নববর্ষের উৎসব রচনা 600+ শব্দে

নববর্ষের উৎসব রচনা – আজকের পর্বে নববর্ষের উৎসব রচনা নিয়ে আলোচনা করা হল।

নববর্ষের উৎসব রচনা

নববর্ষের উৎসব রচনা
নববর্ষের উৎসব রচনা

নববর্ষের উৎসব রচনা

ভূমিকা

আনন্দের প্রতি আকর্ষণ মানুষের সহজাত ধর্ম। মানুষ এই আনন্দকে একা ভোগ করতে পারে, আবার পরিবার বা সমাজের অন্যজনের সাথে ভাগ করে নিতেও পারে। আমরা প্রতিদিন জীবন-ছন্দের প্রতি মুহুর্তে যে আনন্দ অনুভব করি তা ব্যক্তিগত। উৎসব বলতে বুঝায়, যখন নিজের আনন্দ অনেকের সাথে মিলিত হয়ে সার্বজনীন রূপ নেয় তখন আনন্দ ব্যক্তি জীবনের বা সংকীর্ণ পারিবারিক জীবনের সীমা অতিক্রম করে বৃহত্তর সমাজের সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়ে যায়। উৎসব মঙ্গল-জ্যোতির দীপ্তিতে সমুজ্জ্বল, উৎসবের মধ্যে প্রকাশ পায় আনন্দের সার্বজনীন শুভ দিক।

উৎসব হয় বিশেষ উপলক্ষ্যে

উৎসবের আয়োজন করা হয় বিশেষ উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। উৎসব সংগঠিত হতে পারে সামাজিক, ধর্মীয়, পারিবারিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় প্রভৃতি বিষয় উপলক্ষ্যে। দুর্গাপুজো, দোল, মহরম, বড়দিন, রথযাত্রা প্রভৃতি হল ধর্মীয় উৎসব। বাড়ির কারও জন্মদিন পালন, গৃহপ্রবেশ যেমন পারিবারিক উৎসব, তেমনি স্বাধীনতা দিবস পালন, প্রজাতন্ত্রদিবস উদযাপনকে বলা হয় রাষ্ট্রীয় উৎসব।

নববর্ষের প্রথম দিন একটি উপলক্ষ্য

মানুষ সৃষ্টি করেছে বৎসর। অনাদি- অনন্ত অখন্ড মহাকালকে খন্ডিত করে সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা-দিন-মাস-বৎসরে চিহ্নিত করা হয়েছে, আমরা সময়ের গণনা করি এইসব চিহ্ন ব্যবহার করে। তাই নতুন বৎসরের প্রারম্ভে অতীত ও নবাগতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা আনন্দে মেতে উঠি। বিশাল পৃথিবী, অনন্ত বিশ্ব যেন মানবজীবনে নতুন বছরের শুরুতে আশা- আকাঙ্খার রঙিন ফানুসে চেপে নতুন মূর্তিতে আবির্ভূত হয়। পৃথিবীর সমস্ত দেশের মানুষ নববর্ষ উদ্যাপন করে। প্রত্যেক দেশের সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠানের আছে আলাদা রূপরেখা। তাই দেশ-জাতিভেদে নববর্ষের-অনুষ্ঠানের বহিরঙ্গ রূপেও থাকে স্বাতন্ত্রতা।

বৎসরের প্রথম দিনটি প্রতিদিনের মতো একটি দিন। তবু যেন এই দিনটির মধ্যে রয়েছে অপূর্বতা। এই কারণে নববর্ষের প্রথম দিনটি প্রাত্যহিক বৈশিষ্ট্যের ঊর্দ্ধে বিশেষ একটি দিন, অন্য দিনগুলোর থেকে আলাদা। ধাবমান মহাকাল তার অশান্ত গতিকে একটি দিনের জন্য স্তব্ধীভূত করে স্থিতিশীল মূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে জানায় স্বাগতম। আমরাও মহাসমারোহে নবাগত দিনটিকে জানাই অভ্যর্থনা, আশা-আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনায় পূর্ণ হয় আমাদের হৃদয়।

প্রাচীন কালে আমাদের দেশে বর্ষ শুরু হত অগ্রহায়ণ মাস থেকে। তখন অগ্রহায়ণ মাসের নাম ছিল ‘মাগশীর্ষ মাস’। বর্তমান সময়ের মতো তখন মানুষ শিক্ষার আলোকে উদ্‌ভাসিত হয়নি, শুরু হয়নি আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। চন্দ্র- সূর্যের গতি দেখে বর্ষ গণনা তখনও ছিল মানুষের অজানা। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট দেখে বর্ষ গণনা করা হত। অগ্রহায়ণ কথার মানে ‘অগ্র’ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ, হায়ন অর্থাৎ ব্রীহি বা ধান জন্মায় যে মাসে, সেই মাসটি অগ্রহায়ণ মাস। পরবর্তী কালে বৈশাখ মাস থেকে বছর শুরু হতে লাগল। বিশাখা নক্ষত্রযুক্ত পূর্ণিমার নাম বৈশাখী। যে মাসে এই বৈশাখী হয় সেই মাসের নাম বৈশাখ।

বর্তমানে নববর্ষ উদ্যাপিত হয় বৈশাখ মাসে। বাঙালীরা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিতে নববর্ষ উদ্যাপন করে। তখন মানুষ ভুলে যায় অতীতের দুঃখ বেদনা, ব্যর্থতার গ্লানি, মন থেকে মুছে ফেলে হতাশার ক্ষত। নববর্ষের নতুন প্রভাত আমাদের মধ্যে সঞ্চার করে আশার আলো, বহন করে আনে উদার মুক্তির বাণী- হতাশা থেকে মুক্তি, মানসিক জড়তা থেকে মুক্তি, চিত্তদৈন্যতার হাত থেকে মুক্তি। নববর্ষ আনন্দের উৎসব, পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে অভ্যর্থনা জানানোর উৎসব। নববর্ষ নতুন করে প্রাণচেতনা অনুভবের উৎসব, শক্তি সঞ্চয়ের উৎসব।

নববর্ষের উৎসবে বিচিত্র অনুষ্ঠান

এই দিনটিতে গ্রাম-বাংলার যেখানে সেখানে বসে মেলা। তার আগের দিন অর্থাৎ চৈত্রমাসের শেষ দিনে গাজন ও শিবের পুজো হয়। চড়কের মেলা, শিবের গাজন এখন নববর্ষের অঙ্গ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা পয়লা বৈশাখে গণেশ পুজো করে ও ‘হালখাতা’ উৎসবে মেতে ওঠে। গৃহস্থেরাও এই দিনটিতে নতুন জামা-কাপড়ে সজ্জিত হয়, বহুবিধ অনুষ্ঠানও পালন করে। তবে বর্তমানে উৎসবের ধারা কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। শহরাঞ্চ লে নববর্ষ রাষ্ট্রীয় উৎসবের মত পালিত হয়। অতীতে নববর্ষ পুজো অর্চনায় সীমাবদ্ধ থাকত। এখন গ্রাম-শহর সর্বত্র নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। কোথাও কোথাও নববর্ষের আগের দিন ধুনি জ্বালায়। এর মধ্যে প্রকাশ পায় পুরাতনের যা আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় তাকে ভষ্মীভূত করে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করলাম।

উপসংহার

বর্তমানের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক সময় মানুষের মুখে হাসির রেখা ফুটাতে পারছে না। তার অন্যতম কারণ দারিদ্র বেকারত্ব প্রভৃতি। মানুষের দৈনন্দিন জীবন যত বাস্তবের রূঢ়তার সম্মুখীন হচ্ছে ততই উৎসবের স্বপ্ন রঙিন কল্পলোকের বেলুনটি ফুটো হয়ে চুপসে যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কর্মব্যস্ত জীবনে উৎসব শরীরের ক্লান্তি দূর করে এনে দেয় কর্মে প্রেরণা। নববর্ষ উৎসবের দিন বৎসরের অন্য দিনগুলো থেকে স্বতন্ত্র, যা নির্মল আনন্দের স্পর্শে, নতুন উদ্যমে, নতুন বছরে যাত্রা করার দিন।

আরও পড়ুন – ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment