আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী

আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী

আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী
আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী

আইনের সংজ্ঞা

টিউটনীয় ধারণা ‘Lag’ থেকে ‘Law’ বা ‘আইন’ কথাটি এসেছে। এর অর্থ হল স্থাপন করা বা কোনো কিছু সঠিক স্থানে রাখা। আভিধানিক অর্থে আইন বলতে কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত আচরণবিধিকে বোঝায়।

সংকীর্ণ অর্থ: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইনের ধারণাকে ব্যাপক অর্থে না দেখে সংকীর্ণ অর্থে দেখা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইনকে বৃহত্তর প্রাকৃতিক বা সামাজিক জীবনের নিয়মকানুন হিসেবে না দেখে সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে বিচার করা হয়। আইন বলতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত আইনকে বোঝানো হয়। আইন হল ব্যক্তির আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী এমন কতকগুলি সামাজিক বিধিবিধান, যা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত।

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রদত্ত সংজ্ঞা: আইনের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হবস, বোদাঁ, হল্যান্ড, অস্টিন প্রমুখদের মতে, সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ হল আইন। হল্যান্ডের মতে, আইন হল ব্যক্তির বাহ্যিক কার্যকলাপের এমন কতকগুলি সাধারণ নিয়মবিধি, যা সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলবৎ হয়ে থাকে (‘Law is a general body of external human action enforced by the sovereign political authority.’)। জন অস্টিনের ভাষায়, আইন হল অধস্তনের প্রতি ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আদেশ (‘Law is the command of the political superior (i.e. sovereign) to the political inferior.’)।

ঐতিহাসিক, চিন্তাবিদ প্রদত্ত সংজ্ঞা: হেনরি মেইন, স্যাভিনি, মেইটল্যান্ড ক্লার্ক প্রমুখ ঐতিহাসিক চিন্তাবিদরা আইনকে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ বলে মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের মতে, প্রতিটি দেশে দীর্ঘকাল যাবৎ যেসব প্রথা, রীতিনীতি, লোকাচার প্রভৃতি চালু থাকে তা কালক্রমে আইনের মর্যাদা লাভ করে। আবার দ্যুগুই, ব্র্যাবে, রসকো পাউন্ডের মতো সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাবিদরা আইনকে সমাজের কল্যাণ- সাধনকারী নিয়মবিধি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের অভিমত অনুসারে, আইন সমাজের কল্যাণ সাধন করে বলেই লোকেরা আইন মেনে চলে।

গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা: আইনের পরস্পরবিরোধী সংজ্ঞাগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে উড্রো উইলসন একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, আইন হল মানুষের স্থায়ী আচার, ব্যবহার ও চিন্তার সেই অংশ যা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিধিতে পরিণত হয়েছে এবং যার পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট সমর্থন আছে।

আইনের বৈশিষ্ট্য

আইনের বৈশিষ্ট্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল-

[1] মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা হল আইন।

[2] আইন শুধু মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।

[3] আইনের বিধানগুলি সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট।

[4] আইন রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য।

[5] সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সমর্থিত বলে আইনের স্থান সবার ঊর্ধ্বে।

[6] আইনকে কার্যকরী করা সার্বভৌম শক্তির প্রধান কাজ। তাই আইন ভঙ্গ করা হলে সার্বভৌম শক্তি আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি দিয়ে থাকে।

[7] আইনের চোখে সবাই সমান।

[৪] নাগরিকদের সুস্থ ও সুন্দর জীবনকে সুনিশ্চিত করে থাকে আইন, তাই আইনকে সুস্থ জীবনের দিশারি বলা হয়।

[9] সার্বভৌম শক্তি বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ভয়ে লোকে আইন মেনে চলে-এ কথা সবসময় ঠিক নয়, বরং আইন মেনে চললে সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত হয় বলেই লোকেরা আইনকে মান্যতা দিয়ে থাকে।

[10] মানুষের অন্তর্জগতের বা মনোজগতের আচরণের সঙ্গে আইনের কোনো সম্পর্ক নেই।

[11] আইন নীতিনিরপেক্ষ (ethically neutral)। আইনের সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যক্তির চোখে আইন ন্যায়নীতির বিরোধী হলেও তাকে মেনে চলতে ব্যক্তি বাধ্য থাকে। ম্যাকাইভারের ভাষায়, “আমরা ন্যায়সংগত বা ন্যায়নীতিবিরোধী যা-ই মনে করি না কেন, আইন আইনই” (“A Law is still a law whether we deem it just or unjust”)।

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment