একদলীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করো
প্রভাবশালী একদলীয় শাসন হল কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার একটি রূপ, যেখানে একটি একক রাজনৈতিক দল সমগ্র ভূখণ্ডে আধিপত্য বিস্তার করে। মূলত কমিউনিস্ট দেশগুলিতে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদ দেখা যায়।
একদলীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ
এই শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
একক দলের প্রাধান্য: এই শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিতে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য থাকে এবং ওই দলই ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন ও সরকারি ক্ষমতা ভোগদখল করে থাকে। বিরোধী দলের উপস্থিতি থাকলেও তা নামমাত্র। ফলে প্রাধান্যকারী দল বৃহৎ ব্যবধানে নির্বাচনে জয়লাভ সুনিশ্চিত করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর নিয়ন্ত্রণ: প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যথা-বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েমের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থরক্ষাকে সুনিশ্চিত করে।
নির্বাচনি গুরুত্বহীনতা: শাসনব্যবস্থায় নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দল স্বাধীনভাবে নির্বাচন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে না। নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় না। ফলস্বরূপ, দীর্ঘদিন ধরে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন থাকে।
প্রচার ও তথ্যের নিয়ন্ত্রণ: প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক তথ্যের সম্প্রচারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে নিজেদের ভাবমূর্তি বজায় রাখার চেষ্টা করে।
বিরোধীদের দমন: রাজনৈতিক বিরোধিতাকে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে দমন করা হয়। এক্ষেত্রে বিরোধীদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ, কারাবাস প্রদান, আইনি হয়রানি ইত্যাদির প্রয়োগ করা হয়।
অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: প্রভাবশালী দলই মূলত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে দলীয় সমর্থকদের আনুগত্য নিশ্চিত করতে পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। শিল্প ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত হয়। এমনকি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা আবশ্যক, নতুবা অনুমতি বা লাইসেন্স পাওয়া যায় না।
পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি : প্রভাবশালী দল প্রায়শই পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ক্ষমতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়। মূলত দলীয় সমর্থকদের নানান সুবিধা প্রদান ও সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে কর্তৃত্বকারী দল পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করে।
উদাহরণ: প্রভাবশালী দলীয় শাসনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল-গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের কমিউনিস্ট দলের শাসন (১৯৪৯ খ্রি.-বর্তমান পর্যন্ত)।
এরূপ শাসনব্যবস্থাগুলি নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ইত্যাদিকে স্বীকৃতির মাধ্যমে নিজেদের গণতান্ত্রিক নীতিসম্মত হিসেবে উপস্থাপন করে।
আরও পড়ুন –
১। ব্যাপক ও সংকীর্ণ অর্থে গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়? গণতন্ত্রের সর্বাধুনিক সংজ্ঞাগুলি আলোচনা করো
২। গণতন্ত্রের উদ্ভবের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো
৩। গণতন্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
৪। গণতন্ত্রের প্রকৃতি আলোচনা করো
৫। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
৬। গণতন্ত্র কাকে বলে? এর বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো
৭। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝো? এইরূপ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধাগুলি আলোচনা করো
৮। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের দোষ বা অসুবিধাগুলি আলোচনা করো
৯। প্রতিনিধিত্বমূলক বা পরোক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়? এইরূপ গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
১০। পরোক্ষ গণতন্ত্রের সপক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো
১১। পরোক্ষ গণতন্ত্রের বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো
১২। উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
১৩। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র কাকে বলে? সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
১৪। গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করো
১৫। গণতন্ত্রের পক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো।