যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা 500+ শব্দে

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা

ভূমিকা

মানুষ সভ্যতা বিকাশের সূচনাপর্ব থেকে লিপ্ত আছে, যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে। অস্তিত্বরক্ষার দ্বন্দুে যোগ্যতমের হয়েছে অগ্রগতি এবং সে অন্যের ওপর করেছে প্রভুত্ব। পৃথিবীর বুকে বয়ে গেছে রক্তের স্রোত। মানুষের কান্না প্রতিধ্বনিত হয়েছে আকাশে বাতাসে।

অতীতে যুদ্ধ

মানুষ ভাবল, বাহুবলই শৌর্য-বীর্যের প্রতীক, নিজেকে সবার সেরা করে প্রতীয়মানষ করার প্রকৃষ্ট উপায়। তাই সেদিন মানুষ মেতেছিল রাজ্যজয়ের দাম্ভিক-উন্মত্ত নেশায়। বীরের খ্যাতির বাসনায় রক্তের হোলিখেলায় মানুষ হয়েছে নির্মম, নিরীহ মানুষ খুন, এমনকি গ্রামের পর গ্রাম, নগরীর পর নগরী করেছে ধ্বংস। তখন মানবিকতা ও পশুত্ব মিলেমিশে হয়ে গেছে এক। সভ্যতার ইতিহাসকে করেছে কলঙ্কিত, বিভীষিকার দুঃস্বপ্নে কেঁপে উঠেছে ধরিত্রীর বুক। ইতিহাস ভুলতে পারেনি চেঙ্গিস খাঁ, তৈমুরলঙের শোণিত বিলাসের বীভৎস চিত্রের কথা, আজও মানুষ ভুলেনি আলেকজান্ডার, পুরু, হানিবলের বীরত্ব গাথার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কত মায়ের সন্তান হারার কান্না, স্বামী হারার আর্তনাদ। মানুষই গর্বে বিশেষিত করেছে উগ্র ক্ষমতালোভের সংঘাতকে ধর্মযুদ্ধ, সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন আরও কত নামে। অসির ঝনঝনি, হস্তীর বৃংহন, অশ্বের হেযায় ক্ষমতালোভী মানুষ হয়েছে উন্মত্ত।

মানুষের স্বভাব-ধর্মে রয়েছে যুদ্ধের বীজ

আসলে যুদ্ধের বীজ প্রোথিত রয়েছে মানুষের রক্তে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিরত থাকত যুদ্ধে। মানুষের সাথে মানুষের লড়াই তখন ছিল নিত্য জীবনের সঙ্গী, জীবন-সংগ্রামে যোগ্যের কর্তৃত্ব ও অযোগ্যের বিনাশ ছিল মানুষের সংস্কৃতির হাতিয়ার। মানুষ যে আজ পৃথীবিকে নিয়ন্ত্রণ করছে তার মূলে রয়েছে তার এই দানবীয় সংগ্রামী মনোভাব। এখানেই বাস্তবের সাথে রয়েছে যুদ্ধের বাস্তবতার নির্মম সত্য।

বিগত শতাব্দীর বিশ্ব-মহাযুদ্ধ

অভিশপ্ত শতাব্দীর পূর্বাহ্নেই দু-দুটি মহাবিশ্বযুদ্ধের লেলিহান শিখায় প্রজ্বলিত হয়েছে নরমেধ-যজ্ঞের কী বীভৎস নৃশংসতা। সেদিন সত্যিই পঙ্কশয্যা হতে “প্রলয়-মন্থন-ক্ষোভে ভদ্রবেশী বর্বরতা জেগে উঠেছিল। বিংশ শতাব্দীর মধাহ্ন-প্রহরে মহাযুদ্ধের রক্তাগ্নি-শিখায় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি মানবাত্মার কী দুঃসহ অবমাননা, প্রত্যক্ষ করেছি মৃত্যুপথযাত্রী অজস্র নরনারীর কী করুণ বিকৃত মুখচ্ছবি। প্রত্যক্ষ করেছি হিরোসিমা- নাগাসাকির পারমাণবিক হত্যালীলায় মানবতার কী বিস্তীর্ণ চিতাশয্যা! কিন্তু তারপরই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ প্রার্থনা করেছে: ‘এসো শান্তি, বিধাতার কল্যাণ টিকা।”

যুদ্ধ ও শান্তি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসের মহাপ্রান্তরে শান্তির ক্ষীণ দীপশিখা হাতে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল জাতি-সংঘ। কিন্তু স্বল্পকালের মধ্যে শান্তির সেই দুর্বল দীপশিখাকে রক্তপিপাসু যুদ্ধবাজের দল শতহস্তে গলা টিপে হত্যা করার জন্য এগিয়ে এলো বর্বর পদক্ষেপে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহাশ্মশানে ঘৃণিত যুদ্ধবাজদের সমর-তৃষ্ণাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ভূমিষ্ঠ হল রাষ্ট্রসংঘ

যুদ্ধোত্তর পৃথিবী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের চিতা রচিত হলেও পৃথিবী থেকে সাম্রাজ্যবাদ ছদ্মবেশে মানবতার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কল্যাণ-শান্তি ও মানবতার প্রতীক রাষ্ট্রসংঘের নানা শুভপ্রেেয়াগ সত্ত্বেও সারা বিশ্বে চলছে গোপন চক্রান্ত, পারমাণবিক ও নক্ষত্র-যুদ্ধের ভয়াবহ প্রস্তুতি, স্নায়ুযুদ্ধের নির্মম আয়োজন।

সাম্রাজ্যবাদের কারণ

আরব-ইসরাইল, ইরাক-ইরান, অ্যাঙ্গোলা, নিকারাগুয়া, চিলি, কোরিয়া, মিশর, লাওস, এল স্যালভাডোর প্রভৃতি দেশে যুদ্ধের উন্মাদনায় রক্ত ঝরতে দেখা গেছে। তার কারণ বিশ্বের দিকে দিকে গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে কায়েম হয়েছে ধনতন্ত্র এবং বাণিজ্যের মধ্যস্থতায় পৃথিবীকে করছে শোষণ। যেসব দেশ ধনতন্ত্রের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে, সেসব দেশ থেকে অর্থনৈতিক-বিলুপ্তির আশঙ্কায় অস্তিত্বরক্ষার শেষ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠছে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি। সারা পৃথিবী এখন বিভক্ত ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এই দুই শিবিরে। তার মাঝে জেগে উঠছে তৃতীয় বিশ্ব। বিশ্বে যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন ও বিশ্ব-বিবেক জাগরণে তৃতীয় বিশ্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে সম্ভব হচ্ছে যুদ্ধোত্তর সংঘাতগুলিকে অঞ্চল-বিশেষে সীমাবদ্ধ রেখে রাষ্ট্রসংঘ তৃতীয়-বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে বিলুপ্তি করায় সচেষ্ট।

যুদ্ধ ও তার পরিণাম

শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কখনও যুদ্ধ চান না। প্রভুত্বকামী মানুষের সমর-তৃষ্ণা যুদ্ধের ফলে চরিতার্থ হলেও মানুষের জীবনে এনে দেয় দুঃখ-হতাশা, হয় ক্ষতির বিপুল খতিয়ান, ব্যাহত হয় অগ্রগতি, ধ্বংস হয় জনপদ, শস্যশ্যামলপ্রান্তর-সমৃদ্ধ নগরীতে, নেমে আসে মরুভূমির প্রাণহীনতা- শ্মশানের বীভৎসতা। মানব-সভ্যতার বুকে থাবা বসায় অবক্ষয়ের মহামারী। তবুও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেভাবে পারমানবিক সম্ভারে সজ্জিত হচ্ছে, তার ফলে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধে হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা মানব সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

উপসংহার

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা যেমন মানবসভ্যতাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিচ্ছে তেমনি তার অপব্যবহার ধ্বংস করতে পারে বিশ্ব-সভ্যতাকে। তাই সারা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষের একটাই প্রার্থনা, ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।’

আরও পড়ুন- ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment