বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার রচনা 600 শব্দে | Uses and misuses of science essay

বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার রচনা

বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার রচনা
বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার রচনা

বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার রচনা

ভূমিকা

মধ্য যুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণের প্রধান উপাদান হল বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদ। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষকে মধ্যযুগীয় জীবনবোধ থেকে নবজাগ্রত আধুনিক ভূমিকা জীবনবোধে উত্তীর্ণ করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান তার জয়যাত্রা অব্যাহত রেখে মানুষকে ক্রমশ আধুনিক করে গড়ে তুলেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, যানবাহন সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদানকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু ভাল দিকেরও মন্দ দিক আছে। কারণ ‘সর্বম্ অত্যন্তম্ গর্হিতম্’। বিজ্ঞানের ভাল দিককে গ্রহণ করতে গিয়ে তার অশুভ দিকটিকে আমরা ভুলে গিয়েছি। এমনকি বিজ্ঞানকে যথাযথ প্রয়োগ না করে তার কুফলকে সাদরে ডেকে এনেছি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। ফলে বিজ্ঞানের অভিশাপ আমাদেরকে কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রাস করেছে। সেজন্য বিজ্ঞানকে দায়ী না করে তার অপপ্রয়োগকেই দায়ী করা যায়।

সভ্যতার বিবর্তনে বিজ্ঞানের ব্যবহার

সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিজ্ঞান তার নিজস্ব শক্তির দ্বারা মানুষের বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিকে বিকশিত করতে সাহায্য করেছে। আর্কিমিডিস, গ্যালিলিও, কোপারনিকাসের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা কুসংস্কারের অচলায়- তনকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করেছে। বিভিন্ন দেশে নবজাগরণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি। একবিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় সভ্যতার যে প্রগতি, মানুষের যে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিময়তা-তার মূলে আছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার। যে কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় গোরুর গাড়ি, লাঙল ছিল সেখানে বিজ্ঞানের কল্যাণে এসেছে নতুন নতুন যন্ত্র, তাতে কৃষকদের জীবনে এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। যে মানুষকে পদব্রজে কিংবা শিবিকারোহণে বহুদূর রাস্তা অতিক্রম করতে হত, সেই মানুষ আজ অনেক কম সময়ে অনায়াসে পাড়ি দিচ্ছে লক্ষ লক্ষ কি.মি.। সুতরাং সভ্যতার বিবর্তনে বিজ্ঞানের দানকে কোনক্রমেই অস্বীকার করা যায় না।

বিজ্ঞানের অপব্যবহার

কথায় আছে, ‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’-অর্থাৎ কোন কিছু প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি কোন ভুল হয় তাহলে সেই ভুলটা প্রয়োগকারী অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। অপবিজ্ঞানকেও বিজ্ঞান বলে চালানো হয়। যেমন, জোনাকি পোকা পোড়া বিষাক্ত। কারণ ওতে ফসফরাস আছে। অথচ মাছ পোড়ায় যে ফসফরাস, জোনাকি পোকা পোড়ায়ও সেই একই ফসফরাস। রাজশেখর বসু তাই বলেছেন- “বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের ফলে প্রাচীন অন্ধ সংস্কার ক্রমশ দূর হইতেছে। কিন্তু যাহা যাইতেছে তাহার স্থানে নূতন জঞ্জাল কিছু কিছু জমিতেছে। ধর্মের বুলি লইয়া যেমন অপধর্ম সৃষ্ট হয়, তেমনি বিজ্ঞানের বুলি লইয়া অপবিজ্ঞান গড়িয়া উঠে। সকল দেশেই বিজ্ঞানের নামে অনেক নূতন ভ্রান্তি সাধারণের মধ্যে প্রচলিত হইয়াছে।”

আগ্নেয় অস্ত্রের অপপ্রয়োগ বিজ্ঞানের অভিশাপকে সূচিত করল। পরমাণু বিজ্ঞান মানুষকে যে শক্তি দিল তার অপপ্রয়োগ ঘটাল মানুষ। বিভিন্ন আগ্নেয় অস্ত্র নির্মাণ করে তার দ্বারা অস্ত্রব্যবসায় লিপ্ত হল বিশ্বের ধনী দেশগুলি। পরমাণু শক্তিবাহী ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মানুষের মারণযজ্ঞে ব্যবহৃত হওয়ায়, তা মানুষের কাছে অভিশাপ স্বরূপ নেমে এল। এইসব ক্ষেপণাস্ত্রের দ্বারা দুরারোগ্য রোগের জীবাণুও ছড়ানো হচ্ছে। সুতরাং বিজ্ঞানের এই অপপ্রয়োগ যুদ্ধের মনোভাবকে উস্কে দিয়েছে।

আগ্নেয় অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ আজও ভুলতে পারেনি সেই বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের কঠিন অভিজ্ঞতা, ধ্বংসের বীভৎসতা, হিরোসিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক হত্যালীলা। এই ঘটনার আগে ঘটে গেছে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভে জার্মান, জাপান, ইতালি অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তি প্রতিরোধ এই যুদ্ধে শান্তিকামী মানুষের গলায় জয়মাল্য পরিয়েছিল।

পরমাণু শক্তির অপপ্রয়োগ

আজকের আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতা মারণযজ্ঞের হোমানল প্রজ্জ্বলিত করে চলেছে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে। সেই বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১২ মিলিয়ন টন টি. এন. টি.। তুলনায় ১৯৪৫-এ যে বোমা বিস্ফোরিত হয় তার ক্ষমতা ছিল বিশ হাজার টি.এন.টি.। যুদ্ধাস্ত্রে ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০টি আণবিক বোমা বহনকারী Mx আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের প্রত্যেকটি বোমা ৬,০০,০০০ টি. এন. টি. ক্ষমতা যুক্ত। নির্দিষ্ট নিশানায় আঘাত হানতে পাশি-২, ক্রুজ-২ ক্ষেপণাস্ত্রের সময় লাগে মাত্র ৪-৬ মিনিট, আধুনিক নিউট্রন বোমার বিস্ফোরণ বহু দূরবর্তী স্থানে বসবাসকারী মানুষকেও মহাশ্মশানের চিরনিদ্রায় মগ্ন করবে।

পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৪,০০,০০০ মিলিয়ন ডলার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রনির্মাণের জন্য ব্যয় করা হয়। আজ আণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির দখলে যে বোমা আছে, তার সিকি ভাগই মানব সভ্যতাকে সমূলে বিনাশ করতে যথেষ্ট। তাই পৃথিবীর ৫০০ মিলিয়ন মানুষের কণ্ঠে ওঠে করুণ আর্তনাদ ‘নব আবিষ্কার চাই না’। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও বিজ্ঞানের অপব্যবহার সম্পর্কে লিখেছেন, “বিজ্ঞান যখন প্রেমের গান ভুলে ভাড়াটে জল্লাদের পোশাক গায়ে চাপায়, আর/রাজনীতির বাদশারা পয়সা দিয়ে তার ইজ্জত কিনে নেয়,/আর তার গলা থেকেও ধর্মের ষাঁড়েদের মতো কর্কশ/আদেশ শোনা যায়: রাস্তা ছাড়ো! নইলে—।”

সাম্প্রতিক যুদ্ধাস্ত্র

বিগত ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকায় যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেল এবং তারপর আমেরিকা যে প্রত্যাঘাত শুরু করেছে, তাতে সমগ্র বিশ্বে আজ বিজ্ঞানের অপ- ব্যবহার নিয়ে সন্দেহ আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তান এবং ইরাকের উপর আমেরিকার মারণাস্ত্র নিয়ে জল-স্থল-আকাশে হামলায়, ইরাক-ইরান যুদ্ধে, কিংবা ইসরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধে যে মারণাস্ত্রের মাধ্যমে হত্যালীলা হয়েছে, তাতে গোটা বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আতঙ্কিত।

এই প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হল বিজ্ঞানের সুফলকে মানব হিতে লাগানো হোক্, কোটি কোটি টাকা যুদ্ধাস্ত্রের জন্য ব্যয় না করে সেই টাকা মানবকল্যাণে ব্যয়িত হোক্, ধ্বংস হোক্ স্বার্থান্ধ লোলুপতা, মানবসভ্যতা রক্ষার জন্য শান্তিকামী মানুষ বুদ্ধ, চৈতন্য, যীশু ও হজরতের শান্তির বাণীকে প্রচার করুক। তা যদি হয় তাহলে সমগ্র বিশ্ব আবার নতুন করে ভাবুক বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগকে নিয়ে, তা না হলে ভাবী প্রজন্মের কাছে আমাদের সম্মান থাকবে না।

আরও পড়ুন – ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

2 thoughts on “বিজ্ঞানের ব্যবহার ও অপব্যবহার রচনা 600 শব্দে | Uses and misuses of science essay”

Leave a Comment