কারণতা প্রশ্ন উত্তর (চতুর্থ অধ্যায়) | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন | HS 4th Semester Philosophy Karonota Question answer 4th Chapter

১। কার্ভেড রিড-এর মতে কারণের গুণগত লক্ষণ ব্যাখ্যা করো।
কারণের গুণগত লক্ষণ: কার্ভেথ রিড কারণের গুণগত লক্ষণের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন সেখানে তিনি কারণকে কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনারূপে উল্লেখ করেছেন। কারণ সর্বদা কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনারূপে উপস্থিত থাকে এবং কার্য কারণের অনুবর্তী ঘটনারূপে উপস্থিত থাকে। কারণের গুণগত লক্ষণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
কারণ ও কার্য পরস্পর সাপেক্ষ দুটি পদ: সাপেক্ষ পদ বলতে বোঝায়, যে পদকে অর্থপূর্ণ হওয়ার জন্য অন্য কোনো পদের উপর নির্ভর করতে হয়। এই অর্থে কারণ ও কার্য দুটি সাপেক্ষ পদ। কার্য ছাড়া যেমন কারণ উৎপন্ন হয় না তেমনই কারণ ছাড়াও কার্য ঘটতে পারে না। কাজেই কারণ ও কার্য পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অতিবৃষ্টির ফলে যেমন বন্যা দেখা দেয় তেমনই বন্যার ফলে মানুষ গৃহহীনও হয়। তাই বন্যা যেমন অতিবৃষ্টির কার্য তেমনই আবার মানুষের গৃহহীনতারও কারণ।
কারণ কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা: কোনো একটি ঘটনা পূর্বে ঘটলে তবেই কার্য ঘটা সম্ভবপর হয়। পূর্বে বা আগে ঘটা ঘটনাই হল কারণ। কারণ পূর্বে ঘটলে তবেই কার্য ঘটে। এইজন্য কারণকে পূর্ববর্তী ঘটনা এবং কার্যকে পরবর্তী ঘটনা বলা হয়। যেমন-ওষুধ খাওয়ার পরেই রোগ নিরাময় হয়। ‘ওষুধ খাওয়া’ হল কারণ আর ‘রোগ নিরাময় হওয়া’ হল কার্য।
কারণ কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা: যে ঘটনা সর্বদাই অপরিবর্তনীয়ভাবে কার্যের পূর্বে ঘটে সেই অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাই হল কারণ। যে-কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা যায় না। যেমন-ম্যালেরিয়া জ্বরের পূর্ববর্তী কারণ হিসেবে বিভিন্ন ঘটনা থাকলেও একমাত্র অ্যানোফিলিস মশার দংশন সবক্ষেত্রে সর্বদাই উপস্থিত আছে। এর থেকে সিদ্ধান্ত করা হল অ্যানোফিলিস মশার দংশন ম্যালেরিয়া রোগের কারণ।
কারণ কার্যের শর্তান্তরহীন অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা: যে-কোনো অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলে গণ্য করা যায় না। কেন-না কারণ হল এমন শর্তসমষ্টি যা অন্য কোনো শর্তের উপর নির্ভর না করে কার্য উৎপন্ন করে। তাই যে অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা শর্তান্তরহীন সেই ঘটনাটি হল কারণ।
তাই বলা যায় গুণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের নিয়ত অপরিবর্তনীয় শর্তান্তরহীন অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা।
২। কারণের বিভিন্ন প্রকার অর্থ উদাহরণ-সহ ব্যাখ্যা করো।
কারণ কথাটি সাধারণত তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। সেগুলি হল- আবশ্যিক শর্ত, পর্যাপ্ত শর্ত এবং আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্ত।
আবশ্যিক শর্ত:
যদি দুটি ঘটনার সম্বন্ধ এমন হয় যে, যাদের প্রথমটি না ঘটলে দ্বিতীয়টি ঘটে না, এমনকি প্রথমটি ঘটলেও দ্বিতীয়টি নাও ঘটতে পারে তাহলে প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির আবশ্যিক শর্ত বলা হবে।
সাংকেতিক আকার: ধরা যাক, ‘ক’ এবং ‘খ’ হল দুটি ঘটনা।
'ক' না ঘটলে 'খ' ঘটে না। 'ক' ঘটলে 'খ' নাও ঘটতে পারে। অতএব, 'ক' হল 'খ'-এর আবশ্যিক শর্ত।
উদাহরণ: সূর্যের আলো গাছের বৃদ্ধির আবশ্যিক শর্ত। কেন-না সূর্যের আলো না থাকলে গাছের বৃদ্ধি হয় না। তবে সূর্যের আলো থাকলেও গাছের বৃদ্ধি নাও হতে পারে। গাছের বৃদ্ধির জন্য সূর্যের আলোর সঙ্গে পরিমাণ মতো জল, পরিচর্যা ইত্যাদিরও প্রয়োজন হয়।
পর্যাপ্ত শর্ত: যদি দুটি ঘটনা এমনভাবে সম্বন্ধযুক্ত হয় যে, প্রথমটি ঘটলে দ্বিতীয়টি অনিবার্যভাবে ঘটে, আবার প্রথমটি না ঘটলেও দ্বিতীয়টি ঘটতে পারে তাহলে প্রথম ঘটনাটি দ্বিতীয় ঘটনার পর্যাপ্ত শর্ত হবে।
সাংকেতিক আকার: ধরা যাক, ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি ঘটনা।
'ক' ঘটলে 'খ' ঘটে। 'ক' না ঘটলেও 'খ' ঘটতে পারে। অতএব, 'ক' হল 'খ'-এর পর্যাপ্ত শর্ত।
উদাহরণ: জলপান তৃষ্ণা নিবারণের পর্যাপ্ত শর্ত। জলপান করলে তৃষ্ণা নিবারিত হবেই। আবার জলপান না করলেও তৃষ্ণা নিবারিত হতে পারে। যেমন- ফলের রস, কোল্ডড্রিংক ইত্যাদি পান করেও তৃষ্ণা নিবারণ করা যায়।
আবশ্যিক পর্যাপ্ত শর্ত: যদি দুটি ঘটনার সম্বন্ধ এমন হয় যে, এদের প্রথমটি না ঘটলে দ্বিতীয়টি ঘটে না এবং প্রথমটি ঘটলে দ্বিতীয়টি ঘটে তাহলে প্রথম ঘটনাটিকে দ্বিতীয় ঘটনার আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্ত বলা হবে।
সাংকেতিক আকার: ধরা যাক, ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি ঘটনা।
'ক' না ঘটলে 'খ' ঘটে না।ন 'ক' ঘটলে 'খ' ঘটে। 'ক' হল 'খ'-এর আবশ্যিক পর্যাপ্ত শর্ত।
উদাহরণ: ভিজে জ্বালানীতে অগ্নিসংযোগ করাই হল ধোঁয়া সৃষ্টির আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্ত। কেন-না ভিজে জ্বালানীতে অগ্নিসংযোগ না করলে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় না। আর ভিজে জ্বালানীতে অগ্নিসংযোগ করলেই ধোঁয়া সৃষ্টি হয়।
সুতরাং কারণ কথাটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। কখনও আবশ্যিক শর্ত অর্থে, কখনও পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে আবার কখনও আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে।
৩। বহুকারণবাদ সবিচার আলোচনা করো।
বহুকারণবাদ: যে মতবাদ অনুযায়ী একটি কার্য একাধিক কারণ থেকে উৎপন্ন হয় সেই মতবাদ হল বহুকারণবাদ। অর্থাৎ বহুকারণবাদ অনুসারে একই কার্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণের দ্বারা উৎপন্ন হতে পারে। যেমন-মৃত্যু নামক কার্যটি দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, জলে ডুবে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে হতে পারে। সংক্ষেপে বলা যায়, ‘ক’ অথবা ‘খ’ অথবা ‘গ’ এদের যে-কোনো একটি ‘ঘ’-কে উৎপন্ন করতে পারে।
মিল, বেইন প্রমুখ তর্কবিদ বহুকারণবাদের সমর্থক। মিল তাঁর A System of Logic গ্রন্থে বলেছেন-একই কার্য সবসময় একই কারণের সঙ্গে যুক্ত থাকবে কিংবা একটি ঘটনা বারবার একইভাবে ঘটবে, এ কথা সত্য নয়। একটি ঘটনা বিভিন্নভাবে উৎপন্ন হতে পারে।
সমালোচনা: বহুকারণবাদ মতবাদটি সাধারণভাবে সত্য বলে মনে হয়। কিন্তু কারণের বৈজ্ঞানিক অর্থ গ্রহণ করলে অর্থাৎ কারণকে আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্তে গ্রহণ করলে বহুকারণবাদ ভ্রান্ত বলে প্রমানিত হয়। যেসকল যুক্তির সাহায্যে বহুকারণবাদ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয় সেগুলি হল-
প্রথমত: বহুকারণবাদে কার্যকে সাধারণ অর্থে ব্যবহার করে কারণকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কারণের মতো কার্যকেও যদি বিশেষভাবে প্রয়োগ করা যায় তাহলে বহুকারণবাদের ত্রুটি ধরা পড়ে। সেইক্ষেত্রে একটি কার্যের একটি কারণই স্বীকার করতে হয়, একাধিক কারণ স্বীকার করার প্রয়োজন হয় না। যেমন-মৃত্যুরূপ কার্যকে সাধারণভাবে গ্রহণ করে তার কারণস্বরূপ বিশেষ বিশেষ কারণের (যথা-জলে ডোবা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি) উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন মৃত্যুকে সাধারণভাবে গ্রহণ না করে যদি বিশেষভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে বিশেষ কারণের দ্বারা উৎপন্ন মৃত্যুর স্বরূপ বিশেষ রকমের হবে। জলে ডুবে মৃত্যু হলে মৃতদেহের লক্ষণ একরকম। আবার বিষপানে মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহের লক্ষণ অন্যরকম ইত্যাদি। সুতরাং বিশেষ বিশেষ কারণের দ্বারা উৎপন্ন মৃত্যুর স্বরূপও বিশেষ হবে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন কারণের দ্বারা উৎপন্ন কার্যও ভিন্ন ভিন্ন। সেইক্ষেত্রে বহুকারণবাদ ভুল প্রমাণিত হয়।
দ্বিতীয়ত: কারণকে বিশেষভাবে গ্রহণ না করে যদি সাধারণভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে একটি কার্যের একটি কারণ স্বীকৃত হয়। ফলে বহুকারণবাদ ভ্রান্ত মতবাদে পরিণত হয়। মৃত্যু নামক কার্যের বিশেষ বিশেষ কারণের উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কারণকে বিশেষ অর্থে গ্রহণ না করে সাধারণ অর্থে গ্রহণ করলে দেখা যাবে যে প্রত্যেক মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটিমাত্র কারণ সাধারণভাবে উপস্থিত। এই সাধারণ কারণটি হল ‘হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া’। অর্থাৎ একই কার্য ‘মৃত্যু’ সকল ক্ষেত্রে একটি কারণ ‘হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার’ দ্বারা উৎপন্ন হয়। এইভাবে বহুকারণবাদের ত্রুটি ধরা পড়ে।
৪। আবশ্যিক শর্তরূপে কারণ আলোচনা করো। কোন্ কর্বিদ কারণ কে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং কেন?
অথবা, কারণকে কোন্ অর্থে গ্রহণ করলে বহুকারণবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় তা ব্যাখ্যা করো।
আবশ্যিক শর্তের সংজ্ঞায় বলা হয়, আবশ্যিক শর্ত হল সেই শর্ত যেখানে ঘটনাটি না ঘটলে বিশেষ কার্যটি ঘটে না, কিন্তু ঘটনাটি ঘটলেও বিশেষ কার্যটি নাও ঘটতে পারে। কারণকে যদি আবশ্যিক শর্তরূপে গ্রহণ করা হয় তাহলে বলতে হয় কারণ হল এমন ঘটনা যা নিয়তই কার্যের পূর্বগামী। কিন্তু কার্য কারণের নিয়ত অনুগামী ঘটনা নয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কার্য থেকে কারণ অনুমান করা যায় কিন্তু কারণ থেকে কার্যকে অনুমান করা যায় না। যেমন- অক্সিজেন হল দহন কার্যের কারণ-এখানে কারণটিকে আবশ্যিক শর্তরূপে গ্রহণ করা হয়েছে। কেন-না দহন কার্য দেখে আমরা কারণরূপ অক্সিজেন অনুমান করতে পারি। কিন্তু অক্সিজেনের থেকে আমরা দহন কার্যের অনুমান করতে পারি না। তাই অক্সিজেনের উপস্থিতি হল দহন কার্যের আবশ্যিক শর্ত।
তর্কবিদ মিল ‘কারণ’ কথাটিকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন।
মিলের মতে পূর্ববর্তী কোনো ঘটনা বা ঘটনাগুলির সংমিশ্রণের অব্যবহিত পরে যদি অন্য একটি ঘটনা অপরিবর্তনীয়ভাবে এবং শর্তান্তরহীনভাবে ঘটে তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং অনুবর্তী ঘটনাকে কার্য বলা হবে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী কার্য কারণের নিয়ত অনুবর্তী ঘটনা অর্থ্যাৎ যা ঘটলে কোনো কার্য নিয়ত ঘটে তা ওই কার্যের কারণ।
পর্যাপ্ত শর্তে কী ঘটলে কী ঘটবে তা আলোচনা করা হয়। কিন্তু কী না ঘটলে কী ঘটবে না তা বলা হয় না। তাই মিল কারণকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন। আর কারণকে পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করে তিনি বহুকারণবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই মতবাদে বলা হয় একটি কার্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণের দ্বারা উৎপন্ন হয় অর্থাৎ একই কার্যের বহুকারণ থাকতে পারে। যেমন-বৃষ্টি হলে মাটি ভিজবেই। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়াও অন্য কারণে মাটি ভিজতে পারে। যেমন-কেউ জল ফেলে দিতে পারে, কুয়াশা পড়ে মাটি ভিজতে পারে ইত্যাদি। তাই বলা যায় একটি কার্যের একাধিক পর্যাপ্ত শর্ত বা কারণ থাকতে পারে।
৫। শক্তির অবিনশ্বরতার নিয়ম বলতে কী বোঝায়? বহুকারণবাদ ও বহুকারণ সমন্বয় কি এক? ব্যাখ্যা করো।
শক্তির অবিনশ্বরতার নিয়ম: কারণ ও কার্যের সমানতার ভিত্তিরূপে শক্তির অবিনশ্বরতা নিয়মের উল্লেখ পাওয়া যায়। শক্তির অবিনশ্বরতা নিয়ম অনুযায়ী এই বিশ্বে যে পরিমাণ শক্তি আছে তা অবিনশ্বর। শক্তির পরিমাণের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। শক্তি কেবল রূপান্তরিত হতে পারে। যেমন-আলোক, বিদ্যুৎ, তাপ ইত্যাদি শক্তির একটি আর একটিতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের ফলে শক্তির পরিমাণের কোনো তারতম্য ঘটে না।
কারণ যখন কার্যে পরিণত হয় তখন কারণের মধ্যে যে পরিমাণ শক্তি বর্তমান থাকে, কার্যের মধ্যেও সেই পরিমাণ শক্তি থাকে। এইজন্য বলা হয় পরিমাণের দিক থেকে কারণ কার্যের সমান।
বহুকারণবাদ ও বহুকারণ সমন্বয়: বহুকারণবাদ ও বহুকারণ সমন্বয় সমার্থক নয়। বহুকারণবাদ হল এমন একটি মতবাদ যেখানে বলা হয় কোনো একটি ঘটনা (কার্য) বা ফলাফল একাধিক কারণের ফলে ঘটে। অর্থাৎ বলা যায় বহুকারণবাদে একটি কার্যের একাধিক কারণকে স্বীকার করা হয়। যেমন-একজন শিক্ষার্থীর খারাপ রেজাল্টের জন্য তার পারিবারিক চাপ, স্বাস্থ্য সমস্যা, শিক্ষক অনুপস্থিতি-সহ একাধিক বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটি কারণ হতে পারে। অন্যদিকে বহুকারণ সমন্বয় হল যখন একাধিক কারণ একত্রে মিলিত হয়ে একটি মিশ্র কার্য উৎপন্ন করে তখন সেই মিশ্র কার্যের কারণকে বলা হয় বহুকারণ সমন্বয়। যেমন-একটি ছাত্রের ভালো রেজাল্টের কারণ হিসেবে তার ভালো পড়াশোনা, পরিবারের সহায়তা, শিক্ষকদের সহায়তা, প্রভৃতি বিষয় একত্রিত হয়ে ভালো রেজাল্ট নামক কার্যটি ঘটেছে। এটিই বহুকারণ সমন্বয়। তাই বহুকারণবাদ ও বহুকারণ সমন্বয় এক নয়।
৬। কোন্ তর্কবিদ কারণকে আবশ্যিক পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং কেন? বস্তুর অবিনশ্বরতার নিয়ম বলতে কী বোঝায়?
কারণকে আবশ্যিক পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ: তর্কবিদ আই এম কোপি ‘কারণ’-কে আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্ত অর্থে গ্রহণ করেছেন।
কোপি-র মতে ‘কারণ’ হল কার্যের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা এবং ‘কার্য’ হল কারণের নিয়ত অনুবর্তী ঘটনা। এর থেকে বোঝা যায় যে কারণ না ঘটলে কার্যটি ঘটে না এবং কারণ ঘটলে কার্যটি ঘটবেই। অর্থাৎ কোপির মতে একটি বিশেষ ঘটনা কারণ হিসেবে একটি বিশেষ কার্যকেই উৎপন্ন করে। এইজন্য কোপির মতকে বলা হয় এককারণবাদ।
আবশ্যিক শর্তরূপে কারণ হল কার্যের নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। সেইক্ষেত্রে একটি কার্যের একাধিক আবশ্যিক শর্ত বা কারণ থাকতে পারে। আবার পর্যাপ্ত শর্তরূপে কারণ বলতে বোঝায় কার্য কারণের নিয়ত অনুবর্তী ঘটনা। সেইক্ষেত্রেও একটি কার্যের একাধিক পর্যাপ্ত শর্ত বা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু কারণকে যখন আবশ্যিক-পর্যাপ্ত শর্তরূপে গ্রহণ করা হয় তখন যেমন কারণ কার্যের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা বোঝায় তেমনই কার্য কারণের নিয়ত অনুগামী ঘটনাও বোঝায়। ফলে সেইক্ষেত্রে একটি কার্যের একাধিক কারণ সূচিত হয় না, একটি কার্যের একটি কারণই সূচিত হয়।
বস্তুর অবিনশ্বরতার নিয়ম: কারণের পরিমাণগত লক্ষণের ভিত্তিস্বরূপ যে দুটি মৌল নীতির উল্লেখ পাওয়া যায় তার মধ্যে বস্তুর অবিনশ্বরতা নিয়মের মূলকথা হল-এই বিশ্বে যে সমস্ত বন্ধু আছে তার পরিমাণ অবিনশ্বর। বস্তু এক আকার থেকে পরিবর্তিত হয়ে নতুন আকার লাভ করতে পারে। কিন্তু বস্তুর পরিমাণের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন-নির্দিষ্ট পরিমাণ হাইড্রোজেনের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন মেশালে জল উৎপন্ন হয়। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন বায়বীয় পদার্থ। আর এদের নির্দিষ্ট পরিমাণে মেশানোর পর যে জল উৎপন্ন হয় তা হল তরল পদার্থ। এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ এবং উৎপন্ন জলের পরিমাণ সমান।