‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ ছোটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক?
আড়ম্বরহীন ঘটনা
কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ শীর্ষক গল্পে ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য মেনেই আড়ম্বরহীন কাহিনির শর্ত রক্ষিত হয়েছে। গল্পের কাহিনি-কথকের সবান্ধবে তেলেনাপোতা আবিষ্কার, মাছ ধরার নেশা পূরণ করতে গিয়ে যামিনীর সঙ্গে আলাপ, তার প্রতি অনুরক্ত হওয়া, যামিনীর মায়ের কাছে মিথ্যে নিরঞ্জন সেজে যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া, যামিনীর নিরাশ মনে আশার প্রদীপ জ্বালানো, পরিশেষে নগরে এসে তেলেনাপোতাকে ভুলে যাওয়া-এই পরম্পরায় সমাপ্ত হয়।
সংক্ষিপ্ততা
আলোচ্য গল্পের গদ্য বিবরণধর্মী, সংক্ষিপ্ত, সংযত। লেখক ভাববাচ্যের বর্ণনাভঙ্গি এনে গল্পবিবরণকে প্রাণবন্ত করেছেন। চরিত্রগুলো কখনো-কখনো নিজস্ব সংলাপবর্জিত হয়েছে এবং ভাববাচ্যের বাক্যগঠন সে অভাব পূরণ করে গদ্যভঙ্গিকে সম্ভাবনাময় শিল্পরূপ দান করেছে।
রোমান্টিকতা
আধুনিক ছোটোগল্পে গীতিকাব্যের যে বন্ধন এবং রোমান্টিকতা ফুটে ওঠে, এ গল্পেও তা বারবার দেখা যায়। ছোটোগল্পে বিশেষ বিশেষ ঘটনার ব্যঞ্জনা প্রতীকায়িত হয়-এ গল্পে সে লক্ষণও বারবার প্রকাশিত। তেলেনাপোতার, সভ্যতার আলোবর্জিত জীবন কথকের বর্ণনায়-
“কিন্তু মনে হবে এখানে রাত কখনও ফুরোয় না।”
অথবা, যামিনীর সঙ্গে হৃদয়সম্পর্ক তৈরি হওয়ার দিনের সকাল বর্ণনায় ইঙ্গিতবাহী হয়ে ওঠে-
“যখন জেগে উঠবেন অবাক হয়ে দেখবেন, এই রাত্রির দেশেও সকাল হয়।”
ব্যঞ্জনাগর্ভ সমাপ্তি
ব্যঞ্জনা সৃষ্টির এক অসাধারণ কৌশল গল্পটিকে চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে। গল্পকারের লিখনশৈলীর গুণে পাঠকমনে এই প্রত্যাশা জন্মেছিল যে, নায়ক হয়তো পুনরায় তেলেনাপোতায় ফিরে আসবে। কিন্তু শহরে গিয়ে নায়ক রোগাক্রান্ত হওয়ার দরুন সেই প্রতিশ্রুতি ক্রমশ ফিকে হয়ে যায়। তাই “একবার ক্ষণিকের জন্যে আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে।” গল্পের এই ধরনের পরিণামী ব্যঞ্জনার মধ্যে ছোটোগল্পের সার্থকতা নিহিত।
আকস্মিক সমাপ্তি
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি ‘a single impression of reader’ তৈরিতে সক্ষম। কাহিনি ও ঘটনার একমুখী প্রবাহ এ গল্পে বজায় আছে। গল্পের পরিণামী ব্যঞ্জনা সমাপ্ত হয় চরম নিরাশায়। সেখানেও ছোটোগল্পের ধর্ম বজায় রাখতে লেখক সক্ষম। তাই ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ এক অভিনব, সার্থক ছোটোগল্প।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর