নিষ্কাম কর্ম ব্যাখ্যার্থে কীভাবে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আত্মার স্বরূপ প্রসঙ্গে অবগত করেছেন
আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের অভিমত
স্বজন হারানোর দুঃখবশত অর্জুনের মনে যুদ্ধ না করার ভাব দেখা যায় এবং তিনি শ্রীকৃয়কে তাঁর যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত জানান। অর্জুন মনে করেছিলেন গুরুজনকে হত্যার ফলে যে পাপ উৎপন্ন হবে তাতে মোক্ষলাভ সম্ভব হবে না। তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন জগতে সবাই আত্মস্বরূপ -এই তত্ত্বজ্ঞান সঠিকভাবে লাভ হলে অর্জুন কেবল নিষ্কামভাবে কর্ম করার প্রতি ধাবিত হবেন।
আত্মার স্বরূপ
আত্মা হল নিত্য, কারণ আত্মার জন্ম ও ধ্বংস নেই। আত্মা হল অবিনাশী এবং অবিনাশীর বিনাশ কেউ করতে পারে না। আত্মা হল জন্মরহিত, নিত্য, শাশ্বত। শরীর বিনাশপ্রাপ্ত হলেও আত্মা বিনাশ হয় না। যেমন- মানুষ পুরাতন বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ আত্মাও পুরাতন শরীর পরিত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর পরিগ্রহ করে। জীর্ণবস্ত্র পরিবর্তন করলে মানুষ যেমন শোকগ্রস্থ হয় না তেমনি শরীরের পরিবর্তনেও আত্মার শোক হয় না।
আত্মাকে অস্ত্র দ্বারা ছেদন করা যায় না, অগ্নি দ্বারা দহন করা যায় না, জল একে সিক্ত করতে পারে না এবং বায়ু একে শুষ্ক করতে পারে না। আত্মা নিত্য, সর্বব্যাপী, অচল, স্থিরস্বভাবসম্পন্ন ও অনাদি।
যদি অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের মতের বিরুদ্ধে এই কথা মেনে নেন যে ‘দেহ’-এর মতো দেহীও নিত্য, জন্মায় এবং মারা যায়’ – তাহলেও অর্জুনের শোক করা উচিত হবে না। কারণ যে জন্মায় তার মৃত্যু হবেই এই নিয়মের কেউ ব্যতিক্রম করতে পারে না।
অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আত্মার স্বরূপ সম্বন্ধে অবগত করলেন এবং বললেন যে তিনি যুদ্ধ না করলেও তাঁর আত্মীয়দের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। অর্জুনের যুদ্ধ না করায় অবিনাশী এবং বিনাশী তত্ত্বের কোনো পার্থক্য হবে না। অর্থাৎ অবিনাশী আত্মা চিরস্থায়ী থাকবে এবং বিনাশশীল দেহ বিনাশপ্রাপ্ত হবে।
এইভাবে আত্মার প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে অবগত হলে নিষ্কাম যোগী হওয়া সম্ভব এবং কর্তব্যজ্ঞানে কর্ম সম্পাদনের দ্বারা ফলের আশা না করে নিষ্কামভাবে কর্ম করা যায়।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ