আন্তর্জাতিক আইনের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি আলোচনা করো

আন্তর্জাতিক আইনের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি আলোচনা করো

আন্তর্জাতিক আইনের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি আলোচনা করো
আন্তর্জাতিক আইনের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি আলোচনা করো

আন্তর্জাতিক আইনের পথে প্রতিবন্ধকতা

আন্তর্জাতিক আইনকে আইন বলা যায় কিনা সে বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। আন্তর্জাতিকতাবাদীগণ আন্তর্জাতিক আইনকে আইনের মর্যাদা দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন বলে স্বীকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে কতকগুলি প্রতিবন্ধকতা লক্ষ করা যায়। এগুলি হল-

[1] শক্তিশালী রাষ্ট্র: আন্তর্জাতিক আইন বলে পরিগণিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো বাধা হল শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি মানুষকে শক্তিশালী করে তুলেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন প্রকার মারণাস্ত্রে নিজেদের সজ্জিত করে তুলেছে। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক আইনকে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে চলেছে।

[2] সার্বভৌম রাষ্ট্র: আন্তর্জাতিক আইন বলে গণ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণাও একটি বড়ো বাধা। রাষ্ট্রগুলি তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার দাবি ছাড়তে নারাজ। ফলে বহু ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করে বলপ্রয়োগ করে থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক আইন অসহায় হয়ে পড়ে।

[3] ঠান্ডা লড়াই: আন্তর্জাতিক আইনের পথে ঠান্ডা লড়াইও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক আইনকে অমান্য করে চলেছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ স্বার্থ রক্ষার প্রয়াস আন্তর্জাতিক আইনের পথে অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

[5] আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা: ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির মধ্যেকার সম্পর্কও আন্তর্জাতিক আইনের অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এই সমস্ত রাষ্ট্রগুলির অসম অর্থনৈতিক বিকাশ একজনকে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর আধিপত্য বিস্তারের সবসময় সচেষ্ট থাকে। ফলে নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক আইনের যাবতীয় বাধানিষেধকে উপেক্ষা করতে কিছুমাত্র পিছপা হয় না।

[6] অবিধিবদ্ধ: এখনও আন্তর্জাতিক আইনকেও সুনির্দিষ্টভাবে বিধিবদ্ধ করা সম্ভবপর হয়নি। এ ছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নের কোনো কর্তৃপক্ষ গড়ে ওঠেনি।

[7] বলবৎ করার কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিস্থতি: আন্তর্জাতিক আইনের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হল আন্তর্জাতিক আইনকে বলবৎ করার মতো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অভাব। যদিও আন্তর্জাতিক আদালত আছে তবুও আন্তর্জাতিক আইন অমান্যকারী রাষ্ট্রকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক আদালতের নেই।

[৪] বৃহৎ শক্তিসমূহের মতপার্থক্য: আন্তর্জাতিক আইনের আইন হিসেবে প্রতিপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল বৃহৎ শক্তিগুলির মতপার্থক্য। বৃহৎ শক্তিগুলির পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সহযোগিতার অভাব এক্ষেত্রে প্রকট হয়ে উঠেছে। যতদিন না বৃহৎ শক্তিগুলি আন্তর্জাতিক আইনকে আইন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মতৈক্যে উপনীত হতে পারছে ততদিন আন্তর্জাতিক আইনের আইন পদবাচ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দূরীভূত হবে না।

মন্তব্য: মানবজাতির স্বার্থেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিবন্ধকতাগুলি দূরীভূত হওয়া প্রয়োজন। কেন-না বৃহৎ শক্তিগুলির পারস্পরিক সন্দেহ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলি যদি তাদের একটু স্বার্থ ত্যাগ করে আন্তর্জাতিক আইনকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment