বাংলা নাট্যসাহিত্যের সূচনা পর্বটি আলোচনা করো
প্রাচীন কালের নাট্যচর্চা: বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির আদি পর্ব থেকেই নাটকের প্রচলন ছিল। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘চর্যাপদ’-এ-
“নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই।।”
আবার মধ্যযুগের আদি পর্বে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর গঠনরীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটিও ‘নাটগীতি’। প্রথাগত নাটকের উৎস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়-
- পালাগান, কীর্তন কিংবা পাঁচালির অন্তর্গত বিবিধ চরিত্র ও সংলাপের মধ্যে নাটগীতির প্রবহমানতা ছিল। পুতুলনাচ, ছৌ, কালীনাচ, আলকাপ বা গম্ভীরার মতো লোকশিল্পে নাট্যসম্ভাবনা প্রচুর পরিমাণে ছিল।
- বিদ্যাসুন্দরের কাহিনি এবং কবিগান, আখড়াই, হাফ-আখড়াই-এর মধ্যেও অভিনয়রীতি প্রচলিত ছিল।
আধুনিক যুগের সূচনা: তবে বাংলায় আধুনিক নাটকের চর্চা শুরু হয় মূলত ইউরোপীয় মঞ্চনাটক বা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের প্রভাবে। ১৭৫৩ সালের আগে কলকাতার লালবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্লে হাউস’, ইংরেজদের প্রথম রঙ্গালয়। কলকাতার বাইরে যেখানে যেখানে ইংরেজরা বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছিল সেখানেই একটি করে রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেমন-চন্দননগর থিয়েটার, চৌরঙ্গি থিয়েটার, দমদম থিয়েটার, সাঁসুসি থিয়েটার ইত্যাদি।
এর কিছু বছর পরে ১৭৯৫ সালে রুশদেশবাসী গেরাসিম স্তেফানোভিচ লেবেদেফ কলকাতায় প্রথম ‘দ্য ডিসগাইজ’ নামক একটি ইংরেজি নাটকের বঙ্গানুবাদ করিয়ে বাঙালি নটনটীদের দিয়ে অভিনয় করান। গোলোকনাথ দাসের অনুবাদে এর নাম হয়েছিল ‘কাল্পনিক সংবদল’। প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত হিন্দু থিয়েটারে ১৮৩১ সালে প্রসেনিয়াম রীতিতে বাঙালির চেষ্টায় প্রথম নাট্যাভিনয় হয়।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা