স্বদেশপ্রেম রচনা 400+ শব্দে

স্বদেশপ্রেম রচনা

স্বদেশপ্রেম রচনা
স্বদেশপ্রেম রচনা

ভূমিকা

মহাকবি শেক্সপিয়ার তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘জুলিয়াস সিজার’-এ বলেছেন, ‘কে এমন নরাধম আছেন যে তার দেশকে ভালোবাসেন না?’ শিশু জন্মে যে দেশের মাটি, বাতাস, আলোর স্পর্শ পায় সেই দেশ তার মাতৃভূমি-স্বদেশ।

আমার স্বদেশ

আমরা ভারতবাসী। ভারত আমাদের মাতৃভূমি। আমরা আমাদের দেশকে যে ভালোবাসি তার সাক্ষী ইতিহাস, পুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থ। বিষ্ণুপুরাণে উল্লেখ আছে যে “সমুদ্রের উত্তরে এবং হিমাদ্রি হিমালয়ের দক্ষিণে যে ‘বর্ষ’ অবস্থিত, তার নাম ভারতবর্ষ। এই বর্ষে ভারতের সন্ততিরা বাস করে।” ‘বর্ষ’ কথার অর্থ দেশ। মহাকবি বায়রন ও শেক্সপিয়ার দেশকে ‘কান্ট্রি’ নামে অভিহিত করেছেন। আমাদের দেশ অর্থাৎ ভারতবর্ষের প্রতি আমাদের যে ভালোবাসা তাই হল স্বদেশ প্রেম। দেশপ্রেমের জোয়ার অনেকসময় দেশের যে কোন অংশ থেকে ও উৎসারিত হতে পারে।

যেমন বাঙ্গালিদের মনে বঙ্গজননীর রূপের অনুভূতি যে বেশি তা অনুভব করা যায়, তাতে ভারতজননীর রূপের গুরুত্ব কমে যায় না। ভারতজননীর রূপ তখনই সার্থক হয় যখন ‘পাঞ্জাব-সিন্ধু- গুজরাট-মারাঠা-দ্রাবিড়-উৎকল-বঙ্গের’ রূপ আমরা অখণ্ড ভারতবর্ষ হিসাবে মনে করি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন ধর্ম, পোশাকেরও বিভেদ আছে। আমরা যখন নিজেদের ভাবি ভারতবাসী তখন বিভেদ ভুলে সকলে ভারতমায়ের সন্তান, কোনো বিভেদ নেই, সকলে ভাই-বোন। আমরা বিশাল দেশের বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হওয়ায় নিজেরা সেই গৌরবের অধিকারী।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ

দেশপ্রেম নিছক কোনো তত্ত্ব নয়, প্রকৃত অর্থে প্রেম বা ভালোবাসা। এই প্রেম উৎসারিত হয় হৃদয় থেকে, শ্রদ্ধা-ভালবাসা ও অনুরাগে তা অভিষিক্ত, সন্তান যেমন তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধায় নিজের মস্তক অবনত করে তেমনি দেশমায়ের অবমাননা, লাঞ্ছনা বা পরাধীনতা যে কোন ভারতবাসী মেনে নিতে পারেন না।

দেশপ্রেমের ঐতিহাসিক নিদর্শন

কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছেন, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি। রাণা প্রতাপ, শিবাজির দেশপ্রেমের কথা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে রানি শিরোমনি, ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরার দেশপ্রেমের কথা আজও কেউ ভুলতে পারেননি। দেশকে বিদেশীর শাসন মুক্ত করার জন্য অগ্নিযুগের তরুণ-তরুণীদের মরণপণ সংগ্রাম আজও দেশপ্রেমের নিদর্শন হিসাবে অমর হয়ে আছে। কবি লিখেছেন, স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়! দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে কে পরিবে পায়। দেশকে ভালোবেসে দেশপ্রেমিকদের স্বদেশ মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট দেশ স্বাধীন হওয়ায়।

স্বদেশ গঠন

স্বদেশ প্রেম যথার্থ মহিমায় প্রস্ফুটিত হয় দেশ গঠনের মাধ্যমে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে। ক্ষুধার্তকে যদি আমরা অন্ন না যোগাতে পারি, দুঃস্থকে যদি সাহায্য না করতে পারি, দেশের উন্নতির কথা না চিন্তা করি, স্বদেশবাসীকে নিজের ভাই-বোন বলে না ভাবি তাহলে দেশপ্রেম ব্যর্থ হবে।

উপসংহার

স্বদেশপ্রেম হল এক মহান আদর্শ। সেই আদর্শকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করাও মহান-কঠিন ব্রত। নিঃস্বার্থভাবে দেশকে ভালোবাসার মাধ্যমে স্বদেশ প্রেমের মূর্তরূপ প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুন – ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment