রবীন্দ্রোত্তর প্রবন্ধসাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

রবীন্দ্রোত্তর প্রবন্ধসাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

সৈয়দ মুজতবা আলীর অবদান
সৈয়দ মুজতবা আলীর অবদান

ভূমিকা: রবীন্দ্রোত্তর প্রবন্ধসাহিত্যের ধারায় প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-১৯৭৪) এক স্মরণীয় নাম। বাংলা রসসাহিত্য বলতে যা বোঝায়, সেই ধারায় তিনি বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন ঘটিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালে এই বহুভাষাবিদ ও লোকপ্রিয় গদ্যশিল্পী ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ ইত্যাদি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন। তাঁর রচনায় বিভিন্ন ভাষা থেকে সংগৃহীত শ্লোক ও রূপকের যথাযথ প্রয়োগ লক্ষ করা যায় এবং নির্মল হাস্যরসের মাধ্যমে যে গভীর জীবনবোধ প্রতিফলিত হয়েছে, তার তুলনা তিনি নিজেই।

অবদান: রসসাহিত্যিক মুজতবা আলীর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলির মধ্যে রয়েছে ‘দেশে বিদেশে’, ‘ধূপছায়া’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘দ্বন্দ্বমুখর’ প্রভৃতি। প্রাবন্ধিকের ‘দেশে বিদেশে’ গ্রন্থে আফগানিস্তানের স্মৃতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি বিবৃত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ‘দেশে বিদেশে’ গ্রন্থরচনার মধ্য দিয়ে তাঁর বাংলা সাহিত্যে পথ চলা শুরু। ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থটিকে তিনি রসিকতায় জারিত করে পাঠকের সামনে উপস্থাপিত করেন-যা এক বৈঠকি মেজাজের রূপ নেয়। এই গ্রন্থের ‘বই কেনা’, ‘আজব শহর কলকেতা’, ‘পঁচিশে বৈশাখ’, ‘আড্ডা’ প্রবন্ধগুলি বিষয়বৈচিত্র্যে ও বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসে সিক্ত। তিনি ‘আহারাদি’ প্রবন্ধের গুরুগাম্ভীর্যকে কাব্যধর্মী ভাষা ও উপমার সাহায্যে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা সত্যিই অনবদ্য। এই গ্রন্থে আলী সাহেবের আড্ডাপ্রিয় মেজাজকে খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর ‘পুলিনবিহারী’ প্রবন্ধটি ও কাব্যিক। এটি চিত্রকল্পের ঢঙে রচিত। তাঁর ‘রসিকতা’ প্রায় একই ধাঁচের প্রবন্ধ বলা যেতে পারে। সমাজের যে-কোনো বিষয়কে নিয়েই প্রাবন্ধিক সহজাত ভঙ্গিতে ব্যাধর্মী প্রবন্ধরচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন।

রচনারীতি: মুজতবা আলী তাঁর গদ্য বা প্রবন্ধের বিষয়কে কেন্দ্র করে কখনও তা গম্ভীর আবার কখনও বা সেটিকে হালকা চালে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বৈঠকি ঢঙে গদ্যরচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর রচনায় অসমাপিকা ক্রিয়া অধিক ব্যবহৃত হয়নি, বরং তার পরিবর্তে তিনি ছোটো ছোটো বাক্যে মনের ভাবপ্রকাশে সচেষ্ট হয়েছেন। আলী সাহেব রচনাকে পাঠকের মনোগ্রাহী করে তুলতে কৌতুকপূর্ণ গদ্যভাষা প্রয়োগ করেন। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলাই যায় যে, বাংলা সাহিত্যে মুজতবা আলী এক স্বতন্ত্র রীতির অধিকারী।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment