বাংলার উৎসব রচনা 600+ শব্দে

বাংলার উৎসব রচনা – আজকের পর্বে বাংলার উৎসব রচনা নিয়ে আলোচনা করা হল।

বাংলার উৎসব রচনা

বাংলার উৎসব রচনা
বাংলার উৎসব রচনা

বাংলার উৎসব রচনা

বাঙালির উৎসব কল্যাণশ্রীমন্ডিত

বাঙালিরা বারো মাসে তেরো পার্বণে মেতে থাকে। বাঙালির সমাজ জীবনে অফুরন্ত আনন্দধারা ও প্রাণময়তার অন্যতম উৎস বাংলার সামাজিক উৎসব। এইসব উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে আছে মানুষের গভীর একাত্মবোধ ও পরষ্পরের প্রতি নিবিড় আকর্ষণ, আর আছে সহানুভূতি, ও মানবতাবোধ। বাঙালির অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একদিন তাদের যেমন ছিল বিত্ত-অর্থ তেমনি ছিল প্রাণশক্তি। বিগত দিনে বাঙালি নিজেদের শুধু সুখ ভোগের সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি, তাদের অর্থ-বিত্তকে ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক উৎসবকে প্রাণপ্রবাহে উদ্দীপ্ত করতে। বাঙালি নানাধরনের উৎসব- অনুষ্ঠানের সৃষ্টি করে, তাদের অন্তরেই তা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই উৎসবের মধ্যে বাঙালির জাতীয় জীবনের উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। উৎসব মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের দুঃখ-গ্লানি-বেদনা মুছে দিয়ে অন্তরে উদ্বোধিত করে মঙ্গ লদীপ্ত সমাজচেতনা। উৎসব বাঙালিকে মনের সংকীর্ণতা ও মলিনতা হতে মুক্তি দিয়েছে।

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। প্রায় সাড়ে তিন শত বছর আগে তাহেরপুরের হিন্দুরাজা কৃষ্ণনারায়ন বাংলায় এই পুজোর প্রচলন করেন বলে কথিত আছে। আবার কারও কারও মতে দূর্গাপুজোর সূচনা করেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। অবশ্য ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে এই পুজো আরম্ভ করেন বড়িশার জমিদার লক্ষ্মীনারায়ণ রায় মজুমদার। জগৎমাতার এই পুজো হিন্দু-বাঙালি সমাজে সকল স্তরের সকল মানুষের কাছে ব্যাপকতায় ও মর্মস্পর্শিতায় সার্বজনীন। দুর্গাপুজোয় বাঙালি সমাজ আত্মহারা হয়ে ওঠে, মানুষের জীবনে আনে প্রাণচাঞ্চ ল্য ও সজীবতা।

এই পুজোর প্রাক্কালে শুধু বাঙালির প্রাণজগতে নয়, প্রকৃতি জগতেও আনন্দের ঢেউ খেলে যায়, শরতের সোনালি আকাশ, শিউলিঝরা-ভোরের সোনালি রোদ্দুর, শস্যশ্যামল মাঠ, জল-স্থল সর্বত্র প্রাণের প্রাচুর্য, শুভদাত্রী মা দুর্গার আগমন বার্তা। প্রকৃতির নির্বাধ প্রসন্নতার পটভূমিতে জগন্মাতার পুজোর আরাধনার প্রাণময়তায় গভীরতা এত বেশি যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দুর্গা হিমালয়ের কন্যা, শিবের গৃহিণী, মাত্র তিন দিনের জন্য তিনি পিতৃগৃহে আসেন, তারপর তিনি চলে যান স্বামীর আলয়ে। মা দুর্গা বাঙালির কাছে যেন আপন কন্যা, তিনদিনের জন্য পিত্রালয়ে এলেন। তাই এই আনন্দ-যজ্ঞের আয়োজন।

লক্ষ্মীপুজো

দুর্গাপুজো শেষ হতেনা হতেই বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীপুজোয়। লক্ষ্মী ধন দেবী। গৃহস্থের বাড়িতে বাড়িতে এই পুজো মহাসমারোহে হয়ে থাকে। জ্যোৎস্নাস্নাত পূর্ণিমারাত। খেত সোনালী ধানে ভরে গেছে। গ্রামে গঞ্জে প্রকৃতির মনমোহিনী রূপের ছোঁয়া। তাঁদের অন্তরতম কামনা আত্মীয়স্বজনের কল্যাণ, সমাজের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও স্বাচ্ছন্দ্য।

কালীপুজো

বাঙালির শ্রেষ্ঠ পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কালীপুজো। এই জড়বিশেষ কর্মকেন্দ্রে যে অসীম শক্তি বিরাজমান অদৃশ্যভাবে মা কালী তারই আধ্যাত্মিক প্রতীক। মানুষের জীবন-মৃত্যু সত্যের ওপর যেমন প্রতিষ্ঠিত তেমনি একদিকে সৃষ্টি, অন্যদিকে সংহারলীলা নিত্য প্রকটিত হচ্ছে। সর্বভূতে যে চেতনা শক্তিরূপে সংস্থিত, তার উপলব্ধির সাধনাই মা কালীর পুজো। অমাবস্যার ঘনান্ধকার, নীশিথে শক্তিরূপিণী মা কালীর পুজো হয়। নিসর্গলোকের গভীর অন্ধকারকে আমরা দূরে সরিয়ে দেই সহস্র দীপাবলীর আলোক ধারায়। এই উৎসবের দিন রাত্রির অন্ধকারকে সে শুষে নেয় আতসবাজীর সমারোহে। দীপান্বিতার প্রোজ্জ্বল দীপ্তি অন্তরের কালিমাকে দেয় মুছে। মাকালীর পুজো শুধু আনন্দের উৎসব নয় আধ্যাত্মপিপাসুদের নিকট মহাশক্তির আরাধনার উৎসব।

সরস্বতী পুজো

সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী, বিদ্যার প্রতীক। শীত বিদায় নেয়নি তখনও। প্রকৃতির সে আর এক রূপ। মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে বাংলার বিদ্যার্থী তুরুণ-তরুণী, বালক-বালিকা দেবী সরস্বতীর বন্দনায় ব্রতী হয়। তাদের মন শুচিশুভ্র ভাবে উদ্বেলিত হয়। যে চৈতন্যময়ী শক্তিকে আমরা দুর্গারূপে বন্দনা করি, যে মহাশক্তিকে আমরা কালীর মূর্তিতে আরাধনা করি, যে অমূর্ত শক্তিকে আমরা মহালক্ষ্মীর প্রতিমার মধ্যে অনুভব করি, সেই আদ্যাশক্তির আর এক প্রকাশ বাগদেবী সরস্বতীর অপূর্ব বিগ্রহের মধ্যে।

দোল উৎসব

বসন্তের আগমনে নর-নারীর মনে যেমন জাগে অপূর্ব অনুভূতি, কল্পনার রঙিন ডানায় ভর করে মন উড়ে যেতে চায় স্বপ্ন-সুন্দর রাজ্যে, তেমনি গাছ-পাতা অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়, ফল-ফুল-কিশলয়ে ভরে যায় তাদের শরীর, ভ্রমরের গুঞ্জনে কোকিলের কুহুতানে বসন্তের মৃদুমন্দ সমীরণে আনন্দের হিল্লোল, দোলের ফাগে-প্রেম-প্রীতি অনুরাগে বসন্তকে করা হয় বরণ। রঙের-খেলার মধ্য দিয়ে মানুষ জানায় প্রকৃতিকে সাদর সম্ভাষণ, অন্তরের গভীরে উৎসারিত হয় আনন্দের নির্ঝর। এই ঋতুর সাথে গভীর সম্পর্ক শ্রীকৃষ্ণলীলার, যেন মানুষের প্রেম-বিরহ- মান-মাথুর-কলঙ্কের প্রতিচ্ছবি। দোল উৎসবের মূলে রয়েছে-আবির কুমকুমে মানুষের প্রাণসত্তাকে রঞ্জিত করার আনন্দ।

নানান উৎসব

এ ছাড়া রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, নবান্নের মতো নানান উৎসব বাঙালি সমাজকে সারা বছর আনন্দমুখর করে তোলে। চড়কপুজো ও গাজন, মহরম, ঈদ, বড়দিন বারো মাসে তেরো পার্বণ তো ঘটেই থাকে বাঙালি সমাজে।

উপসংহার

এখন ঘটে গেছে বিশ্বায়ন। পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে বাঙালির এই উৎসবগুলো কিছুটা প্রাণচঞ্চ লতা হারালেও উৎসবের আনন্দকে আমরা মন থেকে কিন্তু বিদায় জানাতে পারিনি। বাংলার উৎসবগুলি দেশবাসীকে শুধু আনন্দ দেয়না এর মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে লোক শিক্ষার অমূল্য সম্পদ।

আরও পড়ুন – ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment