গান্ধিজির অহিংস নীতিটি সম্পর্কে টীকা লেখো
গান্ধিজির চিন্তাধারার প্রধান ভিত্তি হল অহিংস নীতি। সারাজীবন অহিংসাকে তিনি ধ্রুবতারার মতো অনুসরণ করেছেন। তাঁর কাছে অহিংসা ছিল একটি ইতিবাচক আদর্শ। সনাতন ভারতীয় ঐতিহ্য, নৈতিক মূল্যবোধ, সৎ জীবন, ধর্মের প্রতি অগাধ নিষ্ঠা গান্ধিজিকে অহিংসার পথে চলতে শিখিয়েছিল।
অর্থ
সাধারণ অর্থে অহিংসা বলতে বোঝায় অন্যকে হিংসা না করা বা অন্যের ক্ষতি না করা। যদিও গান্ধিজি সংকীর্ণ অর্থে অহিংসাকে গ্রহণ না করে, ব্যাপক ও ইতিবাচক অর্থে গ্রহণ করেছেন। তাঁর কাছে অহিংসার অর্থ হল হিংসার নিবৃত্তি, আত্মোৎসর্গ, অপরের প্রতি সমভাব এবং চরম নিঃস্বার্থপরতা।
বৈশিষ্ট্য
গান্ধিজির অহিংসার বৈশিষ্ট্যগুলি হল
1 এক ইতিবাচক আদর্শ যেখানে ভীরুতা বা কাপুরুষতার স্থান নেই।
2 অহিংসা কোনো নিষ্ক্রীয় প্রতিরোধ নয়।
3 অহিংসা হল এক ঐশ্বরিক শক্তি।
4 আত্মপীড়নের মাধ্যমে অহিংসা দ্বারা হিংসার প্রতিরোধ করতে হবে।
5 অহিংসা মানব মনে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায়।
6 সত্যকে অর্জন করাই হল অহিংসার প্রধান লক্ষ্য ইত্যাদি।
উৎস
জন রাস্কিন, লিও টলস্টয়, গীতা, বাইবেল ইত্যাদি অধ্যয়ন করে গান্ধিজির অহিংস নীতিতে বিশ্বাস জন্মেছিল। তাঁর মতে, অহিংসায় বিশ্বাসী ব্যক্তি সর্বদা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করবে, বিনা শ্রমে নয়।
সমালোচনা
বিভিন্ন দিক থেকে মহাত্মা গান্ধির অহিংস নীতিটি সমালোচিত হয়েছে। যথা-
[1] আধ্যাত্মিক প্রকৃতির: ঈশ্বরে অবিশ্বাসী মানুষের কাছে অহিংস নীতির কোনো মূল্য নেই, কারণ গান্ধিজির অহিংস নীতিটি অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক প্রকৃতির।
[2] বাস্তবে অপ্রাসঙ্গিক: ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে গান্ধিজির অহিংস নীতি অচল ও অবাস্তব।
[3] ব্যক্তিগত বলিদান: গান্ধির অহিংস নীতি সর্বদা ব্যক্তিগত বলিদানের সঙ্গেই জড়িত।
মূল্যায়ন
গান্ধিজির অহিংস নীতিটি সমালোচনার শিকার হলেও বর্তমান বিশ্বে এই নীতি আজও প্রাসঙ্গিক। হিংসা কোনোদিন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। এমনকি মনে রাখা দরকার বৃহৎ উদ্দেশ্যে হিংসার প্রয়োগ করা যেতে পারে। কোনো মানুষ বা প্রাণীর দূরারোগ্য ব্যাধি বা কষ্টের উপশমে প্রাণীহত্যাকেও সমর্থন করেছিলেন। যাই হোক, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে অহিংস নীতির আদর্শ প্রচারিত হলেও গান্ধিজির মতো ব্যপকভাবে এই আদর্শের প্রচার কেউ করেননি, এখানেই গান্ধিজির বিশেষত্ব।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর