রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংসতা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন

১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
মানবতাবাদের বৈশিষ্ট্য: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ মানবতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং সবার মধ্যে আত্মিক সংযোগের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এক জীবনদর্শন। তাঁর মানবতাবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
সমান মর্যাদা ও অধিকার : রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানবতাবাদী ভাবনায় সব মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। তিনি সমগ্র মানবজাতিকে এক অখণ্ড সত্তা হিসেবে দেখতেন এবং তাদের কল্যাণ কামনা করতেন।
মানবপ্রেম ও সহানুভূতি : মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদের মূল ভিত্তি। তিনি মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি তাঁর রচনায় মানবিক সম্পর্কগুলির মধ্যে আন্তরিকতা বজায় রেখেছিলেন এবং মানুষের অন্তর্নিহিত মানবমনকে সঠিকভাবে তাঁর লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন।
সৃজনশীলতা: রবীন্দ্রনাথ সামাজিক ন্যায় ও অধিকারের সমতা প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ঠ তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষ সৃজনশীল জীব। সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে এবং জগতকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাই তিনি কর্ম ও সেবার মাধ্যমে মানবতাবাদকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কথা বলেছেন।
আধ্যাত্মিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদী ভাবনা আধ্যাত্মিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত ছিল। তিনি মনে করতেন মানুষের মধ্যে এক দেবত্ব আছে যা তাকে বিশ্বজগতের সঙ্গে সংযুক্ত করে।
বিশ্বমানবতা ও বিশ্বভ্রাতৃদ্ববোধ: রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ কেবল নিজ দেশ বা জাতি বা নির্দিষ্ট কোনো ভূ-খন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর মানবতাবাদী দর্শনভাবনা দেশ বা রাষ্ট্রের গন্ডি পেরিয়ে সমগ্র বিশ্বব্যাপী প্রসারিত ছিল।
২। রবীন্দ্র মানবতাবাদের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আলোচনা করো।
রবীন্দ্রনাথ ধর্ম বলতে সর্বদা মানবধর্মকেই বুঝেছেন। তাঁর কাছে মনুষ্যত্ব ও মানবিক আদর্শই ছিল মূল। তবে তিনি উপনিষদ দ্বারা বিশেষ প্রভাবিত ছিলেন, তথাপি তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবধারায় অভিনবত্ব লক্ষ করা যায়। তাঁর কাছে জীবন ও জগৎ অবিচ্ছিন্ন এবং মানুষই তার কেন্দ্র। অতএব তাঁর মতে ধর্ম হল মানবধর্ম এবং তাঁর আধ্যাত্মিক চিন্তাধারাও মানবমুখী। তাই তাঁর আধ্যাত্মিকতাতেও মানবিকতাবাদ লক্ষ করা যায়। তাঁর মতে বিশ্বের কেন্দ্রে আছে মানবজাতি। তাই তাঁর কাছে দেবতা হল ‘মানবরূপী দেবতা’ বা ‘মানবদেবতা’। এই মানবদেবতার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই মানুষের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মানুষ ও দেবতা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয় বরং তারা একে অপরের পরিপূরক। রবীন্দ্রনাথের মানবধর্মে কোনো নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, কুসংস্কারের কঠোর বেড়াজাল নেই। কেন-না এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিশেষ মতবাদকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠেনি। এখানে তিনি ধর্মকে আত্মশক্তির উদ্বোধক বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এর মাধ্যমেই ব্যক্তি বিশ্বমানবের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে পারে। তাই বলা যায় মানুষের মধ্যে সুপ্ত বিশ্বভ্রাতৃত্বের ধর্মকে উপলব্ধি করাই হল তার কাছে মানবধর্ম।
এইভাবেই রবীন্দ্রনাথ আধ্যাত্মিক ঐক্যের বার্তাকে বহন করেছেন তাঁর মানবতাবাদ তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে। যা জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে পালনীয়। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ভারততীর্থ’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন-
"হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নরদেবতারে" -(গীতাঞ্জলি, ১০৭ নং কবিতা)
পরিশেষে বলা যায় তাঁর দর্শনে মানবতাবাদ ও অধ্যাত্মবাদ মিলেমিশে এক হয়ে আছে।
৩। মানুষের সীমাবদ্ধতার দিকটি আলোচনা করো।
অথবা, রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে সসীম সত্তার দিকটি আলোচনা করো।
রবীন্দ্রনাথ মানুষের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে মানবতার উৎস অনুসন্ধান করেছেন অর্থাৎ মানবতাবাদ হল একটি বিশেষ দর্শন, যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষ। সমাজজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের এই দর্শন উপস্থিত থাকে। মানুষের শক্তি, বুদ্ধি, সত্তা-সহ বিভিন্ন গুণাবলি এতে প্রাধান্য পায়।
সীমাবদ্ধতার দিক: রবীন্দ্রদর্শনে মানব সত্তার দুটি দিক নির্দেশিত হয়েছে যার একটি হল সসীম দিক বা সীমাবদ্ধতার দিক এবং অপরটি হল অসীম দিক। মানুষের সসীম দিকটি মূলত তার দৈহিক আকৃতি, যা সে লাভ করেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আর অসীম দিকটি হল মানুষের আধ্যাত্মিক প্রকৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানব সত্তার এই সসীম দিক বা সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গিয়ে তিনটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। সেগুলি হল-
অহংসতা: রবীন্দ্রনাথের মতে মানুষের জীবভাব গঠিত হয় দেহ-ইন্দ্রিয়কে নিয়ে। জীবভাবে মানুষের লক্ষ্য জাগতিক সুখ, সম্পদ, অর্থ উপার্জন ইত্যাদি। জীবের এই সত্তাকে অহংসত্তা বলে। এই অহংসত্তাকে বলা হয় ছোটো আমি। মানুষ এই অহংসত্তার পরিচয় দেয় তার রূপ, দেহ ও সম্পদ দিয়ে।
জীবসত্তা: জীবভাবে মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকে বলে জীবভাবকে জীবসত্তা বলা হয়। জীবসত্তা মানুষকে ভোগের দিকে নিয়ে যায়। মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। এক্ষেত্রে আত্মসুখই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে। এইজন্য বাহ্যিক জড়সম্পদ ও অর্থ উপার্জনই মানুষের জীবনের পরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের এই লক্ষ্য কোনোদিন পূরণ হয় না।
সীমিত সত্তা : মানুষের সীমিত সত্তা কোনো কিছু অর্জন করেই গভীর সন্তুষ্টি লাভ করে না। এই কারণে সম্পদের কোনো পরিমাণই মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। তাই কোনো বিষয়ে কৃতকার্য হওয়ার পরই আবার অন্য কোনো বিষয় পাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। এই প্রবণতাই মানুষকে বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।
পরিশেষে বলা যায় মানব সত্তার সসীম দিক মানুষকে বন্ধনে আবৃষ্ট করে ঠিকই কিন্তু এর মাধ্যমেই মানুষ অসীম সত্তার উৎসের অনুসনধান পায়।
৪। মানবসত্তার অসীম দিকটিকে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর The Religion of Man নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, মানব প্রকৃতিতে দুটি দিক পরিলক্ষিত হয়। একটি হল মানুষের সসীম বা সীমাবদ্ধতার দিক এবং অপরটি হল মানুষের অসীম দিক। তিনি মানুষের এই অসীম দিকটিকে কখনও ‘বিশ্বপ্রকৃতি’ রূপে আবার কখনও ‘মানুষের মধ্যে উদ্বৃত্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
মানবসত্তার অসীম দিক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবসত্তার অসীম দিকটিকে বিভিন্ন ধরনের ভাবনার মধ্যে দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে মানবজীবন একদিকে সীমাবদ্ধ হলেও অন্যদিকে অসীম ও অনন্ত। মানবসত্তার এই দিকটিতে যে বিষয়গুলি পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল-
প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণ: রবীন্দ্রনাথের মতে মানুষের মধ্যে অসীম সত্তা আছে বলেই মানুষ প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। জৈবিক চাহিদার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়। প্রকৃতি মানুষের বিরুদ্ধাচরণ করলেও সে (মানুষ) প্রকৃতিকে ভালোবাসে, তার অসীম সত্তার কারণেই।
স্বাধীনতা: রবীন্দ্রনাথের মতে মানুষের অসীম সত্তার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল স্বাধীনতা। মানুষ তার দৈহিক গঠনের কারণে অন্যান্য প্রাণীর থেকে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করে।
অমরতার আকাঙ্ক্ষা : রবীন্দ্রনাথের মতে মানুষ তার অসীম সত্তার জন্যই অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে। তিনি বলেন অসীম চেতনাই মানুষকে অমরতার দিকে ধাবিত করে। আর সমগ্র জগতকে নিজের বলে মনে করতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায় রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আত্মার এক অসীম চেতনার দিকে যাত্রা করা সম্ভব। মানবসত্তার এই অসীমতা বোধ এবং আত্মপরিচয়ের ধারণা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও দর্শনে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে।
৫। মানবতাবাদ কী? রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে বিশ্বমানবতাবাদের তাৎপর্য উল্লেখ করো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন চিন্তার সমস্ত ক্ষেত্রে মানবিক বিশ্বাসের ছাপ লক্ষণীয়। তিনি The Religion of Man নামক গ্রন্থে মানবতাবাদ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মানবতাবাদ হল এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা মানুষের মর্যাদা, মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।
মানবতাবাদের সংজ্ঞা:
রবীন্দ্রনাথের মতে মানবসমাজের সর্বাঙ্গীন বিকাশসাধনের প্রতি ব্যক্তি মানুষের যে দায়বন্ধতা তাই হল মানবতাবাদ। মানবতাবাদের মূলকথা হল মানবতার জয়গান যা সকল মানুষকে একই সূত্রে গ্রথিত করে। মানুষের মনের ভিতর যে দয়া-মায়া, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা প্রভৃতি মানবোচিত গুণ বা বিশিষ্টতা লক্ষ করা যায় তাকেই মনুষ্যত্ব বা মানবতা বলে। এই মানবতা সম্পর্কিত যে মতবাদ তাই মানবতাবাদ।
রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে বিশ্বমানবতাবাদ:
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে মানুষ কেবল একটি নির্দিষ্ট জাতি বা সংস্কৃতির অংশ নয়। বরং সে বিশ্বমানবের অংশ। তাঁর মতে বিশ্বমানবতাবাদের প্রধান তাৎপর্যগুলি হল-
মানবসত্তার দুটি দিক: মানুষের মনের মধ্যেই দুইটি পৃথক সত্তা অবস্থান করে। একটি হল ব্যক্তিমানব এবং অপরটি বিশ্বমানব। অর্থাৎ মানুষের একদিকে আছে ‘জীবসত্তা’ এবং অন্যদিকে আছে ‘বিশ্বসত্তা’। মানুষ একদিকে যেমন ব্যক্তিরূপে স্বতন্ত্র এবং অন্যদিকে তেমনই বিশ্বমানবরূপে বা বিরাট পুরুষরূপে বিশ্ববাসীর সঙ্গে একাত্ম। রবীন্দ্রনাথের মতে ব্যক্তিমানব নিজের স্বার্থে তার কর্তব্য নির্ধারণ করে। এই জীবসত্তার অতিরিক্ত আরও একটি সত্তা মানুষের মনের মধ্যে অবস্থান করে যা ব্যক্তিমানুষকে অতিক্রম করে যায় এবং মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সর্বজনীন কল্যাণের কাজে, সাহিত্যে ও শিল্পে উৎসাহিত করে। একেই রবীন্দ্রনাথ বিশ্বমানব, মহামানব, সনাতন মানব প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করেছেন।
বিশ্বমানবের সাধনাই মানবতাবাদের লক্ষ্য : রবীন্দ্রনাথ বলেন বৃহৎ মানুষের সাধনাই মানুষের শ্রেষ্ঠ সাধনা। বৃহৎ মানুষ বা বিশ্বমানবের উপলব্ধিতেই অসংখ্য বিচিত্র মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ দেখতে পাওয়া যায়। এই ঐক্যবোধে মানুষ তার দৈনন্দিন আত্মকেন্দ্রিক জীবনের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পরের স্বার্থে কর্ম করে।
বিশ্বমানবের স্বরূপ:
মানবতার উপলব্ধির মাধ্যমে মানুষ মনুষ্যত্বকে অর্জন করে এবং খন্ড সীমাকে ছাড়িয়ে অখন্ড অসীমের দিকে ধাবিত হয়। সে নিজের সম্পর্কে ভাবে সোহহম্ অর্থাৎ ‘আমিই সেই’। এই ‘সেই’ হল বিশ্বমানব। এইরূপ উপলব্ধি হলেই মানুষ তার সংকীর্ণ গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বমৈত্রীর প্রাঙ্গণে পৌঁছোয় এবং বিরোধ ও দুঃখের মধ্যে দিয়ে পরম সুখকে খুঁজে পায়।
পরিশেষে বলা যায় বিশ্বমানবের সঙ্গে প্রেমের ও সেবার বন্ধনে মিলনই হল দেবতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতম মিলন। রবীন্দ্রনাথ মানুষের অন্তর্নিহিত মহামানবকে ঈশ্বররূপে গণ্য করে বিশ্বমানবের সেবাকেই ঈশ্বরসেবা বলেছেন।
৬। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ ও তাঁর দর্শন আধুনিক সমাজে কতটা প্রাসঙ্গিক?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ ও তাঁর দর্শন:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ ও তাঁর দর্শন আধুনিক সমাজে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কারণ তাঁর দর্শনের মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায় এবং সাম্যের ধারণাগুলি এখনও বর্তমান সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেগুলি নিম্নরূপ-
সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ: বর্তমান সমাজে এখনও অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান। যেমন- বর্ণভেদ, শ্রেণিভেদ, ধর্মীয় সহিংসতা এবং নারী নির্যাতন প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শন এই বৈষম্যগুলির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং সব মানুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর দর্শন অনুসারে সমাজে শোষণ, নিপীড়ন ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং সমতা তৈরি করা জরুরি। বর্তমান সমাজে এই আদর্শগুলিকে মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করলে সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় বিভেদ এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শন ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সর্বধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তাই রবীন্দ্রনাথের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য পারস্পরিক সমঝোতা ও শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক
বিশ্বমানবতাবাদ: রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শন ছিল আন্তর্জাতিকতাবাদী। তিনি মনে করতেন যে মানবতা কোনো দেশ, কাল বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। বর্তমান পৃথিবীতে যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অস্থিরতা বিদ্যমান; রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব মানবতাবাদী চিন্তা সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের মানবিক সম্পর্ক সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সমানাধিকার স্থাপনের ক্ষেত্রে গভীর অনুপ্রেরণা হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দর্শন আধুনিক সমাজের সংকটময় পরিস্থিতিতেও আলোর দিশা দেখাতে পারে। তাই শুধুমাত্র অতীতের জন্য নয় বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সমাজের জন্য রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ ধূমকেতুর মতো পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।
৭। রবীন্দ্রনাথের মানবধর্ম বিষয়ক বক্তব্যের কয়েকটি সিদ্ধান্ত উল্লেখ করো।
মানবধর্ম বিষয়ক সিদ্ধান্ত :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবধর্ম সম্পর্কিত ধারণাটি ছিল বিশ্বজনীন। মানবিক মূল্যবোধের প্রতি তিনি ছিলেন গভীর শ্রদ্ধাশীল। তিনি মনে করতেন যে, মানবতা কোনো বিশেষ জাতি বা ধর্মের সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি সর্বজনীন, যা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের উপর একইরকমভাবে প্রযোজ্য। তাঁর মানবতাবাদী চিন্তাধারার কয়েকটি মূল সিদ্ধান্ত হল-
বিশ্ব মাতৃত্ববোধ: রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন যে মানবধর্ম কোনো বিশেষ জাতি বা সম্প্রদায়ের ধর্ম নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির ধর্ম। বিশ্বমানবতার ধর্মই হল মানবধর্ম, যেখানে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে একে অপরকে সম্মান করবে ও একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করবে।
মুক্তি ও আধ্যাত্মিকতা: রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী চিন্তাধারার মধ্যে আত্মিক মুক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁর মতে মানুষের মূল উদ্দেশ্য হল নিজের অন্তরাত্মা ও মনকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করা। এটি কেবলমাত্র ব্যক্তির উন্নতিই নয় সমাজের উন্নতির জন্যও অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমেই ব্যক্তি তথা সমাজের প্রকৃত মুক্তিলাভ সম্ভব।
সহানুভূতি ও মাতৃত্ববোধ: রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানবতাবাদী চিন্তায় পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমেই মানবধর্ম পরিপূর্ণতা লাভকরতে পারে।
ধর্ম ও মানবিকতা: রবীন্দ্রনাথের মতে আধ্যাত্মিকতা তথা ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণসাধন। তাই ধর্মকে বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তিনি বিশ্বাস করতেন প্রকৃত মানবধর্ম সত্য, প্রেম, সহানুভূতি, ন্যায় ইত্যাদি মানবিক মূল্যবোধের মধ্যেই নিহিত।
উপরোক্ত ধারণাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিমানবকে বিশ্বমানবের স্থলে উত্তরণ করে। ফলে ব্যক্তিমানুষ ধর্ম, কর্ম, জাতি, গোষ্ঠী প্রভৃতির প্রাচীর ভেদ করতে সচেষ্ট হয়। আর প্রেম ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভর করে বৃহত্তর সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হয়।
৮। স্বামী বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের অর্থ ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।
কর্মযোগ শব্দটির অর্থ:
‘কর্মযোগ’ শব্দটি ‘কর্ম’ ও ‘যোগ’ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। সংস্কৃত ‘কৃ’-ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘কর্ম’ শব্দটির অর্থ হল ‘করা’। কিন্তু যে-কোনো কর্মই কর্মযোগের অন্তর্গত কর্ম নয়। কর্মযোগে যে কর্মের কথা বলা হয়েছে তা হল অনাসক্ত বা নিরাসক্ত কর্ম (যে কর্ম করার পিছনে কর্মকর্তার কোনো কামনা-বাসনা থাকে না)। ‘যোগ’ শব্দটির অর্থ হল ‘যুক্ত হয়ে’। সুতরাং ‘কর্মযোগ’ শব্দের অর্থ হল নিজের বুদ্ধিকে ঈশ্বরের বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করে সমস্ত কর্মের ফল ঈশ্বরকে সমর্পণ করে নিষ্কাম ও নিরাসক্তভাবে কর্ম করা।
বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে কর্মযোগের উদ্দেশ্য:
বিবেকানন্দের মতে কর্মযোগের উদ্দেশ্য হল পরম সত্তা বা ঈশ্বরের কাছে মানুষের সকল কর্মফল উৎসর্গ।
অহংকারমুক্ত হয়ে কর্ম করা : কর্মযোগের প্রথম উদ্দেশ্য হল অহংকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে কর্মের ফলাফল বা পরিণতির কথা না ভেবে কর্মের প্রতি একাগ্র ও নিবিষ্ট হওয়া।
বিপন্ন মানবতার সেবা: প্রতিটি মানুষকে মানবতার সেবা করতে হবে। মানুষ যেখানে বিপন্ন, দুঃখ-কষ্টে কাতর, অসহায় সেখানে বিপন্নতা থেকে মুক্ত করতে পরের জন্য আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও সদিচ্ছার মধ্যে দিয়ে কর্ম করে যেতে হবে।
নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা : যে-কোনো কাজ ভালোবেসে নিষ্ঠার সঙ্গে করতে হবে আর এই নিষ্ঠা আসবে কাজের প্রতি আন্তরিকতা থেকে।
কর্তব্যকর্মে আত্মনিয়োগ: বিবেকানন্দের মতে প্রতিটি মানুষের মধ্যে সত্ত্ব, রজো, তামো এই ত্রিবিধ গুণ বর্তমান থাকে। আর এই গুণের ভিন্নতার জন্য প্রতিটি মানুষের কর্মও বিভিন্ন ধরনের হয়। তাঁর মতে তমো গুণ পরিত্যাগ করতে পারলেই ব্যক্তি নিজ কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।
স্বামীজির মতে কর্মের লক্ষ্য হল আত্মজ্ঞান লাভ করা। বিবেকানন্দের কর্মযোগের ভাবনা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি মনে করতেন কর্মই একমাত্র পথ যার সাহায্যে আমরা অর্থাৎ সমাজের সকল স্তরের মানুষ আত্মজ্ঞান লাভে সমর্থ হয়ে মুক্তির পথে অগ্রসর হতে পারি।
৯। নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই মহান-বিবেকানন্দের কর্মযোগ অনুসারে উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
স্বামী বিবেকানন্দ রচিত কর্মযোগ গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়টি হল নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকেই মহান। স্বামীজি তাঁর কর্মযোগের ধারণার মধ্যে দিয়ে প্রত্যেককে তার কর্মক্ষেত্রে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পরার্থপরতা ও সমাজসেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি সমাজের যে স্তরে অবস্থিত তাকে তার জন্য নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত কর্তব্য পালন করতে হবে।
দ্বিবিধ গুণের তারতম্য : সমাজে প্রতিটি মানুষের প্রকৃতি ও যোগ্যতা অনুযায়ী কর্তব্য নির্দিষ্ট থাকে। স্বামীজি মনে করতেন যে কর্তব্যের কোনো সর্বজনীন রূপ হয় না। একজনের যা কর্তব্য অন্যজনের তা নয়। এই কর্তব্য নির্ধারিত হয় প্রতিটি মানুষের প্রকৃতিগত পার্থক্য দ্বারা। সাংখ্য দর্শন অনুযায়ী মনুষ্য প্রকৃতি যে সত্ত্ব, রজো ও তমো গুণের সমন্বয়ে গঠিত তাদের মধ্যে তারতম্য আছে। কারোর মধ্যে সত্ত্ব গুণ বেশি, কারোর মধ্যে রজো গুণ, আবার কেউ তমো গুণ প্রধান। গুণগত তারতম্য থাকায় প্রতিটি মানুষের সামর্থ্যও যেমন সমান নয় তেমনই সবাই সব কাজের জন্য উপযুক্তও নয়। কর্মযোগের মধ্যে দিয়ে স্বামীজি বলতে চেয়েছেন যার জন্য যে কাজ নির্দিষ্ট সেটিই তার নিষ্ঠার সঙ্গে করা কর্তব্য। তা না হলে কর্তব্যে অবহেলা হয়।
কর্মযোগের ধারণার মধ্যে দিয়ে বিবেকানন্দ কর্মকেই সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। কর্মের লক্ষ্য হিসেবে মানুষের আত্মজ্ঞান লাভহবে, সমাজের কল্যাণ সাধিত হবে এবং সর্বোপরি পরম পুরুষার্থ মোক্ষের পথ প্রশস্ত হবে। তাই কোনো কাজকেই ছোটো করে দেখা উচিত নয়। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকেই মহান। প্রত্যেককে প্রতিটি কাজ, যা তার নিজের জন্য নির্দিষ্ট তাকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ভালোবেসে, ঈশ্বরের সেবা মনে করে করতে হবে। তবেই সমাজের কল্যাণ সাধিত হবে।
১০। গীতার কর্মযোগ অনুসারে প্রবৃত্তিমার্গ ও নিবৃত্তিমার্গ আলোচনা করো?
অথবা, আসক্তি ত্যাগের উপায় কী?
স্বামী বিবেকানন্দ আসক্তি ত্যাগের দুটি পথের উল্লেখ করেছেন। এই দুটি পথ একে অপরের বিপরীত হলেও এগুলি আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একইরকমভাবে প্রয়োজনীয়।
প্রবৃত্তিমার্গ: এই মার্গ বা পথ অনুসরণ করলে এটি এটি করে সব বস্তু গ্রহণ করার পর তা ত্যাগ করতে হয়। এই পথ সংসারের পথ। এটি মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনের কাজে প্রবৃত্ত রাখে। এই মার্গের মূল লক্ষ্য হল কাজের মধ্যে দিয়ে আত্মোন্নয়ন ঘটানো। গীতার কর্মযোগে ভগবান শ্রীকৃয় অর্জুনের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে “তুমি তোমার কর্তব্য করো, কিন্তু কর্মফলের প্রতি যেন কোনো মোহ না থাকে”।
স্বামী বিবেকানন্দের মতে প্রবৃত্তিমার্গের পথটি হল কর্মযোগের পথ। সাধারণ মানুষ প্রবৃত্তিমার্গকেই মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নেয়।
নিবৃত্তিমার্গ: এই মার্গ বা পথ অনুসরণ করলে এটি নয় এটি নয় করে সব ত্যাগ করতে হয়। প্রবল ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষরাই এই পথে চলতে পারেন। নিবৃত্তিমার্গ হল সেই আধ্যাত্মিক পথ যেখানে মানুষ সামাজিক কর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্জনতা ও মননশীলতার দ্বারা আত্মোন্নতির উদ্দেশ্যে নিজের জীবনকে পরিচালনা করে। এই পথে মানুষ সমস্ত পার্থিব আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে একান্তভাবে আত্মসাক্ষাৎ ও ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের জন্য সাধনা করে। নিবৃত্তিমার্গ হল জ্ঞানযোগের পথ, যেখানে কর্ম থেকে মোক্ষকামী ব্যক্তি বিরত থাকে।
পরিশেষে বলা যায় গীতার কর্মযোগ অনুসারে মোক্ষ লাভের জন্য প্রবৃত্তিমার্গ এবং নিবৃত্তিমার্গ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ তার নিজের প্রকৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী যে-কোনো একটি পথ বেছে নিতে পারে। উভয় মার্গকে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে অনুসরণ করলে মানুষ মোক্ষ লাভের দিকে অগ্রসর হয়।
১১। বিবেকানন্দ কীভাবে কর্মযোগের অনুশীলনের মাধ্যমে মুক্তি লাভের কথা বলেছেন?
জগতে সুখ ও দুঃখের ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যায়। সুখ-দুঃখ পরস্পর সম্পৃক্ত। এই দুটি বিষয়কে ত্যাগ করতে পারলে মানুষ মোক্ষ লাভের পথে অগ্রসর হতে পারবে। আর এই মোক্ষলাভ বা মুক্তিই হবে কর্মযোগের আদর্শ। নিষ্কার্ম কর্মে কোনো অহংবোধ থাকে না, চিত্ত চাঞ্চল্য থাকে না। তাই নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বর উপাসনাই হল ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের মুক্তির পথ। এই মুক্তিই হল বিবেকানন্দের কর্মযোগের লক্ষ্য।
মুক্তিলাভের পথ: মনুষ্যজাতির উচ্চাকাঙ্ক্ষার চরম লক্ষ্য মুক্তি। এই মুক্তিলাভের দুটি পথ আছে-ৎ প্রবৃত্তিমার্গও নিবৃত্তিমার্গ। প্রবৃত্তিমার্গ অনুসরণ করলে ইতি ইতি করে সবকিছু গ্রহণ করে পরে তা ত্যাগ করতে হয়। নিবৃত্তিমার্গ অনুসরণ করলে নেতি নেতি করে সব ত্যাগ করতে হয়। নিবৃত্তি মার্গ মহাপুরুষেরা মুক্তির পথ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সাধারণ মানুষ প্রবৃত্তিমার্গকে মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নেয়।
অনাসক্ত কর্মই মুক্তি অভিমুখী : গীতায় বলা হয়েছে নিরন্তর কর্ম করতে হবে কিন্তু তাতে আসক্ত হলে চলবে না। স্বামীজি বলেছেন জীবের সমস্ত কর্মফল যদি ঈশ্বরকে সমর্পণ করে জীব অনাসক্তভাবে কর্ম করে, তাহলে জীবকে আর বন্ধনদশায় আবদ্ধ হতে হয় না। সমাজ ও সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে বৈরাগ্যের মাধ্যমে মুক্তি বিবেকানন্দ চাননি।
ঈশ্বরে সমস্ত কর্মফল সমর্পণ: ঈশ্বরে সকল কর্মফল সমর্পণ করে কর্ম করতে হবে। কর্ম করার সময় ব্যক্তিকে সবসময় মনে রাখতে হবে-সে যে কর্ম করছে, তা নিজের ইচ্ছায় নিজ কর্ম নয়, তা হল ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঈশ্বরের কর্মসম্পাদন অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঈশ্বরের ইচ্ছাই জীবের ইচ্ছারূপে তার কর্মের প্রবর্তক হবে। তাই নিষ্কাম কর্ম কামনাশূন্য হলেও উদ্দেশ্যহীন নয়, কেন-না নিষ্কাম কর্ম ঈশ্বরেরই কর্ম।
পরিশেষে বলা যায়, নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই মোক্ষলাভ হয়। জগতে সবার মঙ্গলের জন্য কর্ম করতে গেলে ফলাকাঙ্ক্ষাকে বর্জন করতে হবে। কর্মফলের কামনা পরিত্যাগ করে কেবল কর্মসাধনের জন্য যে কর্ম, তাই প্রকৃতপক্ষে সৎ কর্ম। এইরূপ সৎ কর্ম করার উপদেশ গীতায় কর্মযোগে দেওয়া হয়েছে।
১২। বর্তমান বিশ্বে গান্ধিজির অহিংসার ধারণার প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
গান্ধিজির অহিংসার ধারণাটি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এটি কেবল ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শাস্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
রাজনৈতিক আন্দেলন
বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনগুলিতে গান্ধিজির অহিংসার ধারণা গৃহীত হয়েছে। যেমন- মার্টিন লুথার কিং এবং নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁদের নিজ নিজ দেশে অহিংস প্রতিরোধের মাধ্যমে বর্ণবৈষম্য নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গান্ধিজির অহিংসার নীতি অনুসরণ করেছিলেন।
সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন :
গান্ধিজির অহিংসা নীতি সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করেছে। তাঁর সত্যাগ্রহ পদ্ধতিটি ছিল অহিংস প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী রূপ। এটি মানুষকে তাদের অধিকারের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম করতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
ধর্মীয় প্রভাব:
গান্ধিজির অহিংসার ধারণা ভারতবর্ষ-সহ সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সহিষুতা প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতি:
গান্ধিজির অহিংসা ধারণাটি কেবল রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নয় ব্যক্তিগত জীবনেও শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনে সহায়ক। তাঁর শিক্ষা মানুষকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা এবং ভালোবাসার মাধ্যমে জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে:
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গান্ধিজির অহিংসা নীতি শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার নীতি হিসেবে কাজ করে। বর্তমান বহুসংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে রাজনৈতিক আলোচনা বা কোনো প্রকার সমস্যার সমাধানের জন্য অহিংসা ও শান্তির বার্তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আন্দোলন:
গান্ধিজির অহিংসার ধারণাটি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনেও প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবেশবিদরা অহিংস উপায়কে বেছে নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য অহিংস উপায়ে তারা আন্দোলন সংগঠিত করেন।
সর্বোপরি বলাই বাহুল্য যে, গান্ধিজির অহিংসার ধারণা আজকের বিশ্বে শাস্তি, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায় এবং বিশ্বের সর্বত্র সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অমূল্য দিক নির্দেশ করেছে।
১৩। মানবতাবাদ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের চিন্তাভাবনার তুলনামূলক আলোচনা করো।
সমসাময়িক ভারতীয় দর্শনের আলোচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দ উভয়েই উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে বিরাজমান। তাঁদের দার্শনিক চিন্তাভাবনায় যেমন কিছু সাদৃশ্য আছে তেমনই কিছু বৈসাদৃশ্যও লক্ষ করা যায়। সেইগুলি নিম্নরূপ-
আদর্শ রবীন্দ্রনাথ ও স্বামী বিবেকানন্দ উভয়ের দার্শনিক চিন্তাভাবনার মূলে ছিল উপনিষদীয় ভাবধারা। তাঁদের দর্শনে এই ভাবধারার প্রকাশ ঘটেছে ভিন্নভাবে। উপনিষদীয় ব্রহ্ম রবীন্দ্রনাথের কাছে ধরা দিয়েছে বিশ্বমানবের উপাধিতে।
অপরদিকে স্বামীজি বেদান্ত নির্দেশিত বিভিন্ন প্রকার যোগের (জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ ও রাজযোগ) মাধ্যমে মানুষের আত্মিক উন্নতি ঘটিয়ে তাকে মুক্তির পথে অগ্রসর করতে চেয়েছেন।
মানুষের গুরুত্ব:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামীজি উভয়ের জীবন এবং দর্শনে ‘মানুষ’ সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। উভয়েই মানুষের সর্বাঙ্গীণ উৎকর্ষতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আলাদা। রবীন্দ্রনাথ মানুষকে তার ক্ষুদ্র সত্তাকে অতিক্রম করে বৃহৎ সত্তার দিকে অগ্রসর হয়ে বিশ্বের দরবারে হাজির করতে চেয়েছেন।
অপরপক্ষে বিবেকোনন্দ বলেছেন নিজেকে ঘৃণা করা সবথেকে বড়ো ভুল। নিজেকে ভালোবেসে সকল মানুষকে ভালোবাসতে পারলে ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব।
বিষয়গত দিক:
রবীন্দ্রনাথ তাঁর মতবাদে দেখিয়েছেন কীভাবে মানুষ সসীমতার গন্ডি অতিক্রম করে অসীমতায় উন্নীত হতে পারে এবং জীবভাবের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব সমাজের সামগ্রিক কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। অর্থাৎ তিনি মানবতাবাদের মাধ্যমে সকলকে বিশ্বমানবের কল্যাণসাধনে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে বিবেকানন্দ কর্মযোগ তত্ত্বে দেখিয়েছেন কীভাবে কর্মের রহস্য, কর্মের আদর্শ জ্ঞাত হয়ে নিষ্কাম কর্মের মধ্যে দিয়ে মানুষের সার্বিক কল্যাণসাধন হয়। অর্থাৎ কর্মযোগ তত্ত্বের মাধ্যমে তাঁর দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। এই চিন্তাধারার মাধ্যমে তিনি সমগ্র মানবজাতির কল্যাণসাধনে সকলকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায় রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের দার্শনিক মতবাদের মধ্যে কিছু বৈষম্য থাকলেও উভয়ের মতবাদ মানবব্রহ্ম বা এক মহামানবের ঐক্যসূত্রে গ্রথিত।
১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মহাত্মা গান্ধির দার্শনিক চিন্তাভাবনার তুলনামূলক আলোচনা করো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধি উভয়েই সমসাময়িক দার্শনিক। উভয়ের দর্শনে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, মানবতাবাদ ও আত্মপরিচয় বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। তাঁদের আদর্শ ও দর্শনে যেমন সাদৃশ্য আছে তেমনই আছে কিছু বৈসাদৃশ্য। এই দুই মনীষীর দার্শনিক মতবাদের তুলনাগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
জাতীয়তাবাদ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অনেক বেশি বিস্তৃত। তিনি বিশ্বসভায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই ভারতবর্ষকে গড়ে তোলায় বিশ্বাসী ছিলেন।
অপরপক্ষে গান্ধিজির জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল রাষ্ট্রচেতনায় সমৃদ্ধ এবং আত্মনির্ভরতাভিত্তিক। তাঁর চিন্তাধারায় জাতীয়তাবাদ ও মানবতাবাদ সহাবস্থান করলেও তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষকে আত্মমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করা।
শিক্ষা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুক্ত মনন ও সৃজনশীল বিকাশের উপায় হিসেবে শিক্ষাকে দেখতেন। তিনি প্রাকৃতিক, আন্তর্জাতিক ও মানবিক দিকগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথা মাথায় রেখে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির মাঝে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শেখে।
অন্যদিকে গান্ধিজির মতে শিক্ষা হতে হবে হস্তশ্রমনির্ভর ও জীবনমুখী। তিনি বুনিয়াদি শিক্ষার প্রচার করেছিলেন। তাঁর বুনিয়াদি শিক্ষা পদ্ধতি শ্রম, স্বনির্ভরতা ও নৈতিক শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গঠিত। গান্ধিজির মতে শিক্ষা হবে কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনের পথ।
ধর্ম: রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী ও বিশ্বনাগরিক চিন্তায় বিশ্বাস করতেন। তাঁর দর্শন ছিল বিশ্বমানবতা। তাঁর মতে মানুষের প্রকৃত ধর্ম হল মানবতা। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর দর্শন ছিল মুক্তচিন্তা ও বিশ্বচেতনার প্রতি নিবেদিত।
অপরদিকে গান্ধিজির জীবন ও দর্শনের কেন্দ্রে ছিল সত্য ও অহিংসা। তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলতেন। তাঁর জীবনযাপন ছিল সহজ, সংযমী ও আধ্যাত্মিক। তিনি আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার মাধ্যমে সমাজসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন।
১৫। স্বামী বিবেকানন্দ ও মহাত্মা গান্ধির দার্শনিক চিন্তাভাবনার তুলনামূলক আলোচনা করো।
স্বামী বিবেকানন্দ ও মহাত্মা গান্ধি উভয়ই আধুনিক ভারতীয় চেতনার যুগান্তকারী দুই চিন্তাবিদ। তাঁদের চিন্তাধারা মূলত মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত ছিল। তাঁদের দর্শন ও অভিব্যক্তির মধ্যে সাদৃশ্যের পাশাপাশি বৈসাদৃশ্যও পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল-
ধর্ম ও অধ্যাত্মবাদ: স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মচিন্তার মূল ভিত্তি ছিল অদ্বৈত বেদান্ত। তিনি বিশ্বাস করতেন নিঃস্বার্থ মানবসেবা, নিষ্কাম কর্ম ও আত্মোন্নতির মাধ্যমে ঈশ্বরলাভ সম্ভব।
অপরদিকে গান্ধিজির ধর্মচিন্তার কেন্দ্রে ছিল সত্য ও অহিংসা। ধর্ম ও অধ্যাত্মবাদের প্রশ্নে গান্ধিজির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বাস্তবমুখী। তাঁর কাছে ধর্ম শুধুমাত্র উপাসনার বিষয় নয়, বরং জীবনের প্রতিটি দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত নৈতিক ও আত্মিক অনুশাসন।
কর্ম ও সমাজসেবা: স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন যে মানুষের সেবা করা যদি নিঃস্বার্থভাবে হয় তাহলে তা হবে সত্যিকারের ঈশ্বর সেবা। শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক দিক থেকে ধর্মকে বিচার না করে তিনি বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে পক্ষপাতী ছিলেন।
অপরদিকে গান্ধিজির মতে সত্য ও অহিংসা চর্চা করে সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব। তাই এর মাধ্যমে তিনি স্বরাজ, গ্রামীণ পুনর্গঠন ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের কাজ করেছেন।
শিক্ষা ও যুবসমাজ স্বামীজি যুবসমাজকে ভারতের নবজাগরণের চালিকাশক্তি হিসেবে দেখতেন। বিবেকানন্দের মতে শিক্ষা হল সেই যা মানুষের ভিতরে নিহিত শক্তিকে প্রকাশ করে। তাই তিনি শরীর, মন ও আত্মার সমন্বিত উন্নয়নের উপর জোর দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে এমন হওয়া উচিত যা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভর করে। কেন-না আত্মশক্তির জাগরণের মাধ্যমেই সমাজ পরিবর্তন সম্ভব।
অপরদিকে গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষা ছিল হাতের কাজ, নৈতিক শিক্ষা ও আত্মনির্ভরতার সমন্বয়। এমনকি শিশুদের জন্যও তিনি এমন শিক্ষার উপর জোর দেন যা গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত ও বাস্তবমুখী।
স্বামীজি ও গান্ধিজি উভয়েরই লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষের নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক পুনর্জাগরণ। উভয়ের দর্শনচিন্তাতেই শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতির গভীর প্রভাব ছিল এবং আজও বর্তমান সমাজে সেগুলির অবদান বিদ্যমান।