আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা (5 Marks)

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা
আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা

ভূমিকা: নামকরণ হল সাহিত্যপুরীর সিংহদ্বার। নামকরণের মধ্যেই বিষয়বস্তুর আভাস থাকে। সাহিত্যে সাধারণত বিষয়ানুসারী, চরিত্রানুসারী বা ব্যঞ্জনানুসারী নামকরণ হয়ে থাকে।

পাঁচটি দৃশ্যে বিন্যস্ত, একটি অঙ্কবিশিষ্ট ‘আগুন’ (১৯৪৩) নাটকটির শিরোনামেই নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য নাটকটির বিষয়বস্তুর আভাস দিয়েছেন। কিন্তু এ নাটকের নাম যে কেন ‘আগুন’ হল, ঘটনাধারা বিশ্লেষণ করলেও শেষ দৃশ্যের আগে সেটা বোঝা কঠিন।

প্রথম দৃশ্যের শুরুতেই ‘পুরুষ’ চরিত্রটির প্রথম উক্তির মাঝে নাট্যকারের বর্ণনায় ‘আগুন’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে-“অস্পষ্ট আলোয় বিড়ির আগুনের আনাগোনা বেশ সুস্পষ্ট।”

তৃতীয় দৃশ্যের শুরুতেই জানা যায় সতীশের মেয়ের নাম ফুলকি। এ নামের অর্থে আগুনের আভাস আছে। ‘ফুলকি’ মানে স্ফুলিঙ্গ। এই দৃশ্যেই সতীশের চতুর্থ সংলাপে আগুনের ব্যঞ্জনা প্রথম স্পষ্ট হয়ে ওঠে-যা শেষ দৃশ্যে আরও বিশদে প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় দৃশ্যে সতীশ বলেছে-“এখন সকালবেলাই তো আবার পেটে আগুন লেগে গেছে।”

চতুর্থ দৃশ্যের প্রথমেই হরেকৃয়র উক্তিতে আক্ষরিক অর্থে আগুনের প্রসঙ্গ আসতে আসতেও আসেনি, এসেছে উনুনের প্রসঙ্গ। কিন্তু কয়লার অভাবে সে উনুনে আগুন জ্বলেনি-“চা নেই, চিনি নেই, খালি আছে চুলোটা। তাও আবার কয়লার অভাব।”

নাটকের প্রায় শেষের দিকে, পঞ্চম দৃশ্যে ‘আগুন’ নামের মাহাত্ম্য বোঝা যায়। চালের লাইনের ভিড়ে সিভিক গার্ডের ঔদ্ধত্যে সবাই ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত হয়ে ওঠে। লাইন ভেঙে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। বাগ্বিতণ্ডা, গালিগালাজ চলতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে জনৈক যুবক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে বলে-‘আগুন! আগুন!’ মুহূর্তে গোলমাল থেমে যায়। জনতা জানতে চায় কোথায়, কীসের আগুন? যুবক হাতজোড় করে বলে-“আগুন! আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে”। এই ‘পেটের আগুন’ অর্থাৎ খিদের আগুনের কথা এর আগেও সতীশ বলেছে। এখানেই নাটকের নামকরণ ব্যঞ্জনাবহ হয়ে ওঠে।

মন্বন্তরপীড়িত, দুর্ভিক্ষতাড়িত বাংলায় সাধারণ গরিব থেকে মধ্যবিত্ত মানুষ সকলেই ভুখা, নিরন্ন হয়ে আছে। একেই অনাবৃষ্টিতে চাষবাস না হওয়ায় ফসল ফলেনি, মাঠে ফসল যেটুকু যা ছিল তা মাঠেই শুকিয়ে • গিয়েছে। বেশি পয়সা দিয়েও চাল-ডাল-চিনি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় – খাদ্যদ্রব্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। সুযোগ বুঝে মজুতদাররা কালোবাজারি শুরু করেছে। ফলে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

সার্থকতা বিচার

একদিকে অসহায় মানুষের খিদের আগুন, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদীরা লাগিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩১-১৯৪৫) আগুন। স্বার্থান্বেষী মজুতদার, কালোবাজারিদের লোভের আগুন মানুষের খাদ্যসুরক্ষাকে গ্রাস করেছে। সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা লোভের কাছে বশ মেনেছে। মন্বন্তরকে উপলক্ষ্য করে, মনুষ্যসৃষ্ট নানাবিধ আগুন অসহায় মানুষের পেটের আগুনকে দ্বিগুণ করে তোলায়, বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।

তাই সবদিক বিচার করে বলা যায়, ‘আগুন’ নাটকের নামকরণ অত্যন্ত ব্যঞ্জনাধর্মী ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

1 thought on “আগুন নাটকের নামকরণের সার্থকতা (5 Marks)”

  1. আপনি কোন theme ব্যবহার করেন ? জানালে খুব উপকৃত হবো ।

    Reply

Leave a Comment