ঈশ্বর গুপ্তের কবিপ্রতিভা আলোচনা করো
অথবা,
যুগসন্ধিক্ষণের কবি কাকে বলা হয় ও কেন? বাংলা কাব্যসাহিত্যে তাঁর অবদান আলোচনা করো
যুগসন্ধিক্ষণের কবি: ঈশ্বর গুপ্তকে ‘যুগসন্ধিক্ষণের কবি’ বলা হয়। কারণ: ১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের মৃত্যুর পর বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে। ঈশ্বর গুপ্তের জন্ম ১৮১২ সালে। সময়টা হল, প্রাচীন যুগ ও আধুনিক যুগের সন্ধিক্ষণ। ঈশ্বর গুপ্ত মধ্যযুগের দেবদেবীর কাহিনি বর্জন করে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছোটো ছোটো কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর রচনাশৈলীর মধ্যে মধ্যযুগের কাব্যবৈশিষ্ট্য ও আধুনিক যুগের প্রারম্ভিক বৈশিষ্ট্য সমানভাবে লক্ষ করা যায় বলে তাঁকে যুগসন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়।
স্বদেশপ্রেমমূলক রচনা: ঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় ঈশ্বরচেতনা, সামাজিক বিষয়, স্বদেশপ্রেম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ঈশ্বর গুপ্তের স্বদেশপ্রেমের কবিতাগুলিতেই জননী ভারতভূমির বন্দনা বর্তমান-
"মাতৃসম মাতৃভাষা পুরালে তোমার আশা তুমি তার সেবা কর সুখে।"
তাঁর লেখনীতে আদর্শবাদী মনের ভাব প্রকাশ পেলেও আবেগপ্রবণতা স্থান পায়নি। ঈশ্বর গুপ্ত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংঘর্ষ যুগের কবি। তাই তাঁর কবিতায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার বিরোধের চিত্রই প্রধান হয়েছে। যেমন মেমসাহেবের বর্ণনায়-
"বিড়ালাক্ষী বিধুমুখী মুখে গন্ধ ছুটে। আহা তায় রোজ রোজ কত রোজ ফুটে।"
মেয়েদের বিরুদ্ধে রচনা: মেয়েদের উগ্র স্বাধীনতা এবং তার পাশাপাশি ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বা বিধবাবিবাহের প্রচার ঈশ্বর গুপ্তের লেখনীর আক্রমণ থেকে মুক্তি পায়নি। তাই ইংরেজি শেখা মেয়েদের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন-
"আগে মেয়েগুলো ছিল ভালো ব্রতধর্ম কর্তো সবে। একা বেথুন এসে শেষ করেছে আর কী তাদের তেমন পাবে।"
অন্যান্য রচনা: পুরাণনির্ভর দেববাদ থেকে সরে এসে তিনিই প্রথম সমকালীন বাস্তবকে স্থান দিয়েছেন কবিতায়। তাঁর কিছু কিছু কবিতায় বিষয়বস্তু হয়েছে প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত অতিতুচ্ছ বস্তুসমূহ যেমন- ‘আনারস’, ‘নারকেল’, ‘পিঠেপুলি’, ‘তপসে মাছ’ ইত্যাদি।
উপসংহার: ঈশ্বর গুপ্ত আধুনিক যুগের কবি। তাঁর কাব্য বিশ্লেষণে দেখা যায় তিনি গীতিকবি নন, খণ্ডকবিতায় তাঁর নিজস্ব একটা রীতি ছিল। নব্য মানবতাবোধকে গ্রহণ করেও বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তাঁর কবিতা স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর