বিড়াল প্রবন্ধের বিষয়বস্তু
কমলাকান্তের নিত্যদিনের জীবনযাত্রার একটি দৃশ্য দিয়ে। ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর ত্রয়োদশ প্রবন্ধ ‘বিড়াল’ শুরু হয়েছে।
আফিমের নেশায় আচ্ছন্ন কমলাকান্ত তার শোবার ঘরে যখন নেপোলিয়ান হয়ে ওয়াটার্ল জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল, তখন হঠাৎ একটি শব্দ হয় ‘মেও’। প্রসন্ন গোয়ালিনি কর্তৃক কমলাকান্তকে দেওয়া দুধটুকু উদরসাৎ করে বিড়াল পরিতৃপ্ত হয়ে এই শব্দ করেছে। কমলাকান্ত লাঠি দিয়ে বিড়ালকে তাড়া করতে চেয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ দিব্যকর্ণপ্রাপ্ত হয়ে কমলাকান্ত শুনল, বিড়াল তাঁকে মারপিট বন্ধ করে তার কথা স্থির হয়ে বিচার করতে অনুরোধ করছে। তার বক্তব্য-এ সংসারে যত কিছু ভালো, তার সবটাই কেবল মানুষ পাবে কেন? বিড়ালের কি কোনো ক্ষুধা-তৃয়া নেই? যদি থাকে, তাহলে বিড়াল ও মানুষে প্রভেদ কোথায়?
এরপরই বিড়াল কমলাকান্তের জ্ঞানের বিকাশ ঘটানোর জন্য কিছু তত্ত্বকথা শুনিয়েছে। সে বলেছে পরোপকারই ধর্ম। কমলাকান্তের দুধ পান করে বিড়াল উপকৃত হয়েছে এবং কমলাকান্ত কর্তৃক সেই উপকার সাধিত হয়েছে। সুতরাং কমলাকান্তের পুণ্যসঞ্চয়ে বিড়ালের অবদান আছে। সেজন্য বিড়ালের প্রশংসাই প্রাপ্য, লাঠিপেটা নয়।
সে আরও বলেছে, সে স্বেচ্ছায় দুধপান করে চোর হয়নি। খেতে পেলে কি কেউ চোর হয়? নিজের ভান্ডারে সে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চয় করে রেখেছে, তা থেকে এককণা কাউকে দিচ্ছে না, চোর তো সেই সৃষ্টি করেছে। কৃপণ ধনী চোর অপেক্ষাও অনেক বেশি দোষী।
ধনী ব্যক্তি তাদের উদ্বৃত্ত ফেলে দেয়, অপচয় করে অথচ বিড়ালকে দেয় না। আসলে তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ। খেতে – বললে যে বিরক্ত হয়, তার জন্য খাওয়ার আয়োজন করা হয়, আর • যে ক্ষুধার জ্বালায় বিনা আহ্বানে ধনীর অন্ন খেয়ে ফেলে, তাকে ‘চোর’ বলে দণ্ড দেওয়া হয়। বিড়ালের পেট শুকিয়ে জিভ ঝুলে পড়েছে। সে জানিয়েছে, এই পৃথিবীতে মাছ-মাংসে তাদেরও কিছু অধিকার আছে। খেতে না দিলে সে চুরি করার হুমকিও দিয়েছে। তা
কমলাকান্ত বিড়ালকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল। চুরি করলে সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়বে, সমাজে ধনসঞ্চয় হবে না। কিন্তু বিড়াল এতে পিছু হটতে রাজি নয়। সে বলে, সমাজে ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধনবৃদ্ধি। ধনীর ধনবৃদ্ধি না হলে দরিদ্রের ক্ষতি কী? কমলাকান্ত দেখল, বিড়ালটি বেজায় তার্কিক। একে ফাঁকি দিয়ে কিছু বোঝানো যাবে না। তার এইসমস্ত কথা অতি নীতিবিরুদ্ধ-এই বলে উপদেশ দিয়ে তার সঙ্গে আপস করার চেষ্টা করল। বিড়ালের ক্ষুধানিবারণে অপারগ কমলাকান্ত, বিড়ালটির ক্ষুধা ভুলিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে তাকে হাঁড়ির বদলে আফিম খাওয়ার উপদেশও দিল। বিড়াল কিন্তু আফিম চায় না, সে ক্ষুধার সময় হাঁড়ি খাওয়ার কথাই বিবেচনা করে দেখার কথা বলে বিদায় নেয়।
আর, একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনতে পেরেছে ভেবে কমলাকান্ত আত্মপ্রসাদ লাভ করে।
আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা
কমলাকান্তকে আফিমের নেশা করতে হয়েছিল কেনো?