মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবন্ধ রচনা

মুক্তবাজার অর্থনীতি
মুক্তবাজার অর্থনীতি

মুক্তবাজার অর্থনীতি

ভূমিকা

এখন পরিবর্তিত হয়েছে বিশ্বের অর্থনীতি, সমাজবাদী রাষ্ট্রে দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে পুনর্বিন্যাস, বিভিন্ন রাষ্ট্রে ভাঙনের প্রভাবে তার প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বাজারে। প্রাক্তন সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গর্বাচভ গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রৈকা নামক নতুন উদার অর্থনীতির সূচনা করলে রাশিয়ার সাথে বহির্বিশ্বের নতুন অর্থনীতি স্থাপিত হয় এবং সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। এই সুযোগে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্বের পাশ্চাত্য রাষ্ট্রগুলি নতুন এক মুক্তবাজার অর্থনীতির সূচনা করে।

মুক্তবাজার অর্থনীতি বলতে কি বুঝায়

মুক্তবাজার অর্থনীতির আসল কথা দেশীয় অর্থনীতির সুবিধার জন্য কোনপ্রকার সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করা হবে না। এই অর্থনীতির প্রবক্তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আর্থার ডাঙ্কেল। তিনি জেনিভা সম্মেলনে এই নতুন অর্থনীতি প্রবর্তন করেন। ১৯৯১ সাল থেকে এই অর্থনীতি বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ গ্রহণ করে। ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী, ডঃ মনমোহন সিং ভারতের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিদেশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে দেবার পক্ষে জোর বক্তব্য রাখেন। চিন এক্ষেত্রে উদার অর্থনীতি সীমিত গ্রহণ করে। ভারতে বিরোধীরা প্রবল আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত উদার অর্থনীতি প্রবর্তন করা হয়।

উদার অর্থনীতির ও মুক্তবাজারের পক্ষে যুক্তি

এই নীতির পক্ষে বলা হয় দেশে নতুন নিয়োগ হবে যার ফলে আর্থিক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। বিশ্বের বাজারে ভারত প্রতিযোগিতার ক্ষমতা অর্জন করবে, ইউরোপীয়ান কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির সাথে বিশ্বের বাজারে সমান ক্ষমতাশীল শক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। তাই মুক্তবাজারই অর্থনীতির অগ্রগতির সঠিক পথ। বিশ্বের তৃতীয় রাষ্ট্র যারা এখনও অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারাও ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা অর্জন করবে, মূদ্রাস্ফীতি হ্রাস হয়ে ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নগামী হবে। প্রত্যেক দেশ বিদেশী মুদ্রা অর্জনে বিশেষ সুযোগ পাবে। এক কথায় বলা যায়, উদার অর্থনীতি বা মুক্তবাজার দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে উন্নতির যুগান্তকারী বিপ্লব আনবে।

বিপক্ষে যুক্তি

বিরোধীরা বলে থাকেন, এই নীতি গ্রহণ কবার ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভারতকে আমেরিকার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের শক্তি বৃদ্ধি হবে। ভারত আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে যে ঋণ নিযেছে সেক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলি বিনা প্রতিবাদে ভারতকে মেনে নিতে হবে। ভারতে ভারি শিল্পের তুলনায় মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা বেশি। বিদেশি শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতায় এইসব শিল্প হার মানতে বাধ্য হবে। বিদেশী যেসব শিল্প নানা কারণে উৎপন্ন খরচ কমিয়ে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করবে সেসব ক্ষেত্রে দেশী শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বেশি হলে বাধ্য হবে শিল্প থেকে বিদায় নিতে।

দেশী শিল্প অগ্রগতির পরিবর্তে পশ্চাৎগামী হবে। অথচ ভারতের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ এই শিল্পের সাথে যুক্ত। ফলে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দেবে। টাটা, গোয়েঙ্কার মতো কিছু বৃহৎ শিল্প মাত্র মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে। ক্ষুদ্রশিল্প হবে রুগ্ন ও বৃহৎ শিল্পের সুবিধা হওয়ায় তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে। কৃষির ক্ষেত্র থেকে ভরতুকি তুলে নেওয়ায় ভারতের কৃষি ব্যবস্থা ও উৎপাদন বাধ্য হবে পশ্চাৎপদ হতে। প্রয়োজনীয় ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। এইভাবে বিদেশী ভোগ্যপণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় দেশীয় শিল্পগুলি বিপদের সম্মুখীন হবে ও ভারতের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে।

উপসংহার

যে কোন নতুন নীতির প্রয়োগের আগে কতটা তা উপযোগী সে ব্যাপারে পরীক্ষা ছাড়া ভবিষ্যৎ বাণী করে বলা যায় না প্রকৃত সুফল হাতের মুঠোয় কিনা। তাই ভারতে মুক্তরাজার অর্থনীতি সুদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কি পরিবর্তন আনবে তা আগাম বলা সম্ভব নয়। তবে ভারত সরকারের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় ইতিমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে, স্থিতিশীলতা এসেছে মুদ্রাস্ফীতির। বিরোধিতা সত্ত্বেও বলা যেতে পারে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে তাল রাখতে হলে ভারতের পক্ষে মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে এখন আর সরে আসা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন – ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment