পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো
পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

মোক্ষ

ভারতীয় নীতিবিদ্যায় মোক্ষের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দার্শনিকদের কাছে মোক্ষের ধারণা চতুর্বর্গ পুরুষার্থের মধ্যে প্রিয় কাম্যবস্তু হিসেবে একটি অন্য মাত্রা লাভ করেছে। চার্বাক ও প্রাচীন মীমাংসা সম্প্রদায় ব্যতীত সমগ্র ভারতীয় দর্শনে পরম পুরুষার্থরূপে মোক্ষকে স্বীকার করা হয়েছে।

পরম পুরুষার্থরূপে মোক্ষ

পুরুষার্থ বলতে বোঝায় মানুষের ইপ্সিত বা কাম্যবস্তুকে। আর পরমপুরুষার্থ বলতে বোঝায় পরম কাম্যবস্তুকে। পরম কাম্যবস্তু হল সেই বস্তু যা লাভ করলে মানুষ আর কিছুই চায় না। ভারতীয় নীতিবিদ্যায় মানুষের এমন কাম্যবস্তু হল মোক্ষ।

‘মোক্ষ’  শব্দের পর্যায়বাচক শব্দ

“মুক্তিঃ কৈবল্যনির্বাণং শ্রেয়ো নিঃশ্রেয়সামৃতম্ মোক্ষোহপবর্গো।” ভারতীয় দর্শনে বহুল ব্যবহৃত ‘মোক্ষ’ শব্দের পর্যায়বাচক শব্দ হল বৌদ্ধ দর্শনে ‘নির্বাণ’, ন্যায় দর্শনে ‘অপবর্গ’, বৈশেষিক দর্শনে ‘নিঃশ্রেয়স’, সাংখ্য ও যোগ দর্শনে ‘কৈবল্য’, মীমাংসা ও বেদান্ত দর্শনে ‘মোক্ষ’। এ ছাড়াও ‘মোক্ষ’ শব্দের পর্যায়বাচক শব্দ হল- স্বরূপপ্রাপ্তি, শ্রেয়, অমৃত, ব্রহ্মভবন, ব্রহ্মপ্রাপ্তি, ব্রত্মনির্বাণ, অপুনরাবৃত্তি, অপুনর্ভব, ব্রহ্মলয়, সজ্ঞানাশ, প্রলয় ইত্যাদি। ন্যায়শাস্ত্রে অপবর্গকেই অভয়, অজয়, অমৃত্যুপদ ও ক্ষেমপ্রাপ্তি বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

‘মোক্ষ’ শব্দের অর্থ

সাধারণত মোক্ষ বলতে বোঝায় বন্ধন থেকে মুক্তি। বেদে বলা হয়েছে মৃত্যুরূপ বন্ধন থেকে মুক্তি। উপনিষদে বলা হয়েছে মৃত্যু থেকে মুক্তি- “মৃত্যুসুখাৎ প্রমুচ্যতে।” বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে জীবের সর্বপ্রকার কামনা থেকে প্রমুক্ত হওয়াই মুক্তি- “যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে যে অস্য হৃদিশ্রিতাঃ”। দুর্গাদাস তর্কবাগীশের মতে বন্ধনযুক্ত অবস্থা থেকে বন্ধন রহিত অবস্থার প্রাপ্তিই মুক্তি- “বন্ধনরহিতাভাবে অকর্মঃ অয়ম্”। অবশ্য কোনো কোনো গ্রন্থে বন্ধননাশকেই মুক্তি বা মোক্ষ বলা হয়েছে- “তৎকৃত বন্ধ স্তন্নাশোমোক্ষ উচ্যতে।”

মোক্ষ ত্রিবর্গের পর্যায়বস্তু নয়

ত্রিবর্গ বা তিনটি পুরুষার্থ মানুষের সামাজিক আদর্শের চাবিকাঠি। যেমন-ধর্মে কতগুলি সামাজিক অনুশাসনের মাধ্যমে মানুষের জীবনের সমস্ত নৈতিক কর্তব্য নির্ধারিত হয়। আবার ধর্ম, অর্থ ও কামকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই অর্থ ও কামের সামাজিক আদর্শও পরোক্ষভাবে ধর্মের দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু মোক্ষ জীবনের এমন এক পর্যায় যেখানে মানুষ সংসারের আসক্তি থেকে মুক্ত হয়। মোক্ষ জগতের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে এবং নিরাসক্ত ও নির্মোহ জীবনের সূচনা করে। সুতরাং, বলা যায় যে ধর্ম, অর্থ ও কাম-এই তিন পুরুষার্থ মোক্ষের সমপর্যায়ভুক্ত নয়।

সুতরাং বলা যায়, মোক্ষ নিত্য সুখস্বরূপ, মোক্ষ মানুষের পরম কাম্যবস্তু যা চরিতার্থ করতে পারলে দুঃখের আর কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। বৌদ্ধ দার্শনিক নাগসেন মোক্ষ বা নির্বাণকে আনন্দময় অবস্থা বলেছেন। তিনি একটি উপমা স্বরূপ বলেছেন- “নির্বাণ সমুদ্রের মতো গভীর, পর্বতশৃঙ্গের মতো উঁচু, মধুর মতো মিষ্টি।”

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment