দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রবন্ধ রচনা 400+ শব্দে

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রবন্ধ রচনা

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

ভারতের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের পথিকৃত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর জীবন ত্যাগের, বৈরাগ্যের, দেশকে দাসত্ব শৃঙ্খল মোচনের। দুর্বার ব্রিটিশ শক্তিকে পরাস্ত করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন ছিল তাঁর আমৃত্যু জেহাদ। তিনি ছিলেন ভারতের মুক্তি পথিক, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম দিশারী।

জন্ম ও বংশ পরিচয়

চিত্তরঞ্জন দাশ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭০ সালের ১০ই নভেম্বর কলকাতায়। তাঁর পিতৃভূমি ছিল বিক্রমপুরের তেলিরবাগ গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ভুবনমোহন দাশ ও মাতার নাম নিস্তারিনী দেবী। ভূবনমোহন দাশ ছিলেন একজন নামকরা এ্যাটর্নি।

ছাত্রজীবন

১৮৮৬ সালে চিত্তরঞ্জনের স্কুলজীবন শুরু হয় ভবানীপুরের মিশানারী স্কুলে। তিনি যোল বছর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপরে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে, তিনি ছাত্রসভায় বিশেষভাবে আকর্ষিত হয়ে অংশগ্রহণ করতেন। ১৮৯০ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি থেকে বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ‘রাভেনা’ জাহাজে উচ্চশিক্ষার্থে লন্ডন যাত্রা করেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে আই. সি. এস হয়ে দেশে ফিরবেন-এই প্রত্যাশা নিয়ে। তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা সম্পূর্ণ না করে মিডল টেম্পল থেকে ব্যারিস্টারী পাশ করে ১৮৯৪ সালে দেশে ফিরে আসেন।

দেশপ্রেম ও আলিপুর বোমা মামলা

১৯০৫ সালের ১৯শে জুলাই লর্ড কার্জন বাংলা বিভাজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে সারা বাংলার মানুষ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যুক্ত হলেন। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় তাঁর সান্ধ্য পত্রিকায় রাজদ্রোহমূলক লেখার জন্য এবং বিপিনচন্দ্র পাল প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের এজলাসে সাক্ষীর জন্য অদ্ভুত হয়ে ও মুক হয়ে থাকার জন্য দোষী বলে অভিযুক্ত হন। চিত্তরঞ্জন তাঁর পক্ষ সমর্থনে করলেন কোর্টে আইনের লড়াই।

অরবিন্দ ঘোষ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কানাইলাল দত্ত প্রভৃতি বিপ্লবীকে পুলিশ গ্রেফতার করে, এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয় তা আলিপুর বোমার মামলা নামে খ্যাত। আলিপুর আদালতে সেই মামলা হয়। ইংরেজের পক্ষে রয়েছেন নামকরা সব ব্যারিস্টার, অরবিন্দ ঘোষ প্রভৃতির পক্ষে দাঁড়ালেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর আগুন ঝরা সওয়াল শুনে ইংরেজ জজ বাধ্য হলেন অরবিন্দ ঘোষ ও অন্যান্য অনেক বিপ্লবীকে বিচারে মুক্তি দিতে। চিত্তরঞ্জন দাশের সুযোগ্য সহযোগী ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। এরপরে চিত্তরঞ্জন দাশ স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না।

তিনি বিশ্বাস করতেন মহাত্মা গান্ধী প্রদর্শিত অহিংস পন্থা। চিত্তরঞ্জনের জনপ্রিয়তা দেখে ইংরেজ সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করলো যাতে স্বাধীনতা আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যায়। এই সময় দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতাকে জেলে পাঠিয়ে দেয় ইংরেজ সরকার। চিত্তরঞ্জনের ডাকে দেশের তরুণ বিপ্লবীরা হিংসাত্মক কাজ ছেড়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন। দেশের কাজে নিজের বসত বাড়িও তিনি দান করে দেন। সেই বাড়িতে স্থাপিত হয়েছে চিত্তরঞ্জন সেবাসদন হাসপাতাল। স্বারাজ্য দল গঠিত হয়। সেই দলের তিনি ছিলেন বাংলার শীর্ষ নেতা যার মুখপত্র ছিল ফরোয়ার্ড।

দেশবন্ধু সম্মান, কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ও সাহিত্যানুরাগ

দেশের মানুষ তাঁকে ভালোবেসে দেশবন্ধু নামে ভূষিত করেন। তিনি ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র। তাঁর ছিল গভীর সাহিত্যানুরাগ। তিনি লিখেছেন অনেক বই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অন্তর্যামী, মালঞ্চ, সাগর সঙ্গীত প্রভৃতি।

দেহত্যাগ

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু হয় ১৯২৫ সালের ১৬ই জুন দার্জিলিং-এ। তাঁহর মৃত্যু সংবাদে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

আরও পড়ুন – মহাত্মা গান্ধী প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment