তোমার ছাত্রজীবনের স্মৃতিকথা রচনা 600 শব্দে

তোমার ছাত্রজীবনের স্মৃতিকথা রচনা

তোমার ছাত্রজীবনের স্মৃতিকথা রচনা

ভূমিকা

আজ মনে পড়ছে ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা। যেদিন থেকে শুরুহল আমার স্কুলজীবন, ছোটো বড়ো কত ঘটনা মনের মণিকোঠায় ভিড় করে যখন ভাবি সেই দিনগুলোর কথা। হাসি-ঠাট্টা, সুখ-দুঃখের বিচিত্র ঘটনায় ভরা সেই দিনগুলো অবসর সময়ে স্মৃতি হয়ে ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। বর্ষামুখর দিনে জল টইটম্বুর দিঘির পাড়ে বসে দেখা একটার পর একটা বুদবুদের মতো স্মৃতিতে জেগে উঠছে সেইসব অতীত, আবার হারিয়ে যাচ্ছে। আমার জন্ম গ্রামে, আমার জীবনের চলার শুরু বাংলার পল্লীর এক স্নিগ্ধ-মধুর পরিবেশে। সাঁতার কেটেছি পুকুর-খালের জলে, চৈত্র-বৈশাখে ছুটে গেছি আম কুড়াতে। আমার স্কুল জীবনের সূচনা হয় যখন ভর্তি হই প্রথম শ্রেণিতে, এখন অন্য স্কুলের দশম শ্রেণীতে পড়ি।

প্রাথমিক স্কুলের স্মৃতি

আমার হাতে খড়ি হয়ে ছিল বাড়িতে মার কাছে। শুভ একদিনে আমার হাতে খড়ি দিয়ে মা স্লেটে প্রথম লেখান বাংলা অক্ষর। সে দিনটির কথা আজও ভুলে যাইনি যেদিন প্রথম স্কুলে পা রাখলাম। স্কুলে এসেছিলাম বাবার সাথে। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। অপরিচিত পরিবেশ। শুনেছিলাম মাস্টার মশাইরা খুব গম্ভীর ও রাগী। কিন্তু ক্লাসে গিয়ে মনে হল অন্য পরিবেশ। মাস্টারমশাই অত্যন্ত শান্ত গলায় ক্লাসের বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক।অঙ্ক ভুল করলে তিনি বকুনি দিতেন না, বার বার বুঝিয়ে দিতেন যতক্ষণ না বুঝতে পারছি। না বুঝে কেউ বুঝার ভান করলে তিনি খুব রেগে যেতেন।

ক্রমে ক্রমে সহপাঠীদের সাথে এমন হৃদ্যতা গড়ে উঠল যে মনে হত তারা খুব আপনজন। তবে ঘন্টার পর ঘন্টা স্কুলের চার- দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকতে চাইত না মন। জানলার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম দূরের আকাশ যেখানে দিগন্ত রেখায় নেমে এসেছে, গাছের সাথে গল্প করছে চঞ্চল মেঘগুলো। বর্ষার দিনে রামধনুর সাতটা রং-এর মেলা, আকাশে পাখির স্বাধীন বিচরণ বা রঙিন ঘুড়ির আকাশ দখল দেখলে আমার মন সব বাধাকে উপেক্ষা করে কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে উড়তে থাকে, মনে হত সপ্তাহের সব দিন রবিবার হলে মজা হত, সব দিনে স্কুলের দরজা বন্ধ থাকত। আমরা ছেলে এবং মেয়েরা একসাথে কো-এডুকেশন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। এই স্কুলের শেষ পরীক্ষা ছিল চতুর্থ শ্রেণীতে, জীবনের প্রথম অন্যস্কুলে পরীক্ষা সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।

শিক্ষক মহাশয়ের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল অন্তরের, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ঠিক যেন পিতা-সন্তানের। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় যাতে সকল ছাত্র-ছাত্রী ভালো রেজাল্ট করে সেজন্য আমাদের পরীক্ষার আগে স্কুল হোস্টোলে থাকতে হত। শিক্ষক মহাশয়েরা লক্ষ্য রাখতেন যাতে পড়াশোনায় ফাঁকি না দিই। পরীক্ষায় বসার আগে একদিন বিদায় সভা বা ফেয়ার ওয়েল হয়, খুবই দুঃখের দিন।

যাদের সাথে দীর্ঘ চার বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে মধুর সম্পর্ক তাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে-তা কি মন মানতে চায়! সভাগৃহে হাজির শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী সবাই। কারও মুখে হাসি নাই, বিষন্নতার ছাপ সবার মুখে, শিক্ষক মহাশয়ের চোখে জল, বিভিন্ন ক্লাশের ছাত্র ছাত্রী বন্ধুদেরও। সে কি বিষাদের মূর্ছনা! স্কুলের প্রতিটি ইট-পাথর কড়ি-বর্গার সাথে অন্তরের প্রতিটি অণু-পরমাণুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অজান্তে-যেন কত দিনের, কত যুগের সখ্যতা তাদের সাথে। বার বার যেতে নাহি দেব-র আবেদন তাদের বোবা দৃষ্টিতে। কিন্তু আমরা যে উদ্যাম, উচ্ছল গতিতে, দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে হবে জীবনের পথে, থমকে দাঁড়ালে চলবে না।

মাধ্যমিক স্কুলের স্মৃতি

প্রাথমিক স্কুলের পাঠ শেষ করে ভর্তি হলাম মাধ্যমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে। বিশাল স্কুল-অট্টালিকা, কয়েক শত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে সেখানে, অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। আবার নতুনকে সম্ভাষণ জানানোর পালা। সবই অপরিচিত, স্কুল অট্টালিকা, ছাত্র-ছাত্রী সবাই। কো এডুকেশন স্কুল, বেশীদিন সময় লাগল না নতুনদের সাথে পরিচিত হতে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। যারা অপরিচিত ছিল তারাই হল আপন-ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এমন কি পিওনও। পিওনকে ডাকি বনমালী কাকা বলে। তিনি আমাদের কাছে বন্ধুর মতো। কবে স্কুল ছুটি থাকবে বা কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা কবে ছুটিতে থাকবেন তা আগাম জানিয়ে দিত।

স্কুলে হয় নবীনবরণ উৎসব। আমরা যারা পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হলাম তারা নবীন। যারা উপরের ক্লাসে পড়ে তারা প্রবীণ। সে এক আনন্দময় মুহূর্ত। আমাদের স্কুলে হয় নবান্ন উৎসব। স্কুলের জমি আছে, সেখানে ছেলেরা ধানের চারা রোপণ করে, মেয়েরা উপস্থিত থেকে উৎসাহ দেয়। একদিন নিজেদের হাতে চাষ করা জমির ধান কাটতে আমরা হাজির হই। সোনার ধানে ভরে আছে খেত। শীতের দুপুরের নরম রোদে ধান গাছের গা বেয়ে যেন সোনা ঝরে পড়ছে। ছাত্র শিক্ষক সকলে মিলে যে নবান্ন উৎসব করি তা পিকনিক বা বনভোজন বললে ভুল বলা হবে না।

এছাড়া সরস্বতী পুজোর আনন্দ তো অন্তরের সাথে গভীর ভাবে সম্পকায়িত। রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রস্তুতি শুরু হয় অনেক আগে থেকে। ছেলেরা ও মেয়েরা পৃথকভাবে নাটক অভিনয় করি। আবৃত্তি, বক্তৃতা, নাটক অভিনয়ের বাধ্যমে আমরা খুশির সাগরে-কয়েকদিন ডুবে থাকি। স্কুলের পরীক্ষায় আমি প্রায়ই প্রথম স্থান অধিকার করি। স্কুলের নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক ক্লাসের পরে মেয়েরা চলে যায় নির্দিষ্ট কমন রুমে। সকলের সাথে সুমধুর সম্পর্ক থাকলেও প্রত্যেক পরীক্ষায় কে প্রথম হবে তাই নিয়ে আমার সাথে চিরকাল চোরা প্রতিযোগিতা অন্যদের সাথে।

উপসংহার

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে আবার গড়ে উঠেছে গুরু- শিষ্যের সম্পর্ক। তাঁদের প্রতিটি উপদেশ আমার কাছে যেন বেদবাক্য। অবসর সময়ের অবকাশে মাঝে মাঝে মনে পড়ে ফেলে আসা জীবনের প্রথম বিদ্যারম্ভের সেই প্রাথমিক স্কুলের দিনগুলির কথা। আবার একদিন এই স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হবে তা ভাবলে মন বিষাদে ভরে যায়।

আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment