নিষ্কাম কর্ম কাকে বলে? নিষ্কাম কর্ম কীভাবে মোক্ষলাভের সহায়ক হয়
নিষ্কাম কর্ম
যে কর্ম কোনো ফলভোগের কামনা-বাসনা ছাড়া নিরাসক্তভাবে করা হয়, তাই হল নিষ্কাম কর্ম। নিঃ + কাম = নিষ্কাম। অর্থাৎ কামনা-বাসনাশূন্য ফলাকাঙ্ক্ষারহিত কর্মই হল নিষ্কাম কর্ম। এই কর্ম সকল প্রকার রাগ, দ্বেষ, কামনা-বাসনা, কর্তৃত্বাভিমান, অহংবোধ থেকে মুক্ত কর্ম।
মোক্ষলাভের সহায়ক রূপে নিষ্কাম কর্ম
ফলাকাঙ্ক্ষাযুক্ত কর্মকে বলা হয় সকাম কর্ম। সকাম কর্মের ফল কর্মকর্তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হবে। যার অনিবার্য পরিণতি হল পুনর্জন্ম এবং তার ফলস্বরূপ দুঃখভোগ। কারণ কর্মকর্তার কৃত সকল সকাম কর্মের ফলভোগ যদি বর্তমান জন্মে শেষ না হয় তবে সেই কর্মের ফলভোগ করার জন্য মৃত্যুর পরও আত্মাকে পুনরায় দেহ ধারণ করতে হয়। আবার সেই জন্মে কৃত সকল সকাম কর্মের ফলভোগ শেষ না হলে মৃত্যুর পর আবারও সেই আত্মাকে দেহধারণ করতে হয়। অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর এই আবর্ত থেকে সে নিষ্কৃতি পেতে পারে না। ফলস্বরূপ তার দুঃখভোগও শেষ হয় না। যেহেতু প্রতিটি সকাম কর্মের পেছনেই কোনো-না-কোনো কামনা-বাসনা থাকে, তাই সেই বাসনা থেকে সংস্কার উৎপন্ন হয়। আর সেই সংস্কারই এক জন্ম থেকে আর এক জন্মে কর্মফলকে বহন করে নিয়ে যায়। নিষ্কাম কর্মের পেছনে যেহেতু কোনো কামনা-বাসনা থাকে না ফলে তা থেকে কোনো সংস্কারও উৎপন্ন হয় না। ফলত ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত কোনো কর্মের ফলই কর্মকর্তাকে ভোগ করতে হয় না। তাই দুঃখভোগেরও প্রশ্ন ওঠে না এবং কর্মফলভোগের জন্য জন্মও আর নিতে হয় না ফলস্বরূপ মুক্তি বা মোক্ষলাভ হয়।
মন্তব্য
এইভাবে নিষ্কাম কর্ম কর্মকর্তাকে মোক্ষের পথে নিয়ে যায়। আর তাই গীতায় নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন করার ওপর এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ মোক্ষ হল সর্বশ্রেষ্ট পুরুষার্থ, যা লাভ করলে আর কিছুই চাওয়া বা পাওয়ার থাকেনা। আর নিষ্কাম কর্মই একমাত্র মানুষকে মোক্ষে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ