গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম ‘সাংখ্য-যোগ’ কেন? এই শিরোনামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিষয়
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধে অর্জুন যখন বিষাদাক্রান্ত হয়ে অস্ত্র পরিত্যাগ করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত কর্তব্যের শিক্ষা প্রার্থনা করেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে নিষ্কাম কর্মতত্ত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেন।
তিনি প্রথমে অর্জুনকে আত্মতত্ত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেন। অবিনাশী আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে উপদেশ দেওয়ার পর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন স্বজনবধের আশঙ্কায় তাঁর শোক করা উচিত নয়। আত্মা হল নিত্য। তাকে বধ করা যায় না। দেহ বিনষ্ট হলেও আত্মার বিনাশ নেই। ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয় ইত্যাদিকে তুল্যজ্ঞান করে স্বধর্ম পালনের জন্য শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দেন। সমত্ববুদ্ধিযুক্ত হয়ে যুদ্ধ করলে পাপ অর্জুনকে স্পর্শ করবে না।
সাংখ্য-যোগ- শিরোনামের তাৎপর্য
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আত্মতত্ত্ব সম্পর্কে যে জ্ঞান দিলেন তাকে বলা হয় সাংখ্য। সাংখ্য মতে আত্মজ্ঞানে জীবের মুক্তি। আত্মজ্ঞান লাভ করতে হলে প্রথমে নিষ্কাম কর্মের পালন করতে হয়। তবেই চিত্ত শুদ্ধ হয়। কর্ম হল বন্ধনের কারণ। আত্মজ্ঞান লাভ হলে মুক্তি সম্ভব। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সাংখ্যবুদ্ধির সঙ্গে যোগবুদ্ধিকে যুক্ত করতে বলেছেন এবং কর্মকে বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করে নিষ্কাম কর্মসাধনের উপদেশ দিয়েছেন। প্রশ্ন হতে পারে যে কর্ম যদি বন্ধনের কারণ হয়, কর্মত্যাগ করাই তাহলে ভালো। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কেন সেক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে বলেছেন? এই আশঙ্কার উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘হে অর্জুন সাংখ্য মতেও চিত্তশুদ্ধির জন্য স্বধর্মোচিত কর্ম অর্থাৎ ধর্মযুদ্ধ করা আবশ্যক।’ এ পর্যন্ত সাংখ্যবুদ্ধির কথা বলার পর কর্মযোগের কথা শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন। এই বুদ্ধির সাহায্যে কর্ম করলে সেই কর্ম বন্ধনের কারণ হয় না। সুতরাং এই অধ্যায়ে সাংখ্য ও কর্মযোগের উপদেশ দেওয়া হয়েছে বলে অধ্যায়টির নাম সাংখ্য-যোগ।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ