আইনের বিভিন্ন উৎস বর্ণনা করো

আইনের বিভিন্ন উৎস বর্ণনা করো

আইনের বিভিন্ন উৎস বর্ণনা করো
আইনের বিভিন্ন উৎস বর্ণনা করো

আইনের উৎস

বাস্তবে সার্বভৌম শক্তির অনুমোদনকে আইনের একমাত্র উৎস বলে অভিহিত করা হলেও নানারকম সামাজিক শক্তি আইনের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের মতো আইনও ঐতিহাসিক বিবর্তনের ফল। বিশিষ্ট আইনবিদ হল্যান্ডের মতে, আইনের মুখ্য উৎসগুলি হল-প্রথা, ধর্ম, বিচারালয়ের রায়, ন্যায়বিচার, বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ও আইনসভা প্রণীত আইন (The sources of law are custom, religion, judicial deci- sions, scientific discussions, equity and legislation.) ।

[1] প্রথা: আইনের সবচেয়ে প্রাচীন উৎস হল প্রথা। প্রথা হচ্ছে সমাজজীবন থেকে সৃষ্ট সেইসব নিয়মকানুন যা ব্যক্তির বা সমষ্টির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাচীন সমাজে প্রথার সাহায্যে দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা হত। কালক্রমে, এইসব প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও বিধিবদ্ধ হয় এবং আইনের মর্যাদা লাভ করে। বাস্তবে কোনো রাষ্ট্রই প্রথাকে উপেক্ষা করে, আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আধুনিককালে অনেক রাষ্ট্রের আইনের মধ্যে প্রথাগত বিধানের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যেমন, ব্রিটেনে অলিখিত সংবিধানের বেশিরভাগটাই সেখানকার রীতিনীতি ও প্রথার ওপর নির্ভরশীল।

[2] ধর্ম: আইনের অন্যতম প্রাচীন উৎস হল ধর্ম। প্রাচীনকালে প্রায় সব সামাজিক প্রথাই ছিল ধর্মভিত্তিক। ধর্মীয় বিধিভঙ্গ ছিল নীতিবিরুদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতিনীতি প্রাচীন সমাজজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এভাবে ধর্মীয় অনুশাসন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আইনের বিবর্তনে সহায়তা করেছিল।

[3] বিচারব্যবস্থা: বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আদিম সমাজে রাজা বা দলপতির ওপর বিচারের ভার দেওয়া হত। ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে এই বিচারকরা যেসব রায় দিতেন, তা পরবর্তীকালে বিচারকার্যে আইন হিসেবে গণ্য হত। বর্তমানেও অনেক সময় এইভাবে বিচারের রায় আইন সৃষ্টি করে।

[4] ন্যায়বিচার: আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ন্যায়বিচার। দেশে প্রচলিত আইনকানুনের সাহায্যে কোনো ক্ষেত্রে যদি ন্যায়বিচারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব না হয়, তাহলে বিচারপতিগণ নিজস্ব বিচারবুদ্ধি ও ন্যায়নীতিবোধ অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করেন। এর ফলেও নতু। আইনের সৃষ্টি হয়।

[5] আইনজ্ঞদের আলোচনা: বিভিন্ন মামলাকে কেন্দ্র করে এবং আইন-সংক্রান্ত বিষয়ে সুপন্ডিত ব্যক্তিদের মতামত ও সিদ্ধান্ত আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে। আইনের ওপর আইনজ্ঞদের আলোচনা, ভাষ্য, টীকা ইত্যাদি কোনো মামলার রায়দানের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। ব্ল‍্যাকস্টোন, কোক প্রমুখের বক্তব্য ব্রিটেনের আইনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। আমাদের দেশে মনু প্রমুখ স্মৃতি- শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকার হিন্দু-আইনের সংস্কারসাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

[6] আইনসভা: বর্তমান যুগে আইনসভা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে আইন প্রণয়ন হল আইনের প্রধান উৎস। আইনসভার সদস্যরা জনমতের সঙ্গে সংগতি রেখে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করেন। জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে ব্যাপক দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য যেসব আইনের প্রয়োজন হয়, তা তৈরি করে আইনসভা। এর ফলে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, প্রথা, ধর্ম ইত্যাদি উৎসের গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

উপসংহার: উড্রো উইসলনের মতামত প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রথা আইনের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন উৎস হলেও ধর্মও একই সময়ে আইন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। পরে বিচারকের রায় এবং ন্যায়বিচার আইনের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আধুনিককালে আইনসভা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে আইন প্রণয়ন এবং আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা আইনের প্রধান উৎস হিসেবে গণ্য হয়। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনের অর্থ ও প্রকৃতির বদলের পাশাপাশি, আইনের উৎসগুলির গুরুত্বও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment