়। ‘হিতে বিপরীত’ (১৮৯৬), ‘হঠাৎ নবাব’ (১৮৮৪), ‘দায়ে প’ড়ে দারগ্রহ’ (১৮৯০) ইত্যাদি। শেষ দুটি প্রহসন ফরাসি নাট্যকার মলিয়ের-এর নাটকের অনুবাদ।
অনুবাদ ও সম্পাদনা: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বিভিন্ন ভাষার বই, বিশেষ করে নাটক বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি শেকসপিয়রের ‘জুলিয়াস সিজার’ এবং ১৮৯৯ থেকে ১৯০৪ সালের মধ্যে মোট সতেরোটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃত নাটক বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। তাঁর অনুবাদসমূহ হল- কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্র’, ‘বিক্রমোর্ব্বশী’, ভবভূতির ‘মালতীমাধব’ ও ‘উত্তরচরিত’, শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিকম্’ প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য: জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বাংলা নাটক অনেকাংশে সংস্কৃত প্রভাবমুক্ত ছিল। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রসমূহ অনেক বেশি বাস্তবনিষ্ঠ আচরণে অভ্যস্ত। তাঁর নাটকে গৌরবোজ্জ্বল অতীতের বীবত্বের কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁর নাটকগুলি দীর্ঘ এবং অভিনয়ের অনুপযোগী বলে অনেক সমালোচক অভিযোগ করেন। সমালোচকদের মতে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথই প্রথম প্রহসনকার যিনি হাস্যরসকে রুচির বশীভূত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে যাঁরা অনুবাদক হিসেবে যশস্বী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যতম প্রধান স্থানের অধিকারী।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা