বাংলা প্রহসনে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃতিত্ব আলোচনা করো
প্রহসনসমূহ: সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত মধুসূদনের নাট্যপ্রতিভার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন-“নাট্য সাহিত্যেও তাঁহার দান উপেক্ষণীয় নয়, তিনিই আধুনিক বাংলা নাটকের জনক….”। বাংলা নাটকের বিচিত্র প্রসারে তাঁর প্রহসনগুলি সমসাময়িকতার জীবন্ত দলিল। তাঁর প্রহসনগুলি হল- ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৮৬০), ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৬০)।
‘একেই কি বলে সভ্যতা’ প্রহসনে তৎকালীন নব্য শিক্ষিত যুবসমাজের লাম্পট্য, ব্যভিচার চিত্রিত করেছেন মধুসূদন। ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনে তিনি ধর্মের ধ্বজাধারী, প্রাচীন রক্ষণশীল জমিদারতন্ত্র ও পুঁজিপতিদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন।
প্রহসনগুলির গুরুত্ব:
মধুসূদনের পূর্বে রামনারায়ণ প্রমুখ নাট্যকার প্রহসন রচনার চেষ্টা করলেও মধুসূদনের প্রহসনগুলি প্রথম সার্থক প্রহসন।
- তাঁর প্রহসনগুলি তৎকালীন সমাজের বিশ্বস্ত ছবি।
- পাশ্চাত্য আঙ্গিকের মুক্তি ঘটিয়েছেন।
- চরিত্রচিত্রণে ও বাস্তবতার প্রয়োগে প্রহসনগুলি জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
প্রহসন রচনায় দক্ষতা: প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয়প্রকার নাট্যরীতির মেলবন্ধন মধুসূদনের প্রহসন দুটিতে লক্ষ করা যায়। তাঁর প্রহসনগুলির সংলাপ ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘ হয়ে উঠলেও প্রহসনের সংলাপ রচনায় মধুসূদন সংহত বাক্সীতি অনুসরণ করেছেন। প্রহসনের চরিত্রনির্মাণের ক্ষেত্রেও বাস্তবতাকে কঠোরভাবে স্বীকার করা হয়েছে। বাংলা প্রহসনের পথিকৃৎ মধুসূদনের প্রহসনসমূহ বাংলা নাট্যসাহিত্যের অমূল্য সম্পদরূপে বিবেচিত।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা