রবীন্দ্র গীতিনাট্য ও কাব্যনাট্য সম্পর্কে আলোচনা করো
গীতিনাট্য: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য ও গীতিনাট্যসমূহ হয়ে উঠেছিল বিচিত্র রসসমৃদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্যগুলির মধ্যে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘কালমৃগয়া’ ও ‘মায়ার খেলা’- এই তিনটি প্রধান। বিহারীলালের ‘সারদামঙ্গল’-এর প্রভাবে রবীন্দ্রনাথ অল্প বয়সে রচনা করেছিলেন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’। আলোচ্য নাটকের মধ্যে দেশি-বিদেশি নানা বিচিত্র রাগরাগিণীর লীলা দ্বারা এক অপূর্ব সংগীতের মায়াপুরী সৃষ্টি হয়েছে। দশরথের শব্দভেদী বাণে অধমুনির পুত্রহত্যার রামায়ণ বর্ণিত কাহিনি ‘কালমৃগয়া’র বিষয়। ‘মায়ার খেলা’য় ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র মতো সুরের মধ্য দিয়ে নাটকীয় ঘটনা বিবৃত হয়েছে। ‘মায়ার খেলা’, ‘মানসী’-র যুগে লেখা।
কাব্যনাট্য: রবীন্দ্রনাথের কাব্যনাটকগুলির মধ্যে উল্লেখ্য- ‘রুদ্রচণ্ড’, ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’, ‘রাজা ও রাণী’, ‘বিসর্জন’, ‘মালিনী’। রবীন্দ্রনাথ ‘রাজা ও রাণী’ নাটকে ভোগকে ত্যাগের দ্বারা শুদ্ধ ও সংযত করার কথা বলেছেন। হিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত যুক্তিবিহীন ধর্মাচার কখনও প্রকৃত ধর্মের অঙ্গ হতে পারে না-‘বিসর্জন’ নাটকে সেই কথাই রবীন্দ্রনাথ ব্যক্ত করেছেন। এই ক্ষেত্রে বুদ্ধদেবের অহিংসাতত্ত্ব তাঁর জীবনদর্শনকে বিশেষ প্রভাবিত করেছিল। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র মধ্যে হিংসার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ধ্বনিত তারই পূর্ণতর রূপ ‘বিসর্জন’ নাটকে পরিস্ফুট।
‘চিত্রাঙ্গদা’ কাব্যনাট্যটি মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে রচিত। ‘চিত্রাঙ্গদা’য় প্রেমের বিবর্তনধারা লক্ষ করলে দেখা যায়, রূপের ঊর্ধ্বে নাট্যকার প্রেমকে স্থান দিয়েছেন। ‘বিসর্জন’ নাটক রচনার ছয় বছরের ব্যবধানে রচিত ‘মালিনী’ কাব্যনাট্যটিতে ভাবাদর্শগত সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। বুদ্ধদেবের আদর্শে নিখিলের প্রতি প্রেমকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘মালিনী’ নাটকে প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা