‘নীলদর্পণ’ নাটকটির সাহিত্যমূল্য ও ইতিহাসমূল্য বিচার করো
সাহিত্যমূল্য: নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭০) বাংলা নাটকে প্রথম প্রথম উচ্চস্তরের অভিজাত মানুষের বদলে দীনদুঃখী গ্রামের মানুষকে মঞ্চের পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এলেন। পরাধীন জাতির মর্মবেদনাকে দিলেন প্রতিবাদের ভাষা। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রায় সমস্ত নাটকই মঞ্চসফল হয়। ‘নীলদর্পণ’ নাটকখানি সম্পর্কে এ কথা সর্বাংশে সত্য।
রচনার উদ্দেশ্য: তাঁর প্রথম নাট্যরচনা ‘নীলদর্পণ’ ‘নীলদর্পণং নাম নাটকম্’ নামে ১৮৬০ সালে প্রকাশিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নীলকরের অত্যাচার যেভাবে বঙ্গের কৃষককুলের সর্বনাশসাধনে উদ্যত হয়েছিল, তা প্রশমনের উদ্দেশ্য নিয়ে দীনবন্ধু মিত্র কলম ধরেন। নিজে সরকারি কর্মচারী হওয়ার কারণে নীলকরের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণার বদলে ‘কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতম্’ ছদ্মনামে এই নাটক রচনা করে তিনি ইংল্যান্ডবাসীর কাছে অনুনয় করেছেন মাত্র।
নাট্যগুণ: নাটক হিসেবে ‘নীলদর্পণ‘ উচ্চমানের সৃষ্টি নয়। নাটকে মৃত্যুর ঘনঘটা থাকলেও তা যথার্থ ট্যাজেডি হয়ে উঠতে পারেনি। আসলে জীবনের মৌলিক সমস্যা এবং নাট্যদ্বন্দ্ব এখানে প্রচ্ছন্ন। অসহায় নিপীড়িত মানুষগুলির উপরে পীড়নের ছবি এখানে স্থূল রেখায় অঙ্কিত। অবশ্য নাট্যকারের এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যও ছিল অসহায় প্রজার অত্যাচারের ছবি সভ্য শিক্ষিত ইংল্যান্ডবাসীর কাছে তুলে ধরা। তবে চরিত্রসৃষ্টিতে এবং তাদের মুখে যথাযথ সংলাপ ব্যবহারে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় মেলে।
ঐতিহাসিক মূল্য: নাট্যসাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের যতখানি মূল্য, তার চেয়ে সেদিনের নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষাস্বরূপ ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে এটি অধিকতর মূল্যবান। রঙ্গমঞ্চে দীর্ঘদিন অভিনীত হয়ে সেদিনের দেশবাসীর মনে স্বাদেশিকতার ভাবনাস্যারেও এই নাটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবলম্বন করেছিল।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা