ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা
ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা

ভূমিকা

সমগ্র জাতির ভাগ্যাকাশে আজ ঘনিয়ে এসেছে এক ঘোরতর দুর্যোগের রাত। স্বাধীনতা লাভের পরে এমন দুর্যোগ আর কখনও আসেনি। এখন সারা দেশের বিভিন্ন অংশে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই সমস্যা যে শুধু ভারতে তা নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রেও। ভারতে চলছে নানা চক্রান্ত-সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা, রাজনৈতিক ভেদাভেদের চক্রান্ত এবং সাথে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাসবাদ। ভারতের জাতীয়সংহতি তাই আজ বিপন্ন। ভারত-আত্মা তাতে শিহরিত, ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত তাঁর শরীর। এই সমস্যা বাধা সৃষ্টি করছে উন্নয়নে, তৈরী করছে অস্থিরতা। এরূপ সমস্যার মূলে আছে নানা চক্রান্ত।

সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ ব্যবসা, জাল নোটের সমস্যা, অস্ত্রপাচার, সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা সন্ত্রাস সৃষ্টি, আন্তঃসীমান্ত সমস্যাও সন্ত্রাসবাদ যার ফলে জনজীবনের শান্তি যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি সরকারকেও করছে বিব্রত। ২০১০ সালে জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরন ঘটেছিল, ছত্রিগড়ে ছিয়াত্তর জন পুলিশকর্মীকে ২০১০সালে এবং ২০১৪ সালের ১১ই মার্চ একই স্থানে পনেরো জন সি আর পি এফ জওয়ান ও পাঁচজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদীরা। আমেরিকা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বাড় বাড়ন্ত।

বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস বাদের ঘটনা

কুটকৌশলী ইংরেজ ভারতে যে দ্বিজাতি তত্ত্বের বীজ বপন করেছিল তার বিষময় পরিণামে দেখা দেয় বিভীষিকাময় দাঙ্গা ১৯৪৬ সালে। শান্তি-বিরাজিত কাশ্মীরে অশান্তির সূত্রপাত তখন থেকেই। বর্হিশক্তির মদতে জম্মু-কাশ্মীরের বুকে সন্ত্রাসবাদের ফলে মানুষের রক্তে লাল হয়েছে সেখানের মাটি। পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে উগ্রপন্থীদের সমরখাঁটি গড়ে ওঠে। বাধ্য হয়ে ১৯৮৪ সালের ৩রা জুন পাঞ্জাবের অমৃতসরে স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশ করল সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা লাভের পরে ভারতে কায়েমী স্বার্থের চক্রান্তে জেগে উঠেছে প্রাদেশিকতা, আঞ্চ লিকতা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। ভারতে নিত্যনতুন রক্তাক্ত সংঘাতও উগ্রপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বার্থে-কলুষিত এক ঘৃণ্য চক্রান্তেরই প্রকাশ। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের থেকে এসে এদেশে সন্ত্রাসবাদীদের মদতে রক্তক্ষয়ী ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটতে দেখা যায়।

২০১৩ সালে মুম্বাই, বাঙ্গালোরে দাঙ্গার গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাসবাদীরা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করল ভয়ার্ত এক পরিবেশ। এখানে সন্ত্রাসবাদীদের ‘স্লিপার সেল’, নতুন নতুন মডিউল রয়েছে এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত সাতচল্লিশটি মুখ্য সন্ত্রাসের মামলার তদন্ত ও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং এগারোটি নতুন মামলা N/A এর কাছে পাঠান হয়েছে ও একটি ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদীকে চুড়ান্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মাওবাদী কার্যকলাপে ভারত প্রশাসন খুবই চিন্তিত। তাই মাওবাদী কার্যকলাপ দমনের জন্য ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে মাওবাদী রাজ্যগুলির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মঞ্জুর করেছে ‘ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি’। বিভিন্ন রাজ্য সর্তকতা অবলম্বন করেছে মাওবাদী কার্যকলাপ রুখতে। অসম, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে আগের থেকে সন্ত্রাসবাদের ঘটনা কম ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসবাদ দমনে আশাপ্রদ উন্নতি ঘটেছে।

সন্ত্রাসবাদ দমনে আধুনিক ব্যবস্থা

সি আর পি এফ, বি এস এফ, আই টি বিপি, এস এস বি, আসাম রাইফেলস্ প্রভৃতি আধা সামরিকবাহিনীকে অত্যাধুনিক অস্ত্র, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাইন প্রোটেকটেড ভেহিকেল, নাইট ভিশন ইকুইপমেন্ট, এ উ এ ভি প্রভৃতি প্রদান করা হয়েছে মাওবাদীদের প্রতিরোধ করতে। তবে ঝাড়খন্ড, ছত্রিশগড় প্রভৃতি রাজ্যে এখনও মাওবাদীরা খুব সক্রিয়।

উপসংহার

মাওবাদী সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু প্রশাসনকে শক্তিশালী হলে চলবে না, নাগরিকদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। মাওবাদীরা রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে উদ্যোগী। রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাও সবসময় আশাপ্রদ নয়। তারাও ক্ষমতালাভের লোভে অনেক সময় এমন আচরণ করে যে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। আন্তরিকতার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত যারা তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে সরকারকে এবং উপদ্রুত অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে সেখানের মানুষের বিবেকবোধকে জাগ্রত করা ও সরকারের প্রতি গভীর আস্থা ফিরিয়ে আনাও প্রয়োজন। সংবিধানের ৩৬৫নং ধারা অনুসারে সরকার যেকোন মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চ লে আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে দ্রুত অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। জনসাধারণ সজাগ না হলে সরকারী প্রচেষ্টা সহজে সফল হওয়া কঠিন হবে।

আরও পড়ুন – ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment