উনিশ শতকের বাংলায় নকশা জাতীয় রচনা ও প্রহসন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো
নকশা জাতীয় রচনা: উনিশ শতকে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাসধর্মী নকশার অবতারণা করেন। তাঁর ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবুবিলাস’, ‘নববিবিবিলাস’ প্রভৃতি নকশা জাতীয় রচনায় উপন্যাসের অঙ্কুরোদ্গমের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্যারীচাঁদ মিত্র বা টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উনিশ শতকে লিখিত একটি নকশা জাতীয় রচনা। তিনিই সর্বপ্রথম আখ্যানকথাকে কিছুটা হলেও নকশার খর্বতা থেকে রক্ষা করে উপন্যাসের পথ প্রস্তুত করেন। তা ছাড়া উনিশ শতকের মধ্যভাগে কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’য় কলকাতার নাগরিক সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা, নানা কদাচার জীবন্তভাবে বর্ণিত।
প্রহসন জাতীয় রচনা: উনিশ শতকের প্রহসন জাতীয় রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মাইকেল মধূসুদন দত্ত লিখিত ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’। প্রহসন দুটির প্রথমটিতে সেকালের উচ্চশিক্ষিত অথচ উচ্ছৃঙ্খল নব্যযুবকদের প্রতি এবং দ্বিতীয়টিতে কপট, ধার্মিক, ধনবান বৃদ্ধের লালসার প্রতি নাট্যকারের ব্যঙ্গ বর্ষিত হয়েছে। এ ছাড়াও উনিশ শতকে দীনবন্ধু মিত্র ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’, ‘সধবার একাদশী’, ‘জামাইবারিক’ প্রভৃতি প্রহসন রচনা করেন। ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’-তে নাট্যকার এক বৃদ্ধ বিপত্নীকের পুনরায় বিবাহের উদ্যোগ এবং সেই কারণে হেনস্থা হওয়ার কৌতুকচিত্র লেখেন।
‘সধবার একাদশী’-তে পাশ্চাত্য ভাষায় শিক্ষিত উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের প্রতি ব্যঙ্গ এবং ‘জামাই বারিক’-এ ধনবান শ্বশুরগৃহে অলস জামাইয়ের অবস্থানের কৌতুককর কাহিনি পরিবেশিত হয়েছে। এ ছাড়াও গিরিশচন্দ্র ঘোষও কতকগুলি প্রহসন রচনা করেছিলেন। যথা-‘ভোটমঙ্গল’, ‘হীরার ফুল’, ‘বেল্লিক বাজার’, ‘বড়দিনের বখশিস’, ‘য্যায়সা কি ত্যায়সা’ প্রভৃতি। উনিশ শতকে নাট্যকার অমৃতলাল বসুও ‘চোরের উপর বাটপাড়ি’, ‘চাটুয্যে ও বাঁড়ুয্যে’, ‘তাজ্জব ব্যাপার’, ‘কূপণের ধন’, ‘ব্যাপিকা বিদায়’ ইত্যাদি নামে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রহসন রচনা করেন। বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে এ সমস্ত প্রহসন অমূল্য সম্পদ।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা