ফলের আশা না করে ব্যক্তি কীভাবে কোনো কর্ম করতে পারবে? নিষ্কাম কর্ম কি সমর্থনযোগ্য
ফলাকাঙ্ক্ষাহীন কর্ম
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-য় বলা হয়েছে, কামনা পূরণের জন্য যেমন কর্ম করা হয় আবার তেমনি কামনা নিবৃত্তির জন্যও কর্ম করা হয়। সাধারণ ব্যক্তি পার্থিব কামনা পূরণের জন্য কর্ম করেন। কিন্তু প্রাজ্ঞ, জ্ঞানীব্যক্তি আসক্তি ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির জন্য কর্ম করেন। কোন্ কর্ম, কীভাবে করলে কর্ম বন্ধনে আবদ্ধ হবে না তা কর্মকর্তার দৃষ্টিকোণের ওপর নির্ভর করে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-তে ‘সংকল্পের স্বাধীনতা’ স্বীকার করা হয়েছে- বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ কর্ম করা ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। যে কাজে ‘আমি কর্তা নই’- এই মনোভাব থাকে সেই কর্ম বন্ধনের কারণ হয় না। স্বার্থচিন্তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কর্ম করলে কর্মফল বন্ধনের কারণ হয়। গীতা-য় বলা হয়েছে যে আসক্তি ত্যাগ করে জনকল্যাণের জন্য কাজ করলে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে সফল হয়। আসক্তিমুক্ত এবং কামনামুক্ত হয়ে সমস্ত জীবের প্রতি অহিংসা, করুণা, সত্য, পরোপকার ইত্যাদি পালন করে কর্ম করলে মানুষের মধ্যে দেবত্বগুণের (গীতা-য় যাকে বলা হয় ঐশ্বরীয় গুণ) আগমন ঘটে এবং এই গুণের অভ্যাস করলে, নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি পরম মোক্ষ লাভ করতে পারে।
নিষ্কাম কর্মের সমর্থনযোগ্যতা
নিষ্কাম কর্ম অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। এই কর্ম ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য না করে মানবিক অঙ্গীকারের সঙ্গে, সামাজিক উন্নয়নের জন্য করা হয়। নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করা হয় যাতে তারা নিজেদের ও অন্যদের উন্নয়নে যোগদান করতে পারে। সমাজস্থ ব্যক্তির মাঝে সমানতা ও ভালোবাসার ভাবনা সৃষ্টি করে তুলতে হলে নিষ্কাম কর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ
পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর