বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা

বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা
বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা

বিতর্ক সভা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

অনুধাবন শক্তির অভাবে বা উপলব্ধির দুর্বলতায় অথবা অন্ধবিশ্বাসের প্ররোচনায় মানুষ অনেক সময় ভুলপথে পরিচালিত হয়। অভিজ্ঞতার অভাবে ও দৃষ্টিশক্তির অদূরদর্শিতার জন্য অনেকে বাধ্য হয় অজ্ঞতার অন্তরালে জীবন অতিবাহিত করতে। এইভাবে বর্হিবিশ্বের সাথে তার সমানভাবে এগিয়ে চলার গতি স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সত্যের স্বরূপ জানার পথ সহজ নয় দুর্গম। তাই লোকে সত্যের খোঁজে না লিপ্ত করে নিজেকে অনেক সময় মনের কোণে সাজায় অজ্ঞানতার স্বর্গরাজ্য, ভ্রান্তিবিলাস। জীবনের বৈচিত্র্যের মতো আছে বিষয় বৈচিত্র্য, মতবাদে মতবাদে ভিন্নতা, চিন্তাধারায় চিন্তাধারায় পার্থক্য, বিভিন্নতার প্রকাশ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে।

সমন্বয়ের সিদ্ধান্তের সোপান বাদ-প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে

মানুষ ভুলের স্বর্গরাজ্য থেকে মুক্তি পেতে চায়, নিজের মতবাদের সীমিত গন্ডি টপকে বাইরে এসে অন্যের মতবাদের সাথে নিজের যুক্তি-তর্কের সংঘর্ষণে নিজের মতের সত্যতা যাচাই করতে, মূল্য নিরূপন করতে চায়। এইভাবে বহু অবাঞ্ছিত দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিহার করা যায় ও বাদ-প্রতিবাদের মধ্যে ঘটে সমন্বয় সাধন। এই বাদ-প্রতিবাদ যুক্তি- তর্কের উত্থাপন করা হয় নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে মাত্র, মনের মধ্যে সন্তর্পণে কোন রাগ-প্রতিহিংসাকে স্থান না দিয়ে, প্রকৃত সত্যের উদ্‌ঘাটন হবে তাদের মত বাইরে প্রকাশ করে ও যুক্তি- তর্কের আঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে।

দ্বন্দ্ব-সংঘাত অবসানের প্রাচীন ও আধুনিক রীতি

মানব-সভ্যতার শুরু প্রাচীনকাল থেকে, মানুষ যখন বনজঙ্গলে বাস করত তখন মত পার্থক্যের অবসান হত দৈহিক ক্ষমতা ও বুদ্ধির প্রয়োগ করে রক্ত-পিচ্ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মাধ্যমে। প্রাগৈতিহাসিক কাল পর্যন্ত এই পন্থা অনুসরণ করত মানুষ। এখন সভ্যতার অগ্রগতির সাথে মানুষের মনোবৃত্তির পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভুল বোঝা-বুঝির জন্য কখনও কখনও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ফলে রক্তপাত ও হতে দেখা যায়। অথচ যুক্তি তর্কের পথে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে, রক্তক্ষয়ী সংঘাত পরিহার করে প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করা যেতে পারে। এখানেই বিতর্ক-সভার যৌক্তিকতা।

বিতর্ক-সভার অনুষ্ঠান

এখন স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ক্লাব, পাঠাগারে, বিতর্ক-সভার আয়োজন করা হয়। অন্যান্য সভার মতো এই সভার একজন সভাপতি ও বিচারকমন্ডলী থাকেন। বিতর্কের বিষয় আগে থেকে নির্দিষ্ট থাকে ও অংশগ্রণকারীদের পক্ষে বা বিপক্ষে যোগদান করতে হয়। স্বপক্ষ দলের ও বিপক্ষ দলের দলপতিই বিতর্কের সূচনা করে। বিতর্ক চলতে থাকে উভয় পক্ষের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে; অবশেষে উভয় পক্ষের দলপতিরা বিতর্কের উপসংহার করে। বিচারক-মন্ডলীর রায়ই চূড়ান্ত। কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রোতাদের মতামত ও প্রথাসিদ্ধ ভাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

বিতর্কসভার নিয়ম

বিতর্ক-সভার বক্তৃতার কতকগুলি অবশ্য-পালনীয় নিয়ম আছে, সেগুলি অনুসরণীয়। বক্তব্যটিকে যুক্তিনিষ্ঠ উপায়ে পরিবেশন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। অতি সংক্ষিপ্ত ভাষণ যেমন ঠিক নয়, অতি-বিস্তারিত আলোচনার ক্ষেত্রও তেমনি বিতর্ক-সভার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই সভায় ক্রোধ-প্রকাশ, কটুক্তি করা বা ব্যক্তিগত আক্রমণ নীতির বিরুদ্ধ ও অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। এই সভায় লক্ষ্য রাখা হয় অংশকারীরা যাতে শ্রোতা-বা বিচারক মন্ডলীর মনে বক্তব্যের মাধ্যমে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এছাড়া সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়, বিতর্ক সভার ধারা যেন মার্জিত রুচির পরিচয় বহন করে।

ভাব-প্রবণতার নিয়ন্ত্রণ

মানুষ সাধারণত ভাবপ্রবণ হয়। ভাবপ্রবণতাই সমাজে বিভিন্ন সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। মানুষ পরবর্তীকালে যুক্তির নিরিখে ভাবপ্রবণ মতবাদগুলিকে যাচাই করতে থাকল এবং জন্মনিল যুক্তিবাদের। তাই ভাবপ্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণকরার জন্য বর্তমান সভ্য সমাজে বিতর্ক সভার প্রয়োজন হয়। সত্য ও কল্যাণের পথ: যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে যুগ যুগ ধরে মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার সৌধের ওপর। এখন মানুষ বিশ্বের ভাবধারার, চিন্তাধারার ও কর্মধারার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। সুসভ্য সমাজে নিজের ভাবধারা, চিন্তাধারার ও কর্মধারার যথার্থ নিরূপণের জন্য বিতর্ক-সভায় তা যাচাই করা প্রয়োজন। ‘এখানে নানা বাদ-প্রতিবাদের যুক্তিতর্কের ঘর্ষণে যা সত্য, যা শাশ্বত এবং যা কল্যাণকর, তা প্রতিষ্ঠিত হয়; আর, যা মিথ্যা, মেকী এবং অকল্যাণকর, তা নিন্দিত, ধিকৃত এবং পরিত্যক্ত হয়।’ তাই বিতর্ক সভা সমাজের একটি কল্যাণকর অনুষ্ঠান।

বিতর্ক-সভার উপকারিতা

যারা বিতর্ক-সভায় যোগ দেয়, যোগ দিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে তাদের বাক্-পটুতা, যুক্তি নিষ্ঠা, মার্জিত রুচির বিকাশ হয়, উপস্থিত বুদ্ধির প্রখরতা বৃদ্ধি হয়। বিতর্ক-সভার মাধ্যমে পৃথিবীতে বহু ভুলের কাচের স্বর্গ ভেঙে গেছে এবং বহু অপ্রীতিকর বিবাদ-বিসংবাদ ও বহু রক্তক্ষয়ের যবনিকা পাত ঘটেছে। দেশে দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে দেখা যায় পার্লামেন্টে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয় বিতর্কের মাধ্যমে।

উপসংহার

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকলের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু মত প্রকাশ মানে সেই মতামত যুক্তি সঙ্গত ও সত্যনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। বিপক্ষের যুক্তির কষ্টিপাথরে নিজের যুক্তির সত্যতা যাচাই করে নিতে হবে, তা করতে না পারলে ভাবনা- চিন্তায় ও মানসিকতায় ভুল-ভ্রান্তির সুযোগ থেকে যায়। তাই বিতর্ক সভা হল পারস্পরিক বোঝাপড়ার তীর্থ ক্ষেত্র, সত্যের মূল্যায়নের যথার্থ বিচারালয়।

আরও পড়ুন – ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment