সময়ের মূল্য প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

সময়ের মূল্য প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

মানুষের জীবনের যাত্রা পথ অনন্ত নয়। সেই পথ-রেখা ধরে মানুষ অগ্রসর হয়। সময় অনন্ত, কিন্তু মানুষের জীবন তা নয়। তাই সংক্ষিপ্ত জীবনের মধ্যে মানুষকে সব কাজ সমাপ্ত করতে হলে সময়ের মূল্যের গুরুত্ব দিতে হয়। যে সময়ের কাজ সেই সময় না করলে জীবন-প্রান্তে এসে দেখবে যে অনেক কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে।

সময় ও জীবন

মানুষের জীবন নদীর স্রোতের মতো দ্রুত ধাবমান। সৃষ্টির সময় থেকে মানুষ অনুভব করছে মানুষের জীবন জলের বুদবুদের মতো বা পদ্মপত্রে জলবিন্দুর মতো ক্ষণস্থায়ী। মানুষ যেমন জন্মায় তেমনি তার মৃত্যু হবেই। জন্মের পরে মৃত্যু নির্ধারিত সত্য। মানুষের জীবন যেন হাটের মতো। জন্মের পরে জীবন-হাটে অজস্র মানুষের সাথে আত্মীয়তা গড়ে ওঠে, হয় পাপ-পুণ্যের সওদা।। শুরু হয় মানুষের চলা জীবন প্রাতে। ধীরে ধীরে জীবন-সূর্য যখন মাথার উপর তখন মানুষের জীবনের সুবর্ণ-যুগ, যৌবনের হাতছানিতে মনের রঙিন স্বপ্নের সে সদাগর।

পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠে প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার বন্ধন। জীবন-সূর্য এরপরে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে তার হাতছানি গভীর অন্ধকারের দিকে। এতদিনের চেনা মুখে বিষণ্ণতা, ঝাপসা হয়ে আসে বিদায় দিতে হবে বলে, পেছনে অজস্র হাতের বিদায় সংকেত, তারপর গভীর অন্ধকার। সন্ধ্যার পরে হাট যেমন অন্ধকারে ঢাকা পড়ে তেমনি মানুষও হারিয়ে যায় অসীম কালের স্রোতে অজানা কোন অন্ধকারে। সময়ের মূল্য বিবেচনা না করলে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগে জীবনের হিসাব মিলান যাবে না।

সময়ের অবহেলাই সময়ের অপচয়

সংক্ষিপ্ত ও দুর্লভ জীবনের সীমাবদ্ধ সময়ে যে কাজ করার অবসর পাওয়া যায় সেই জীবন-ভগ্নাংশটুকুর সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সার্থক ও সুখময় হয়ে ওঠে। জীবনের স্বল্প সীমায়তনের মধ্যে যে সময় আমরা পাই, তা অবহেলা করে আলস্যভাবে কাটিয়ে দিলে, তা হবে সময়ের মূঢ় অপচয়। সেই অপচয়ের বেদনা জীবনের শেষ সময়ে মর্মান্তিক বেদনা রূপে নেমে আসবে। তখন বুক-ফাটা কান্নায়, অজস্র অশ্রুবর্ষণে বা অনুতাপের অন্তর্দাহেও সেই আলস্যে-অতিবাহিত সময় আর পাওয়া যাবে না ফিরে।

সময়ের মূল্যবোধের মানে

জীবনের সাফল্যের প্রধান সোপান সময়ের যথার্থ মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া। সময়ের মূল্যবোধ বলতে বুঝায় যে সময়ের কাজ, যথা সময়ে করা, সময় অপচয় করে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে অলসভাবে সময় না অতিবাহিত করা। কৃষকের কাজ বর্ষাকালে চাষ করে ফসল ফলানো। তখন যদি চাষ না করে পাকা ফসল খামারে আনার সময় দুঃখ করে কি কোন লাভ হবে? তাই বলা হয় রোদ থাকতে ধান শুকিয়ে নিতে হবে। (Make you hay when the sun shine).

বরণীয়ের-স্মরণীয়ের সময় নিষ্ঠা

যাঁরা বরণীয় ও স্মরণীয় তাঁরা জীবন শুরুর প্রাতেই সময় সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন বলে স্বল্প পরিসর জীবনেও কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়েছেন। তাঁদের সকল সাধনা সময়ের অনুশাসন মেনেও যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতাকে করেছে সমৃদ্ধ; বিজ্ঞানী, যোগী, মহাঋষি, সাহিত্যিক প্রভৃতি মহাপ্রাণ ব্যক্তিগণ সময়ের মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে সাধনার মাধ্যমে মহৎ সৃষ্টির অমূল্য সম্পদ তুলে দিয়েছেন মানব জাতির কলাণের জন্য। সীমাবদ্ধ জীবনকালে সময়ের মূল্যবোধ তাঁদের কপালে পরিয়ে দিয়েছে বিজয় তিলক।

ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য

ছাত্রজীবন হল নিজেকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে গড়ে তোলার জীবন। সে যদি সময় সম্বন্ধে সচেতন না হয় তাহলে ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর-সার্থক জীবন গঠনের স্বপ্ন শুরুতেই বিপর্যস্ত হয়ে অসাফল্যে পর্যবসিত হবে। তাই জীবন শুরু থেকে সময়ের সদ্ব্যবহারের শুভযাত্রার সূচনা হওয়া খুবই প্রয়োজন।

উপসংহার

কার জীবনকাল কতদিন তা কেউ জানে না, জানারও প্রয়োজন নেই। যে তাঁর জীবনের স্বল্প সময়ের মধ্যে কত মহৎ কর্ম সম্পাদন করছেন তাই তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখে। শৈশব থেকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে জীবন অমূল্য এবং সময়ানুবর্তিতাই জীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন – নেলসন ম্যান্ডেলা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment