বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 বাংলা

সূচিপত্র

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 বাংলা চতুর্থ সেমিস্টার | বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর

১। ‘পট’ বলতে কী বোঝানো হয়? এই শিল্পধারাটির একটি পরিচয় মূলক বিবৃতি প্রস্তুত করো।

পট: দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে বাংলায় পটচিত্র প্রসার লাভ করে। ‘পট’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ চিত্র। কাগজ আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত পট হিসেবে কাপড়ই ব্যবহৃত হত। পট কাপড় বা কাগজের যারই তৈরি হোক না কেন, তার উপর অঙ্কিত চিত্রই পটচিত্র। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই পট ও পটশিল্পীদের উল্লেখ পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বুদ্ধের জীবনী ও জাতকের গল্প অবলম্বনে পট-প্রদর্শন করত বলে জানা যায়। এ ছাড়াও সপ্তম শতকের গোড়ায় রচিত ‘হর্ষচরিত’-এ এই পটুয়াদের উল্লেখ পাওয়া যায়।

লোকশিল্পের উপকরণ: পট তৈরি হত কাপড়ের উপর আঠামিশ্রিত কাদাগোলা কিংবা গোবরমিশ্রিত কাদাগোলা লেপনের মাধ্যমে, তারপর সেটি শুকিয়ে গেলে তাতে খড়িমাটি লেপনের মাধ্যমে চিত্রাঙ্কনের উপযুক্ত করে রং দিয়ে এর উপর কাজ করা হত। পটশিল্পীরা পটুয়া, চিত্রকর প্রভৃতি নামে লোকসমাজে পরিচিত। লোকসংস্কৃতির এই বিশেষ রীতি ধর্মনিরপেক্ষ এক সংস্কৃতিবোধের পরিচয়বাহী।

পটশিল্পের ধারা: পটুয়ারা যে পটচিত্র নির্মাণ করতেন তাতে উপস্থাপিত হত লোককাহিনি কিংবা পুরাণাশ্রিত কাহিনি। আমাদের দেশে মূলত বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান গেয়ে সেই কাহিনি বর্ণনা করত। ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠানের বিনোদন ছিল এই ‘পটের গান’। গায়েনরা গানগাইতেন চণ্ডীলীলা, রামায়ণ, মহাভারত, পদ্মাপুরাণ, গাজীর পট, সত্যপীরের কথা প্রভৃতি অবলম্বন করে। ভারতের বহুস্থানে এই পটচিত্রের অস্তিত্ব থাকলেও অবিভক্ত বাংলায় এর যে নিজস্ব শিল্পসুষমা তা অন্যত্র ছিল না। পূর্ববঙ্গের গাজীর পট ও সত্যপীরের পট, এপার বাংলার কালীঘাটের পট প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

২। বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। অথবা, বাঙালির চিত্রকলা চর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক তথা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পথপ্রদর্শক।

চিত্ররীতির প্রচার ও প্রসার: পাশ্চাত্য চিত্ররীতির প্রতি আকর্ষণে অবনীন্দ্রনাথ ইতালীয় শিল্পী গিলার্ডি, ইংরেজ শিল্পী পামার এবং জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে প্রথাগত ও নিয়মানুগ চিত্ররীতির শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিল্পচর্চার প্রথম পর্যায়ে ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেন্টিং, জলরং বিবিধ মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন করেন। এরপর আইরিশ ইল্যুমিনেশন ও মোগল মিনিয়েচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ফলে তাঁর শিল্পীসত্তায় দোলাচলতা দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বৈঘ্নব পদাবলিকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে তিনি আত্মবিকাশের পথ খুঁজে পান। চিত্রকলার জগতে প্রাচ্য শিল্পরীতিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। শুধু চিত্র অঙ্কনই নয় শিল্পকলার বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ও আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য, তার যথাযথ প্রচারের জন্য কয়েকজন গণ্যমান্য বাঙালি ও ইংরেজ শিল্পরসিককে একত্রিত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’।

শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য: জলরঙে ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ ছবিকে বারবার ধুয়ে নতুন রূপ দিতেন অবনীন্দ্রনাথ। এ ছাড়া তাঁর ছবিতে পায় তাঁর শিল্পচর্চার দক্ষতা। যা জাপানি ‘ওয়াশ’ পদ্ধতির থেকে আলাদা। মোগল মিনিয়েচারের প্রভাবও ছিল। তাঁর ছবির মূল প্রাণশক্তি ছিল অনুভূতি গ্রাহ্যতা, যা রঙের পেলব ব্যবহারে বাত্ময় হয়ে উঠত।

শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা: বৈঘ্নব পদাবলিকেন্দ্রিক বিখ্যাত চিত্র ‘শ্বেত অভিসারিকা’-র পাশাপাশি ‘কৃষ্ণলীলা সিরিজ’, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘ভারতমাতা’, ‘অশোকের রানি’, ‘দেবদাসী’, ‘অন্তিম শয্যায় শাহজাহান’ প্রভৃতি চিত্রগুলিও তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

৩। বাংলার চিত্রকলার ধারাপথে শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। ৫

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাঙ্কন শিক্ষাগ্রহণের সূচনা আর্ট স্কুলের শিক্ষক হরিচরণ বসুর কাছে হলেও সেই শিক্ষার সার্বিক বিকাশ ঘটে তাঁর পরিণত বয়সে। পাশ্চাত্য রীতির জলরং চিত্রাঙ্কনে তাঁর প্রভূত দক্ষতা থাকলেও পরে তিনি কালি, তুলি ও ওয়াশের কাজেও পরিণত হয়ে ওঠেন। এই ব্যাপারে তাঁর শিক্ষাগুরু ছিলেন জাপানি চিত্রকর টাইকান আর হিসিদা। এই পদ্ধতিতে তাঁর বারোটি কাকের ছবি নিয়ে টুয়েলভ ইংক স্কেচেস’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালে। সিল্যুটে ছবি আঁকার মাধ্যমে আলো-ছায়ার রহস্যময়তা ফুটিয়ে তোলা ছিল গগনেন্দ্রনাথের ছবির আরেকটি বিশেষত্ব। এ ছাড়া তাঁর ছবিতে পশ্চিমি কৌণিকতা, ছবির স্পেসকে জ্যামিতিক রীতিতে ভেঙে নেওয়া ইত্যাদি স্বতন্ত্র বিষয়ের সুদক্ষ প্রয়োগ দেখা যেত। তাঁর চিত্র বাস্তবধর্মী হওয়ায় ফরাসি শিল্পপদ্ধতি ও উপাদানকে তিনি বঙ্গশিল্পে প্রয়োগ করতে উদ্যোগী হন।

তৎকালীন কলকাতার দুই শ্রেষ্ঠ সাময়িক পত্রিকা ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’-তে ব্যঙ্গচিত্র এঁকে গগনেন্দ্রনাথ সুনাম অর্জন করেন। ‘নবহুল্লোড়’, ‘অদ্ভুতলোক’ প্রভৃতি গ্রন্থে তাঁর বহু ব্যঙ্গচিত্র মুদ্রিত হয়। তাঁর ওয়াশ পদ্ধতিতে আঁকা ছবিগুলি চিত্ররসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি ‘বেঙ্গল আর্ট স্কুল’-এর প্রতিভাধর চিত্রকর। ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ, ব্যারিস্টারদের স্বদেশিয়ানা, চরকা বনাম পৃথিবীর সভ্যতা প্রভৃতি বিষয়ে আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের জন্য একজন কার্টুন চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাত ছিলেন। বলা বাহুল্য, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক ভারতীয় শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ।

৪। বাংলা শিল্পকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবীর কৃতিত্ব আলোচনা করো। ৫

সুনয়নী দেবীর কৃতিত্ব: বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারে জন্মগ্রহণ এবং অসামান্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ ঠাকুরবাড়ির কন্যা সুনয়নী দেবীকে রবীন্দ্রনাথের মতোই স্বশিক্ষিত শিল্পী করে তুলেছিল। তাঁর পিতা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সৌদামিনী দেবী। সুনয়নী ছোটোবেলা থেকেই নিজেকে চিত্রচর্চায় নিযুক্ত করেন এবং প্রথাগতভাবে আঁকা না শিখেও চিত্রাঙ্কন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনিই প্রথম ভারতীয় নারী চিত্রশিল্পী। নব্যবঙ্গীয় শিল্পচর্চার খুব কাছাকাছি থেকেও সেই শিল্পরীতিকে অনুসরণ না করে সুনয়নী তাঁর অনুপ্রেরণা খুঁজে নিয়েছিলেন বাংলার চিরায়ত লৌকিক শিল্পের মধ্যে। তাই তাঁর ছবিতে দেখা যায় দৃঢ় স্বাজাত্যবোধ ও স্বদেশিয়ানা।

চিত্রকলাসমূহ: সুনয়নী দেবীর কোনো ছবিতেই রঙের নীচে পেনসিলের দাগ পাওয়া যায়নি। শুধু রংতুলির অভাবনীয় প্রয়োগে তিনি চিত্রাঙ্কন করেছেন। তিরিশ বছর বয়সে তিনি পাকাপাকিভাবে চিত্রাঙ্কনচর্চা শুরু করেন। অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে কেবল প্রাথমিক দুই-একটি বিষয়ে শিক্ষা দেন, যেমন- মাপজোখ ও কাগজ ভিজিয়ে ছবি আঁকা। মূলত জলরং-এর মাধ্যমে কৃষ্ণলীলা ও বলরাম এবং ‘মহাভারত’-এর বিষয়ানুগ চিত্রচর্চাতেই তিনি মনোনিবেশ করেন। তাই তাঁর চিত্রের প্রধান বিষয় দেবদেবীর চিত্ররূপায়ণ। ‘ওরিয়েন্টাল সোসাইটি’র প্রদর্শনীতে কয়েকবার তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়। পুত্রের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে তাঁর কয়েকটি ছবি প্রদর্শিত হলে ‘ভগবতী’ ছবিটি সেখানে বিক্রি হয়। মাদ্রাজ, ত্রিবাঙ্কুর ও লখনউ আর্ট গ্যালারিতে তাঁর কয়েকটি ছবি রক্ষিত আছে। ‘মা যশোদা’, ‘বাউল’, ‘নেপথ্যে’, ‘রাধা’, ‘অর্ধনারীশ্বর’, ‘দান’ তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত চিত্র। পটশিল্পের ক্ষেত্রে কল্পনা ও বাস্তবতার সমন্বয়সাধন তাঁর শিল্পীজীবনের অনন্যকীর্তি।

৫। বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান সম্পর্কে যা জানো লেখো।

যামিনী রায়ের অবদান: বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করায় গ্রাম্য পরিবেশ, প্রকৃতি ও মৃৎশিল্পীদের সংস্পর্শ যামিনী রায়কে প্রভাবিত করে।

চিত্রশিল্প শিক্ষা: কলকাতা আর্ট কলেজে পড়াশোনার সময় ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির স্বাভাবিকতাবিরোধী রীতি, ফরাসি ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পচর্চা শুরু করলেও মৌলিকতার জন্য পটচিত্রে আকৃষ্ট হন।

চিত্রশিল্পচর্চা: বাংলার লোকশিল্পের প্রতি গভীর আকর্ষণে যামিনী রায় মেদিনীপুর, বেলিয়াতোড়, কালীঘাট প্রভৃতি স্থান থেকে পট সংগ্রহ করে চিত্রভাষা অর্জন করেন। ভারতীয় চিত্রকলায় তাঁর ছবির ভাব-বিষয়-অঙ্কনরীতি সমকালীন অন্যান্য শিল্পীদের থেকে স্বতন্ত্র ছিল।

চিত্রবৈশিষ্ট্য: যামিনী রায়ের ছবির বিশেষত্ব হল তা, সমতল জলরঙে আঁকা। তাঁর চিত্রিত ছবিতে মানুষজন, পশুপাখির অবস্থান পূর্ণ পট জুড়ে। এ ছাড়া চরিত্রদের আঁকার ক্ষেত্রে বর্ডারের ব্যবহার করতেন তিনি।

ছবির বিষয়: যামিনী রায়ের ছবির বিষয় ছিল রামায়ণ-মহাভারতের নারী ও পুরুষ, জিশু, আদিবাসী সমাজ, বাউল-বৈষ্ণব, পশুপাখি ইত্যাদি।

১৯৫৫ সালে চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য যামিনী রায় ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত হন।

৬। চিত্রকলাচর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর স্থান নিরুপণ করো।

চিত্র কলাচর্চায় নন্দলাল বসুর অবদান: প্রথমে দ্বারভাঙায় ও পরে কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুলে নন্দলাল বসুর বিদ্যার্জন। শিশুকালে কুমোরদের দেখে মূর্তি গড়ে চিত্রকলায় তাঁর হাতেখড়ি। পরবর্তী সময়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও হ্যাভেল সাহেবের সহায়তায় আর্ট স্কুলে ভরতি হন।

চিত্রচর্চা ও কর্মজীবন: রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৯২০ সালে তিনি শান্তিনিকেতনের কলাভবনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠান শিল্পশিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ভারতীয় শিল্পশিক্ষায় আউটডোর স্টাডি বা নেচার স্টাডির সূচনা তাঁর হাত ধরেই। গুরু অবনীন্দ্রনাথের স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির পাশাপাশি ঘন জলরঙের টেম্পেরার কাজও তিনি শুরু করেন। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তিনি চারপাশের বহমান বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিতেন। নন্দলাল বসুর ছবিতে গ্রামীণ প্রকৃতি, সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবন সুনিপুণ দক্ষতার সঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে।

চিত্রসম্ভার: শান্তিনিকেতনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’, ‘সিদ্ধার্থ’, ‘সতী’, ‘কর্ণ’ ইত্যাদি ছবি আঁকেন। কলাভবনে যোগ দেওয়ার পরে দিগন্তবিস্তৃত প্রান্তর, খোয়াই, মাঠে বিচরণরত মোষ ইত্যাদি ছিল তাঁর ছবির বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি ‘সহজপাঠ’-এর অলংকরণ, ‘গান্ধিজি’ ইত্যাদি। ভারতীয় সংবিধানের অলংকরণ, ভারতরত্ন ও পদ্মশ্রী পুরস্কারের নকশা তাঁর অনবদ্য কীর্তি। তিনি ১৯০৯ সালে অজন্তা গুহাচিত্রের নকল করার উল্লেখযোগ্য কাজ করেন। ‘শিল্পচর্চা’ ও ‘রূপাবলী’ তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য শিল্পগ্রন্থ।

শুধু নিজস্ব শিল্পচর্চাই নয় নন্দলাল শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন অনন্য। তাঁর ছাত্রদেরই তিনি উৎসাহ দিতেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য, যা পরবর্তীতে তাদের শিল্পগুণকে সমৃদ্ধ করে।

৭। বাংলা শিল্পকলার ইতিহাসে শিল্পী অতুল বসুর কৃতিত্ব আলোচনা করো। ৫

শিল্পকলায় অতুল বসুর কৃতিত্ব: চিত্রকর অতুল বসু ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় শিল্পীমহলে তিনি এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিকৃতি শিল্পী। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি কলকাতার টেকনিক্যাল স্কুলে আঁকা শিখতে আসেন। পরে ‘জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি’ ও ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্টস্’-এর ছাত্র হিসেবে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ও পারসি ব্রাউনের সান্নিধ্য লাভকরেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি’ লাভ করে লন্ডনের ‘রয়াল অ্যাকাডেমি’র শিক্ষার্থী হন। সেখানে তাঁর বিরল কৃতিত্ব ‘আইভরি’ পুরস্কার লাভ। লন্ডনে তিনি ছিলেন ‘সিকার্ট’-এর শিষ্য। ১৯৩৩ সালে দেশে ফিরে তিনি ‘অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস্’ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোক্তা হন। তিনি পাশ্চাত্যরীতিতে ছবি আঁকতেন। প্রতিকৃতি শিল্পী হিসেবেই তিনি অধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর অজস্র শিল্পসম্ভারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল স্কেচ-এ অঙ্কিত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়-এর আবক্ষ প্রতিমূর্তি ‘রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার’। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভূমিকায় নোয়াখালি অভিযানের প্রেক্ষিতে ‘গান্ধিমূর্তি’ রচনাও তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পনির্মাণ। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে তাঁর আঁকা বহু প্রতিকৃতি রক্ষিত আছে। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে আঁকা চিত্রগুলি তাঁর মূল্যবান কাজ। নিসর্গচিত্রেও তাঁর সমান দক্ষতা ছিল। চিত্রকর্মই ছিল তাঁর একমাত্র জীবিকা। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘Verified Perspective’, যার প্রকাশক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

৮। বঙ্গদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের অবদান ও স্বকীয়তা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

রামকিঙ্কর বেইজের অবদান: নন্দলাল বসুর সাহচর্যে প্রশিক্ষিত ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজ তাঁর অসামান্য শিল্পচর্চার মাধ্যমে সর্বপ্রথম আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্পকে নিজের ভাস্কর্যে প্রয়োগ করেছিলেন।

শৈশব থেকেই দেবদেবীর চিত্রাঙ্কনে, পুতুল গড়ায়, পোস্টার লেখায়, থিয়েটারের মঞ্চসজ্জায় তাঁর সহজাত প্রতিভার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সাহচর্যে তিনি শান্তিনিকেতনে এলে নন্দলাল বসুর সান্নিধ্যে চিত্রকলায় প্রথাগত শিক্ষালাভে ব্রতী হন।

চিত্রকলাচর্চা ও স্বকীয়তা: রামকিঙ্করের শিল্পীসত্তার যথার্থ মুক্তি ঘটে শান্তিনিকেতনে এসে। তাঁর মাথার উপর ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সহায়ক ছিলেন গুরু নন্দলাল বসু ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি আধুনিক ইউরোপীয় শিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাঁর শান্তিনিকেতন জীবনের প্রথম পর্বের ছবিগুলিতে ওয়াশ এবং টেম্পেরা পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়। তাঁর ছবিগুলি মূলত প্রকৃতিকেন্দ্রিক এবং তাদের কিছু কিছু কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতিকৃতি। এ ছাড়াও তাঁর বেশ কিছু ছবিতে চিত্রকল্পের আধিক্য লক্ষ করা যায়। তাঁর অঙ্কিত কয়েকটি বিখ্যাত ছবি হল- ‘পিকনিক’, ‘সোমা’, ‘যোশী’, ‘সামার নুন’, ‘শিলং ল্যান্ডস্কেপ’ প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য: রামকিঙ্করের ছবি অপেক্ষা তাঁর ভাস্কর্য আরও বেশি স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তিনি সিমেন্টের সঙ্গে কাঁকড় মিশিয়ে শান্তিনিকতনে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে অসাধারণ কিছু ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। রামকিঙ্করের ”সুজাতা’ দেখে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ ছাড়া ‘সাঁওতাল পরিবার’, ‘বাতিদান’, ‘ধান ঝাড়া’, ‘কলের বাঁশি’ প্রভৃতি ভাস্কর্যগুলি তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। ভারতের নানাস্থানে তাঁর ছবি ও মূর্তির প্রদর্শনী হয়েছে। বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তাঁর কাজ সংরক্ষিত আছে। ১৯৭০ সালে রামকিঙ্কর ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন।

৯। শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের শিল্পকলাচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫

বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব: প্রখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের শান্তিনিকেতনের সতীর্থ চিত্রকর বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ-নন্দলালের প্রিয় ছাত্র। দৃষ্টিশক্তি বিষয়ক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও নিজগুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য।

সৃজিত চিত্র: শিল্পসৃষ্টিতে তিনি ইতালীয় ও জাপানি প্রভাবপুষ্ট মননকে গভীর প্রজ্ঞায় কাজে লাগিয়েছিলেন। ইতালির মুরাল পরম্পরা ও জাপানি চিত্রকলার প্রভাব ভারতীয় ঘরানার সঙ্গে মিশ্রণে তাঁর চিত্রকে যুগোত্তীর্ণ করেছিল। টেম্পেরা তাঁর প্রিয় শিল্পমাধ্যম হলেও, মুরাল ও তেলরঙে তিনি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাঁর শেষ ভিত্তিচিত্রটি হল বিশ্বভারতীর হিন্দি ভবনের দেওয়ালে আঁকা ৭৭ ফুট বিস্তৃত, ৮ ফুট দীর্ঘ ‘মধ্যযুগের সন্তগণ’ নামে বিরাটাকার ছবিটি। নির্জনতার রূপরাগ তাঁর ছবিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। এক আশ্চর্য নির্লিপ্ততায় তাঁর ছবিগুলিকে বাত্ময় হয়ে উঠতে দেখা যায়।

শিল্পপ্রতিভা: ১৯২৫ সালে তিনি কলাভবনের শিক্ষক এবং সেখানকার মিউজিয়ামের কিউরেটার ও লাইব্রেরিয়ান হন। তাঁর শিল্পপ্রতিভার অসামান্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে শান্তিনিকেতনের কলাভবন ও হিন্দিভবনের ‘ফ্রেস্কো’গুলিতে। ১৯৪৯ সালে তিনি নেপাল সরকারের আহ্বানে গমন করে বিভিন্ন গঠনমূলক শিল্পকর্মে ব্যস্ত থাকেন। ১৯৫৬ সালে তিনি দৃষ্টি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি এমেরিটাস অধ্যাপক হয়ে কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। দৃষ্টি হারিয়েও তাঁর শিল্পকর্ম ব্যাহত হয়নি। ভাস্কর্য, কাগজ কেটে ছবি, টালি দিয়ে মুরালের কাজ তিনি করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মবিভূষণ’ ও পরে বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ লাভকরেন।

১০। বাংলা শিল্পকলার ইতিহাসে দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কৃতিত্ব আলোচনা করো। ৫

দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কৃতিত্ব: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুযোগ্য ছাত্র দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী একাধারে চিত্রকর ও ভাস্কর হলেও, তাঁর প্রবল খ্যাতি একজন ভাস্কর্যশিল্পী হিসেবেই।

শিল্পচর্চা: পরাধীন দেশের মানুষ হিসেবে নিজ কর্মনৈপুণ্যে দেবীপ্রসাদ ইউরোপের ভাস্করদের একচেটিয়া আধিপত্যকে খর্ব করেছিলেন। ব্রোঞ্জ মূর্তিনির্মাণে তিনি দক্ষ হলেও সব মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণেই তিনি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তাঁর ভাস্কর্যগুলির অন্তর্গত শক্তির বিচ্ছুরণ তাঁর প্রতিটি শিল্পকর্মকে খ্যাতিমান করেছিল। মূলত হিরণ্ময় রায়চৌধুরী ও এক ইতালীয় সাহেবের কাছে তাঁর শিক্ষা হলেও, ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয় শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথের কাছে। অবনীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত ‘বেঙ্গল স্কুল’-এর প্রভাব ছিন্ন করে একসময় তিনি পাশ্চাত্যধর্মী শিল্পকর্মের পথসন্ধানী হওয়ায় তাঁর ভাস্কর্যে ‘রিয়ালিজম’-এর প্রবল প্রভাব প্রকাশিত হয়। ১৩০৫-এর মন্বন্তরের কালে অন্নহীন, অনাহারক্লিষ্ট কঙ্কালসার মানুষের ছবি ধরা পড়েছিল দেবীপ্রসাদের চিত্রকলায়।

শিল্পপ্রতিভা: ‘মাদ্রাজ আর্ট কলেজ’-এ তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর অধ্যক্ষপদে আসীন থাকার পর দিল্লির ‘ললিতকলা অ্যাকাডেমি’র চেয়ারম্যান ছিলেন ৭ বছর। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য সংরক্ষিত আছে যথাক্রমে- পাটনায় ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, মাদ্রাজে ‘ট্রায়াম্ফ অব লেবার’ বা ‘শ্রমের জয়যাত্রা’, ত্রিবান্দ্রমে ‘টেম্পল এনট্রি প্রোক্লামেশন’ এবং কলকাতায় ‘মহাত্মা গান্ধি’ ও ‘আশুতোষ মুখোপাধ্যায়’-এর মূর্তি সংরক্ষিত। ‘মাই ফাদার’, ‘যখন শীত আসে’ তাঁর আরও দুটি সাড়া জাগানো ভাস্কর্য। শেষ বয়সে তাঁর সৃষ্ট ভারতের বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের প্রতীক ‘একাদশ মূর্তি’ বিরল প্রতিভার সাক্ষ্য। তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘সুমাত্রা দ্বীপের পাখি’ রানি মেরি প্রভূত অর্থে ক্রয় করেন। দেবীপ্রসাদ কার্টুন আঁকাতেও দক্ষ ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান লাভ করেন।

১১। শিল্পী জয়নুল আবেদিনের শিল্পকলা অন্য এক বাস্তবকে তুলে ধরে- মন্তব্যটি আলোচনা করো। ৫

জয়নুল আবেদিনের শিল্পকলার পরিচয়: ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্রমালার স্রষ্টা শিল্পী জয়নুল আবেদিন অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতায় ‘গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল’ থেকে ১৯৩৩ সালে অঙ্কনশিক্ষা শেষ করেন। তাঁর প্রাথমিক চিত্রচর্চায় মূলত কল্যাণপ্রসূত নিসর্গচিত্র ও উপজাতির মানুষজনই উঠে আসে।

চিত্রভাবনার দ্বিতীয় পর্যায়: জয়নুলের চিত্রভাবনার দ্বিতীয় পর্যায়ে এক সামাজিক ঘূর্ণাবর্ত কাজ করেছিল। ১৯৪৩ সালের মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর তাঁর চেতনাকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দেয়।

কঠোর বাস্তব চিত্র: জয়নুলের অতি বিখ্যাত ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্রমালার বিখ্যাত ছবি ‘ম্যাডোনা ১৯৪৩’, যাতে তিনি কালি আর শুকনো তুলির স্কেচে ফুটিয়ে তোলেন- মৃত্যুপথযাত্রী, দুর্ভিক্ষের শিকার, কঙ্কালসার সন্তানের দ্বারা সদ্যমৃত মায়ের বুক থেকে জীবনসুধা টেনে নেওয়ার অপচেষ্টার দৃশ্য। এই সিরিজের প্রতিটি ছবিই পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়ের ঐতিহাসিক দলিল যা কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি করে মানুষকে। ছবিগুলি রঙের প্রলেপ এবং মননের দীপ্তিতে উজ্জ্বল।

কর্মজীবন: ১৯৪৭ সালে ‘আর্ট ও ক্রাফট কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তিনি সেই শিল্পশিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্ট’-এর ডিন নির্বাচিত হন। – ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলে, কলকাতায় তাঁর একটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পরে লন্ডনের একটি প্রদর্শনীতে ‘দুর্ভিক্ষ’ সিরিজের ছবিগুলি প্রদর্শিত হলে বিদেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

১২। শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫

চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের শিল্পকলা: শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য আর্ট স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকাঠামোর মধ্যে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাননি। তবে তাঁর মধ্যে সহজাত শিল্পীসত্তা ছিল। ছাত্রজীবনে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসার ফলে তাঁর আঁকা ছবিগুলি তাঁর মতাদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১৯৪২-৪৩ সালে আগস্ট আন্দোলন ও দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে অঙ্কিত তাঁর ছবিগুলি শিল্পজগৎকে আলোড়িত করে। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জীবনযন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশের জন্য। পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালের নৌবিদ্রোহ এবং ১৯৪৭ সালের তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের উপরেও তিনি চিত্রসিরিজ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৪৩ সালে মেদিনীপুরের দুর্ভিক্ষচিত্রগুলি শিল্পরসিকদের মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য: ১৯৪৫ সালে চিত্তপ্রসাদ মুম্বইয়ে পার্টির মুখপত্র ‘পিপলস্ ওয়ার’-এ যোগ দেন। মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি প্রভৃতি স্থানে আয়োজিত তাঁর চিত্রপ্রদর্শনীর ছবিগুলি মানুষের মন জয় করতে সমর্থ হয়। শিল্পীর চিত্রকলার বিষয় হিসেবে গ্রামবাংলার শ্রমজীবী, দুঃখী সাধারণ সংগ্রামী মানুষজনই উঠে আসে। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ও পাশ্চাত্যের আধুনিক চিত্ররীতি তাঁকে কমবেশি প্রভাবিত করে। চিত্ররীতিতে স্কেচ ও উডকাট পদ্ধতির প্রয়োগই তাঁর সৃষ্টিতে প্রাধান্য পেয়েছে। ছবিতে অধিক পরিমাণে কালো কালির ব্যবহার ও আলো-ছায়ার দ্বন্দ্বে তৈরি একপ্রকার বলিষ্ঠ অঙ্কনভঙ্গির বিশিষ্টতা, জোড়ালো প্রতিবাদের আবহ তাঁর চিত্রকে প্রাণময় করেছে। জীবনের ৩৩টি বছর তিনি জীবিকার্জনের জন্য মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে অতিবাহিত করলেও তাঁর উপার্জন অনিয়মিত ছিল। ১৯৭৮ সালে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

১৩। বাংলার শিল্পচর্চার ধারায় সোমনাথ হোরের কৃতিত্ব আলোচনা করো। ৫

সোমনাথ হোরের কৃতিত্ব: প্রখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রকর সোমনাথ হোর ১৯২১ সালে অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যৌবনেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন, যা তাঁর শিল্পসত্তার উপর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি কলকাতার ‘গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ’-এর ছাত্র ছিলেন। সেখানে গ্রাফিক্স বিভাগের প্রধান হরেন দাসের সান্নিধ্য ও শিক্ষা তাঁর শিল্পশিক্ষাকে জোরালো হতে সাহায্য করেছিল। কমিউনিস্ট পার্টির ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ‘তেভাগা আন্দোলন’-এর বাস্তব অভিজ্ঞতা তাঁর শিক্ষাজীবনে অনিবার্য ছাপ ফেলে। সোমনাথ যত্নের সঙ্গে লিথোগ্রাফ ও খোদাইকর্ম শিক্ষা করেন। তিনি চিত্র, ভাস্কর্যে এমন কিছু নতুন কৌশলের পত্তন করেন, যা তাঁর নিজস্ব আবিষ্কার। দিনকর কৌশিকের আহ্বানে তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন ও কলাভবনে শিক্ষকতা করেন। এখানে চিত্রকর কে জি সুব্রহ্মণ্যন ও ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের সান্নিধ্য তাঁর আত্মপ্রতিষ্ঠা ও কর্মজগৎকে সমৃদ্ধ করে। ১৯৭০ সাল থেকে এই শিল্পী অত্যধিক যত্নের সঙ্গে ভাস্কর্য সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন। চিত্রচর্চায় তাঁর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও, ভাস্কর্যই তাঁর সুকৃতির প্রধান সহায়।

চিত্রশিল্প চর্চা: তবে ভাস্কর্যের পাশাপাশি তিনি দক্ষতার সঙ্গে ছবির চর্চাও করে যেতে থাকেন। অল্পবয়সে চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের সঙ্গে মন্বন্তরপীড়িত গ্রাম বাংলায় ঘুরে ঘুরে সোমনাথ নিরন্ন ও ক্ষুধার্ত মানুষদের যে চিত্র অঙ্কন করেছিলেন, পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভাস্কর্যে তার প্রভাব লক্ষণীয়; বিশেষত ব্রোঞ্জের ভাস্কর্যগুলিতে। তিনি তাঁর ‘উন্ডস’ সিরিজের জন্য বিখ্যাত। সাদার উপর সাদা গ্রাফিক্স-এর এই কাজগুলিতে সমাজযন্ত্রণার নানা ছাপ ও ক্ষত বাঙ্ময় হয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লালের আভাসে তিনি যন্ত্রণার মধ্যে রক্তাক্ততা বা আগ্রাসনের ধারণাকে চিত্রে প্রতীয়মান করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভাস্কর্য হল- ‘মাদার উইথ চাইল্ড’, ‘ক্ষুধা’, ‘পথে পাঁচালি’ ইত্যাদি।

১৪। বাংলার শিল্পচর্চার ইতিহাসে ভাস্কর চিন্তামণি করের অবদান আলোচনা করো। ৫

ভাস্কর চিন্তামণি করের অবদান: চিন্তামণি কর পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এ কলাবিদ্যায় তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ভাস্কর্য শিক্ষার জন্য ফ্রান্সের প্যারিসে যান। চিন্তামণি নব্যবঙ্গীয় ঘরানায় জলরঙের ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ভারতীয় পুরাণকেন্দ্রিক বেশ কিছু ছবি আঁকলেও, তাঁর সিদ্ধি ও খ্যাতি ভাস্কর্যের জন্য। তিনি কাঠ, পাথর, ধাতু-সহ ভাস্কর্যের সব উপাদান নিয়েই কাজ করেছেন। টেরাকোটার কাজেও তিনি দক্ষ ছিলেন। তিনি প্রাথমিকভাবে অ্যাকাডেমিক ও উপস্থাপনযোগ্য কাজ করলেও, ক্রমে তাঁর ভাস্কর্যে স্থান পায় প্রাকৃতিক বিমূর্ততা। ১৯৪৬ সালে তিনি লন্ডন যান ‘রয়াল সোসাইটি অফ ব্রিটিশ স্কাল্পচার’-এর মনোনীত সদস্য হয়ে। ১৯৫৬ সালে তিনি ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট’-এর অধ্যক্ষপদ গ্রহণ করেন।

চিন্তামণি কর তাঁর ভাস্কর্যে মূলত ইউরোপ ও এশিয়ার শিল্প আঙ্গিকের সমন্বয় সাধন করেছিলেন। তাঁর ভাস্কর্যে আলোর প্রতিফলনে রঙের আভাস আনার চেষ্টা ছিল, যা তাঁর স্বাতন্ত্রের একটি দিক। প্রচুর সফল ভাস্কর্যের স্রষ্টা চিন্তামণি করের কাজ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগ্রহশালাতে সংরক্ষিত। ১৯৭৪ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি লাভ করেন। ২০০০ সালে তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান লাভ করেন। ২০০৫ সালে এই মহান ভাস্করের জীবনাবসান হয়।

১৫। বাংলার লোকচিত্রের জগতে দেয়ালচিত্রের গুরুত্ব কী তা আলোচনা করো। ৫

দেয়ালচিত্রের গুরুত্ব: প্রাচীনকাল থেকেই দেয়ালচিত্র মানব সমাজের দৈনন্দিন কার্যকলাপ ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করেছে। কখনও দেবদেবীর প্রতি বিশ্বাস, কখনও ঐতিহাসিক ঘটনার কথা এই দেয়ালচিত্র থেকেই বহু সময় জানা গিয়েছে। তেমনই বাংলার লোকচিত্রকলার এক অনবদ্য নিদর্শন হল দেয়ালচিত্র। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় যেমন- সাঁওতাল, ডোম, বাউরি, মাহাতো প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাটির বাড়িতে রঙিন ছবি বা নকশা আঁকার রীতি প্রচলিত। এই ছবি বা নকশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন লোকবিশ্বাস, শুভ-অশুভের বোধ (যেমন-ভালো শিকারলাভ, ভালো ফসলের ফলন ইত্যাদি)। তবে বর্তমান দিনে শুধু লোকবিশ্বাস নয়, আধুনিকতার স্পর্শে দেয়ালচিত্রের মধ্যে এসেছে, নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যবোধের ছোঁয়া।

সাধারণত দেয়ালচিত্র নির্মাণের আগে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরুষরা বাড়ির একেবারে নীচের অংশের দেয়ালকে মোটা গোবরের প্রলেপ দিয়ে শক্ত করে নেয়, যাতে বৃষ্টির জলে তা নষ্ট না হয়ে যায়। তারপর তাতে কালো রঙের প্রলেপ দিয়ে বানানো হয় পিন্ডা- যার উপর মানুষ বসতে পারে। দেয়ালের উপরের অংশকে কাঁকরমাটি, নীলমাটি ও তারপর সাদামাটির প্রলেপ দিয়ে ক্যানভাসের মতো গড়ে তোলা হয়। যার মধ্যে সহজেই ছবি ফুটে উঠতে পারে। আদিবাসী রমণীরা তাতে কখনও কাঁচা অবস্থাতেই আঙুলের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলেন বিভিন্ন লতা, ফুল, পশুপাখির ছবি। কখনও বা নকশা। পরে এই নকশাগুলি শুকিয়ে গেলে দেওয়ালের গায়ে স্পষ্ট ছবি ফুটে ওঠে। ছবি আঁকার এই পদ্ধতি ফ্রেসকো নামে পরিচিত।

আবার, অনেকে বাড়ি তৈরি করার সময়ে পুরোনো ঘরের ফাঁকা দেয়ালে নতুন মাটি লাগিয়ে বর্গাকার বা আয়তাকার বর্ডারের মধ্যে আঙ্গুল বা পাতার ছিলকে দিয়ে কেটে ছবি ফুটিয়ে তোলে। দেয়াল অঙ্কনের এই পদ্ধতিকে রিলিফ বলে। এই পদ্ধতিতে দেয়ালে আঁকার জন্য লালমাটি, নীল, পোড়ামাটি, সিঁদুর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। রিলিফ দেয়ালচিত্রেও বিভিন্ন লতাপাতা, ফুল, পশুপাখির ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়।

যদিও কালের নিয়মে দেয়ালচিত্র আঁকার আটপৌড়ে এই রীতি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবু আধুনিকতার ছোঁয়ার দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি ইত্যাদি ফর্মে দেয়ালচিত্রের শিল্প ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে।

১৬। বাঙালির চিত্রকলার ধারায় ঠাকুরবাড়ির অবদান আলোচনা করো। ৫

ঠাকুরবাড়ির অবদান: বাংলার শিল্পকলার ইতিহাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় এই পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। এই ঠাকুরবাড়ির বিচিত্রা স্টুডিও ও দক্ষিণের বারান্দার চিত্রচর্চা একসময় সমগ্র দেশকে শিল্পচর্চার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এই পরিবারের একাধিক সদস্য নানাভাবে চিত্রকলা চর্চায় নিজ নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। সেই বিষয়ে এখানে অতি স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা হল-

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রচর্চায় ‘নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতি’ আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার প্রেক্ষাপটে তাঁকে এক অনন্য স্থান দিয়েছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যরীতির মিশ্রণে তাঁর নিজস্ব ‘ওয়াশ’ পদ্ধতির প্রচলন চিত্রশিল্পের জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তাঁর সৃষ্ট ‘কৃষ্ণলীলা’ সিরিজের হাত ধরেই ভারতীয় আধুনিক চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। ‘ভারতমাতা’, ‘শ্বেত অভিসারিকা’, ‘কচ ও দেবযানী’ প্রভৃতি চিত্রকলাসমূহ তাঁর অসামান্য কীর্তি। গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর: গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানি কালি ও ওয়াশের অনবদ্য ব্যবহারে ‘টুয়েলভ ইংক স্কেচেস’ নামক বারোটি কাকের ছবির অ্যালবাম দিয়ে চিত্রশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সিল্যুট, পশ্চিমি কৌণিকতা, জ্যামিতিক ধরন ইত্যাদির প্রভাব তাঁর ছবিতে দেখা যায়। তবে মূলত ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হিসেবেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ, ব্যারিস্টারদের স্বদেশিয়ানা ইত্যাদি বিষয়ে করা গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্র ভারতীয় চিত্রকলায় বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থ রচনার সময় পান্ডুলিপিতে কাটাকুটি করতে করতে প্রায় খেলার ছলেই রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প জগতে পদার্পণ। ক্রমে বিভিন্ন প্রকারের রঙের ও কালির ব্যবহারে অভিনবত্ব এসেছিল তাঁর আঁকা ছবিতে। আংশিক বর্ণান্ধতা থাকা সত্ত্বেও উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার তাঁর ছবিকে করে তুলেছিল সমৃদ্ধ। পরবর্তী সময়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর উৎসাহে প্যারিসে তাঁর আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী ভারতীয় চিত্রশিল্পের জগতে এক অলংকৃত অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।

সুনয়নী দেবী: ঠাকুর পরিবারের কন্যা সুনয়নী দেবীর হাতে লৌকিক চিত্রকলা এক অনন্য মাত্রা পেয়েছিল। জলরঙের মাধ্যমে পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাই ছিল তাঁর বিশেষত্ব। সুনয়নী দেবীর ‘মা যশোদা’, ‘রাধা’, ‘নেপথ্যে’ ইত্যাদি শিল্পকর্ম চিত্রকলার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছিল।

বলা বাহুল্য, ঠাকুর পরিবারের চিত্রশিল্পীরা প্রত্যেকেই ছিলেন স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। শুধু চিত্র অঙ্কনে পারদর্শিতাই নয়, সকল গণ্যমান্য বাঙালি ও বিদেশি শিল্পরসিক ব্যক্তিত্বদের একত্রিত করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিল্পকলার মেলবন্ধন ঘটানোও ছিল এই পরিবারের উদ্দেশ্য। তার ফল স্বরূপ ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’, ‘কলাভবন’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান চিত্রকলার জগতে পরবর্তী সময়ে পথ দেখিয়েছে।

আরো পড়ুন : হলুদ পোড়া গল্পের প্রশ্ন উত্তর

আরো পড়ুন : হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

আরো পড়ুন : তিমির হননের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আরো পড়ুন : ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment