গ্রীষ্মের একটি নির্জন দুপুর রচনা 500+ শব্দে

গ্রীষ্মের একটি নির্জন দুপুর রচনা

গ্রীষ্মের একটি নির্জন দুপুর রচনা
গ্রীষ্মের একটি নির্জন দুপুর রচনা

গ্রীষ্মের একটি নির্জন দুপুর রচনা

ভূমিকা

বাংলার রৌদ্রদগ্ধ স্তব্ধ মধ্যহ্ন। মাথার ওপর তপ্ত বিবর্ণ চন্দ্রাতপের মতো রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ। বিচ্ছুরিত মধ্যাহ্নের সূর্যের প্রখর মরু-জ্বালাময় দীপ্তি। তার ফলে, সমগ্র জীব-জগতে নেমে আসে আলস্য-মন্থর এক নিশ্চল অবসাদ। দিগন্ত-বিস্তৃত প্রান্তরে মধ্যদিনের অলস ক্লান্ত নিঃসাড় রৌদ্র যেন তার অবসন্ন শরীরখানি এলিয়ে দিয়ে বিশ্রামমগ্ন। ‘যেন রৌদ্রময়ী রাতি ঝাঁ ঝাঁ করে চারিদিকে, নিস্তব্ধ নিঃঝুম।’ প্রকৃতির দ্বিপ্রাহরিক নিস্তব্ধ নির্জনতার বিস্তীর্ণ বাসরে এখন কেবল বিশ্রামের পূর্ণ আয়োজন।

নির্জনপল্লী

ধূ ধূ জনহীন পল্লী-পথও যেন বিশ্রামের সন্ধানে অন্তর্হিত হয়েছে দূর ছায়াঘেরা গ্রামের অন্তরালে। নিঃঝুম পথ-প্রান্তরে, বৃক্ষগুলি স্বরচিত ছায়ায় তন্দ্রামগ্ন। সেই ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে কোথাও ক্লান্ত গোরু, কুকুর প্রভৃতি, আবার কোথাও ক্লান্ত পথিক। বাতাসও ক্লান্ত, তার শরীরে অবসাদ মধ্যাহ্নের উত্তপ্ত রোদের উত্তাপে। প্রকৃতির চোখ ঢুলু ঢুলু আবছায়া তন্দ্রায়, কখনও আবার ক্ষুব্ধ বাতাস উত্তপ্ত হয়ে নাড়িয়ে দেয় গাছপালাকে, ওড়াতে থাকে পথ-প্রান্তরের ধূলো। প্রকৃতির বিষাদ- মর্মর দীর্ঘশ্বাস ফুটিফাটা মাঠ-প্রান্তরে।

অবসন্ন গ্রামের গৃহস্থের চিত্র

অলস দুপুর, ক্লান্ত গ্রাম, গাছপালা, খালবিল, পুকুর, নদী-জলাশয়, গ্রামের ঘর-বাড়িও, নাই প্রাণচঞ্চ লতা। যেন কোন যাদুকরের যাদুর ছোঁয়ায় ঘুমন্ত গ্রাম। শ্রান্ত কৃষক খেতের কাজ সমাপ্ত করে ফিরে গেছে ঘরে। মাঝি গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে খেয়া-নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখে। ঘরে ঘরে এখন বিশ্রামের পূর্ণ আয়োজন। কুটির প্রাঙ্গনে বা গাছের ছায়ায় শুয়ে হাঁপাচ্ছে কুকুর। মাঠের বুক বিদীর্ণ করে ধরিত্রীর দীর্ঘশ্বাস সর্পিল রেখায় ঊধর্বমুখী।

নিস্তব্ধ মধ্যাহ্ন

তাপদগ্ধ গাছের পাতা ধূসর-বিবর্ণ, মধ্যাহ্ন-সূর্য তার শ্যামলিমায় ছড়িয়ে দিচ্ছে তপ্ত-উজ্জ্বল আলোক-তুলির টান। বৃক্ষের শরীর জুড়ে করুণ-হতাশার ছবি। গতি-মন্থর এই অলস দুপুরে যেন বন্ধ হয়ে গেছে সময় ঘড়ির এগিয়ে চলার কাঁটা, দূর-দিগন্তরেখা থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে তৃষ্ণার্ত চাতকের সকরুণ জলের প্রার্থনা বা নিঃসঙ্গ ঘুঘুর বিষাদ-মর্মরিত বুকফাটা কান্নার ধবনি। নদীর চরের কাছ থেকে কখনও কখনও হয়তো শোনা যায় ‘পালের রাখালের মর্মস্পর্শী বাঁশির সুর’। বিবর্ণ-ধূসর আকাশে কালবৈশাখীর সংকেতে কেঁপে ওঠে কচি-নরম আম পত্র- বাহুর দ্বারা বুকে জড়িয়ে ধরে গাছের বুক ভয়ে। কালবৈশাখীর পদধবনিতে শোনা যায় বাংলা নতুন বছরের যাত্রা শুরুর ধবনি।

কবি-স্বপ্ন-ভাবুকের মনে দুপুর

ভাবুক-কবি, স্বপ্নবিলাসীর মন-মুকুরে ভেসে ওঠে ধূম্রাভ দূর-দিগন্তের ছবি পিয়ালী মদির মায়াজাল সৃষ্টি করে। ধূলিভরা গ্রাম্য পথ সর্পিল রেখায় বিস্তারিত, তৃষ্ণার্ত অজগরের মতো কোনো নদীর প্রান্ত-সীমানায়, আকণ্ঠ জল পানের জন্য যেন। কবির স্বপ্ন ভাবুক মনে জাগে এরপরে, বর্ষা-বাদলের ছোঁয়ায় জেগে ওঠা প্রকৃতির সৃষ্টিময়তার ছবি। আজ হয়তো অলস দুপুর বিষণ্ণতার ছায়া ছড়িয়ে নিন্ধ-নিঃঝুম ভঙ্গিতে ঝিমাচ্ছে, তৃষ্ণার্ত বট-অশ্বত্থ জলের জন্য করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্দয় আকাশের দিকে, গৃহবধূ চলেছে কলসি কাঁখে জলের সন্ধানে, কদিন পরে বর্ষার আগমনে কাজল-কালো মেঘের সজল অশ্রু রূপে নেমে আসবে বৃষ্টিধারা, কবির কল্পনায় ধরা দেবে প্রকৃতি রূপময়ী, সৃষ্টি-করুণাময়ী, মনমোহিনী মূর্তিতে।

কৃষক আনন্দে ব্যস্ত হয়ে পড়বে চাষের কাজে, পুকুর, নদী, খাল-বিল কলকল হাসির ধবনি ছড়িয়ে রূপসী তরুণীর মতো জলতরঙ্গে শরীর দুলাতে দুলাতে স্বাগত জানাবে বর্ষারানিকে। পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, গাছ-পালা, মানুষ সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হবে বর্ষা-বন্দনা। বর্ষার আগমনের পথকে সুপ্রশস্থ করতেই তো গ্রীষ্ম বিদায় নেবে। তাইতো শিল্পীর তুলির টানে ধরা পড়েছে টোকা মাথায় বৃষ্টি ভেজা কৃষকের খেতে চাষ করার ছবি।

উপসংহার

মধ্যাহ্নের সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম গগনে হেলে পড়ে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয় গাছের ছায়া, ধরিত্রীর বুকে শয়ন করে নিদ্রানিমগ্নতায় ঢলে পড়ে, সন্ধ্যা ঢেকে দিতে থাকে কালো ছায়া ও নিঃস্তব্ধতা ভগ্ন করে আকাশে বকের শারির বাসায় ফেরা। মধ্যাহ্নের স্বপ্নময়তার আবডালের আড়ালে রুক্ষতার সমাপ্ত জানিয়ে দিবাবসানের শেষ চিহ্ন অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়। গ্রীষ্ম মধ্যাহ্ন যতই রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, নির্দয় মনে হোকনা কেন তার মধ্যে ও রয়েছে এক অনুপম সৌন্দর্যময়তা, যাকে আচ্ছন্ন করে থাকে তন্দ্রা-আলস্য-নিবিড়তার স্বপ্নমদির মাধুর্য।

আরও পড়ুন – পরিবেশ দূষণ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment