বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে রেনেসাঁস বা নবজাগরণ এসেছিল শুধু সাহিত্যে ও ধর্মে নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানেও এবং তার মূর্ত প্রতীক ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর আর্বিভাব শুধু ভারতে নয় সারা পৃথিবীতে সূচিত করল বিজ্ঞানের নব দিগন্ত। জগৎসভায় ভারতকে বসাল উচ্চাসনে।

জন্ম-বাল্যজীবন

জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ঢাকার বড়িশালে। তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র বসু ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী দেবী। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুরের গ্রাম্য পাঠশালায়। ভগবানচন্দ্র বসুর ছিল স্বদেশানুরাগ এবং স্বদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন উৎসাহী। ছেলেবেলায় জগদীশচন্দ্র মায়ের কাছে বসে রামায়ণ মহাভারতের কাহিনি মনযোগ দিয়ে শুনতেন এবং এই দুই মহাকাব্যের অলৌকিক ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাঁর মন ব্যাগ্র হয়।

ফরিদপুরের বাংলা স্কুলে শিক্ষালাভের পর জগনীশচন্দ্র ভর্তি হলেন কলকাতার হেয়ার স্কুলে এবং পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। এখান থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন এবং তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। এই সময় তিনি পদার্থ বিদ্যার অধ্যাপক ফাদার লাঁফোর সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৮৮০ সালে তিনি লন্ডনে গেলেন উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যা পাঠের জন্য। তবে অসুস্থতার কারণে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি পাশ করে স্বদেশে ফিরে আসেন।

অধ্যাপনা-জীবন

তিনি ছিলেন অন্যায়ের প্রতিবাদী। প্রসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপকের পদে যোগ দিয়ে দেখলেন যে ভারতীয় এবং শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে রয়েছে বেতনের বৈষম্য। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি তিন বছর বেতন গ্রহণ করেননি। অবশেষে কর্তৃপক্ষ হার মানল জগদীশচন্দ্র বসুর কাছে। এই ঘটনা যখন ঘটে জগদীশচন্দ্র অর্থসংকটে ছিলেন। এককালীন তিন বছরের বেতন পেয়ে তিনি পিতৃ ঋণ শোধ করেন।

পদার্থবিদ্যায় আবিস্কার

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ছেলেবেলার অজানাকে জানবার ব্যাকুলতা অধ্যাপক জগদীশচন্দ্রের মনে তীব্র আকার ধারণ করল। তিনি বিজ্ঞান সাধনায় ব্রতী হলেন। বিদ্যুৎ তরঙ্গ নিয়ে তাঁর গবেষণা সারা পৃথিবীকে বিস্মিত করল। রয়েল সোসাইটিতে তাঁর গবেষণা স্বীকৃতি পেল এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.এস.সি. উপাধি দিয়ে সন্মানিত করল। তিনি বিনা তারে শব্দ গ্রহণ ও শব্দ প্রেরণ যন্ত্র তৈরী করেন যা আমাদের কাছে রেডিও নামে পরিচিত। প্রায় একই সময়ে ইতালির বিজ্ঞানী মার্কনিও রেডিও আবিষ্কার করেন। বেতার যন্ত্র আবিষ্কারকের সন্মান জগদীশচন্দ্রের প্রাপ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে এই সম্মান মার্কনীকে দেওয়া হয়। জগদীশচন্দ্র দুঃখ-ভারাক্রান্ত গলায় লিপিবদ্ধ করলেন- ‘যাঁহারা আমার বিরুদ্ধপক্ষ ছিলেন, তাঁহাদের একজন আমার আবিষ্কার পরে বলিয়া প্রকাশ করে।’

উদ্ভিদবিদ্যায় আবিষ্কার

তিনি গবেষণা শুরু করলেন জড় ও চেতনের বিষয় নিয়ে। গবেষণা করে লাভ করলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্মান। বিশ্ব-জগতের সর্বত্রই যে জড় ও চেতনার প্রাণের ‘নির্বোধ প্রকাশ-ভারতের বৈদিক ঋষিদের এই দার্শনিক উপলব্ধি জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান সাধনায় প্রমাণিত হল।’ আগে মানুষ মনে করত উদ্ভিদ ও জড়ের মধ্যে পার্থক্য নেই। তিনি প্রমাণ করলেন মানুষ যেমন দুঃখ-বেদনা অনুভব করে গাছও তা অনুভব করতে পারে। উদ্ভিদ যে প্রাণীর মতো সংবেনদশীল তার প্রমাণ স্বরূপ লজ্জাবতী লতাকে তিনি বিশেষভাবে ব্যবহার করেন। পরে তাঁর তৈরী ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদের প্রাণের স্পন্দন প্রমান করেন।

সাহিত্য-চর্চা

জগদীশচন্দ্র যেমন ছিলেন বিজ্ঞানী তেমনি ছিলেন দার্শনিক, সাহিত্যিক। তাঁর রচিত ‘অব্যক্ত’ গ্রন্থে তার সাক্ষ্য রেখেছেন। এই গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ব্যক্ত হয়েছে পরাধীনতার বেদনা। এই গ্রন্থে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর দার্শনিক চেতনা, বিজ্ঞান-মনীষা ও সাহিত্য প্রতিভা।

বসু-বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা

জগদীশচন্দ্র তাঁর জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে পরাধীন ভারতের বিজ্ঞানের দৈন্যতার গ্লানি দূর করার জন্য ১৯১৭ সালের ৩০শে নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বসু-বিজ্ঞান মন্দির।’ এই গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তরুণ প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞান চর্চার ও অজানা রহস্যের দ্বারোদ্ঘাটনের নব দিগন্ত উন্মোচিত হল। তাঁর গবেষণামূলক বিষয় ইংরেজীতে লেখা।

মহাপ্রয়ান

কালজয়ী বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর প্রয়াণ ঘটে ১৯৩৭ সালের ২৩ শে নভেম্বর।

উপসংহার

ইতিহাস মিথ্যাচারকে কখনও ক্ষমা করে না। অনেক সময় তিনি যথাযোগ্য সন্মান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ইতিহাসে তাঁর অবদানের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে। দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, পরাধীন ভারত-জননীর মাথায় যে বিশ্বজয়ের মুকুট তিনি পরিয়ে দিয়েছেন তা চিরকাল মানুষ শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবেন।

আরও পড়ুন – মহাত্মা গান্ধী প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment