অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির নাট্যজীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো
অভিনয়জীবনের সূচনা: অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি (১৮৫০-১৯০৮) ছিলেন একাধারে নাট্য সংগঠক, মঞ্জুাধ্যক্ষ, অভিনেতা, এবং নাট্য শিক্ষক। নাট্যকার হিসেবে তিনি দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। যথা- ‘ভগবান ভূত’ প্রহসন এবং ‘দুর্গাপূজার পঞ্চরং’। তিনি এবং তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগেই ১৮৭২ সালে ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়।
অভিনয়জীবন: তিনি ন্যাশনাল থিয়েটার, হিন্দু ন্যাশনাল থিয়েটার, গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার, এমারেল্ড থিয়েটার, মিনার্ভা থিয়েটার প্রভৃতি মঞ্চে কখনও নিজের মালিকানায় কখনও অন্যের মালিকানায় অভিনয় এবং পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।
অমৃতলাল বসুর মতে, অর্ধেন্দুশেখর ছিলেন ‘বিধাতার হাতে গড়া অ্যাক্টর’। একই নাটকে একই রাত্রে একাধিক চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। মঞ্চে অর্ধেন্দু ছোটো ছোটো চরিত্র বেছে নিয়ে তাকেই অসাধারণ করে তুলতেন। শিশির কুমার ভাদুড়ীর মতে, চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অর্ধেন্দুশেখরের জুড়ি মেলা ভার। ১৯০৮ সালে কোহিনুর থিয়েটারে ‘প্রফুল্ল’ ও ‘নবীন তপস্বিনী’ নাটকে যথাক্রমে যোগেশ ও জলধরের ভূমিকায় অভিনয়ই তাঁর শেষ অভিনয়।
বহুভাষী: অর্ধেন্দুশেখর হিন্দি, ইংরেজি এবং বাংলার বিভিন্ন উপভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। সাহেবের ভূমিকায় তাঁর প্যান্টোমাইম বা কৌতুকপূর্ণ মূকাভিনয় ‘মুস্তাফি সাহেবকা পাক্কা তামাশা’ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়।
রবীন্দ্রনাটকের মঞ্চায়ন: সাধারণ রঙ্গালয়ে রবীন্দ্রনাথের নাটক ও উপন্যাসের নাট্যরূপকে জনপ্রিয় করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। ‘রাজা বসন্ত রায়’ (‘বৌ-ঠাকুরাণীর হাট’ উপন্যাসের নাট্যরূপ), ‘রাজা ও রাণী’ নাটকে তিনি বারবার অভিনয় করেছেন।
উপসংহার: অর্ধেন্দুশেখরের সহ-নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশচন্দ্র ঘোষ বলেছেন অর্ধেন্দুশেখর ‘অতুলনীয়র মধ্যে অতুলনীয়’। কৌতুকাভিনয়েও তিনিই ছিলেন সেরা। নাট্যালয়ের অবিসংবাদী এই ব্যক্তিত্বের আলোচনা ছাড়া রঙ্গমঞ্চের ইতিহাস অসম্পূর্ণ।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা