বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করো
অবদান: বাংলা গদ্যের সূচনালগ্নে আত্মপ্রত্যয়, আধুনিক যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং উদার মানবতাবোধ নিয়ে রামমোহন তাঁর সাহিত্যে সমাজ ও জীবনমুখী তাৎপর্যকে বড়ো করে তুলেছেন। বাঙালির কুসংস্কারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে নিজস্ব জ্ঞান, বোধ, যুক্তি প্রকাশের উদ্দেশ্যে তিনি গদ্য রচনা করেছেন। বিষয়বৈচিত্র্যের দিক থেকে রামমোহনের রচনাকে প্রধান তিনটি ভাগে বিন্যস্ত করা যায়। যথা- সাকারবাদের বিরুদ্ধে, হিন্দু দর্শনের পক্ষে, সতীদাহের বিরুদ্ধে।
সাকারবাদের বিরুদ্ধে: হিন্দুধর্মের মূর্তিপূজা তথা পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে রামমোহনের রচনাগুলি বাংলার সম্পদ। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার’ (১৮১৬-১৭), ‘ভট্টাচার্যের সহিত বিচার’ (১৮১৭), ‘গোস্বামীর সহিত বিচার’ (১৮১৮), ‘কবিতাকারের সহিত বিচার’ (১৮২০), ‘সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর সহিত বিচার’।
হিন্দু দর্শনের পক্ষে : রামমোহনের সঙ্গে রক্ষণশীল হিন্দুদের এবং আগ্রাসী খ্রিস্টান পাদরিদের সংঘাত হয়েছিল। এক্ষেত্রে ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ পত্রিকার নাম উল্লেখযোগ্য।
সতীদাহের বিরুদ্ধে: রামমোহনের অবিস্মরণীয় কীর্তি সতীদাহপ্রথা রদ করা। এই প্রসঙ্গে তাঁর যে রচনাগুলি জনমতগঠনে সহায়ক হয়েছিল, সেগুলি হল-‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ (১৮১৮) এবং ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ’ (১৮১৯)।
এ ছাড়া তাঁর উল্লেখ্য অনুবাদ গ্রন্থগুলি হল- ‘বেদান্তগ্রন্থ’ (১৮১৫), ‘বেদান্তসার’ (১৮৮৫), বিভিন্ন উপনিষদের অনুবাদ (ঈশ, কঠ, কেন, মাণ্ডুক্য, মুন্ডক ইত্যাদি)। জনচেতনা জাগরণের উদ্দেশ্যে তিনি ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ ইত্যাদি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলা ব্যাকরণের উন্নতির উদ্দেশ্যে ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ (১৮৩৩) রচনা করেন।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর