সকাম কর্ম অপেক্ষা নিষ্কাম কর্ম উন্নততর কেন
সকাম কর্মকে কাম্যকর্মও বলা হয়। এই কাম্যকর্মের কতগুলি ত্রুটি আছে। সেগুলি হল-
প্রথমত কাম্যকর্মের কতগুলি ত্রুটি আছে, নিষ্কাম কর্মের সেই ত্রুটি নেই। কাম্যকর্ম কোনো কোনো স্থলে প্রারম্ভেই নাশ হয়ে যায়। প্রারব্ব কর্ম থেকে যদি অভীষ্ট ফল না পাওয়া যায় তাহলে সেটি ব্যর্থ হয়ে যায়। যেমন- কৃষিকার্যের উদ্দেশ্য হল শস্যলাভ। কিন্তু অনেক সময় অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি বা অন্য কারণে শস্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নিষ্কাম কর্ম কখনো এভাবে ব্যর্থ হয় না।
দ্বিতীয়ত আবার এমন কতগুলি কর্ম আছে যাতে কেবল যে আরদ্ধ কার্য নষ্ট হয় তাই নয়, পাপও জন্মায়। যেমন- চিকিৎসকের অজ্ঞতা বা গাফিলতিতে যদি রোগীর কোনো ক্ষতি হয় বা মৃত্যু ঘটে তাহলে ওই চিকিৎসক যে কেবল ব্যর্থ হয় তাই নয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাপ জন্মায়। কিন্তু নিষ্কাম কর্মে ফলের আকাঙ্ক্ষা না থাকায় সেই কর্ম কখনও অজ্ঞতা বা দূরভিসন্ধি প্রসূত হতে পারে না। তাই এইরূপ কর্ম কখনও পাপের কারণ হয় না।
তৃতীয়ত কাম্যকর্মে বুদ্ধি বহির্মুখী হয়। অর্ন্তমুখী হয়ে পরমাত্মায় একনিষ্ঠ হয় না। ফলে কামনার অন্ত থাকে না। সেইসব অনন্ত কামনার তৃপ্তিসাধন সম্ভব হয় না। অপরপক্ষে নিষ্কাম কর্মে নিজ বুদ্ধিকে পরমাত্মা ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করার ফলে সেই বুদ্ধি একনিষ্ঠ হয়, নানা দিকে ধাবিত হয় না।
চতুর্থত কাম্যকর্মে নানা আয়োজনের প্রয়োজন হয় বলে তা অনেক ব্যয় ও পরিশ্রমসাপেক্ষ। এজন্য কর্মটি অনেক সময় অসম্পূর্ণ থাকে। ওই অসম্পূর্ণতার জন্য কর্মকর্তাকে ভীত থাকতে হয়। ভয়গুলি হল- বিত্তনাশের ভয়, প্রাণ নাশের ভয় ইত্যাদি। নিষ্কাম কর্মযোগে কর্মটি আংশিকভাবে নিষ্পন্ন হলেও ফলাকাঙ্ক্ষা না থাকার জন্য কর্মকর্তা বিবিধ ভয় থেকে মুক্ত থাকেন। এ কারণে নিষ্কাম কর্মকে সকাম কর্ম অপেক্ষা উন্নততর বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ