ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান

ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান | Organs of the Indian Governments (4th Chapter) Question Answer Class 12 Semester IV

ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর
ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন উত্তর

1. ভারতের রাষ্ট্রপতি কাদের দ্বারা নির্বাচিত হন?
অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতিকে কারা নির্বাচন করেন?

উঃ ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচকমণ্ডলী:

ভারতীয় সংবিধানের ৫৪নং ধারায় রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একটি ‘নির্বাচক সংস্থা’ কর্তৃক ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচক সংস্থা গঠিত হয় ভারতীয় সংসদ বা পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং রাজ্য আইনসভা অর্থাৎ বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে। এ ছাড়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি ও পুদুচেরির নির্বাচিত সদস্যরাও এই নির্বাচন মণ্ডলীর সদস্য হয়ে থাকেন।

2. ভারতের রাষ্ট্রপতিকে কি কারণে অপসারণ করা যায়? ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি কী?

উঃ অপসারণের কারণ সংবিধানের ৬১নং ধারা অনুযায়ী সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করা যায়। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে পার্লামেন্টের যে-কোনো কক্ষেই এই প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

ইমপিচমেন্ট: সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির অপসারণ পদ্ধতিকেই ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি বলে।

3. চরম ভিটো বলতে কী বোঝায়?

উঃ চরম ডিটো অর্থবিল বা সংবিধান-সংশোধনী বিল ছাড়া অন্য যে-কোনো বিলে অসম্মতি জানাবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। রাষ্ট্রপতি অসম্মতি জ্ঞাপন করলে বিলটি বাতিল বলে গণ্য হয়। একে রাষ্ট্রপতির চরম ভিটো ক্ষমতা বলে। মন্ত্রীপরিষদশাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি কোনো সরকারি বিলে সাধারণত অসম্মতি জ্ঞাপন করেন না।

4. স্থগিত ভিটো কাকে বলে?

উঃ স্থগিত ভিটো: পার্লামেন্টে পাস হওয়া কোনো বিলকে রাষ্ট্রপতি যখন সরাসরি সম্মতি বা অসম্মতি না জানিয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য পার্লামেন্টের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেন তখন তাকে স্থগিত ভিটো বলে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিলটি পুনরায় পার্লামেন্টে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি তাতে – সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন।

5. পকেট ভিটো কাকে বলে?

উঃ পকেট ভিটো : পার্লামেন্টে কোনো বিল গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরিত হলে তাতে সম্মতি বা অসম্মতি জানানো কিংবা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধানে কোনো সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়নি। ফলে, রাষ্ট্রপতি বিলটিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন। এই ক্ষমতাকে রাষ্ট্রপতির ‘পকেট ভিটো’ সংক্রান্ত ক্ষমতা বলা হয়। সাধারণত কোনো মন্ত্রীসভার স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি ‘পকেট ভিটো’ প্রয়োগ করতে পারেন।

6. অর্ডিন্যান্স কাকে বলে? রাষ্ট্রপতি কখন অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে?

উঃ অর্ডিন্যান্স: অর্ডিন্যান্সের অর্থ হল বিশেষ আদেশ। সংসদের অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতি জরুরি পরিস্থিতিতে যে আইন জারি করেন তাকে অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স বলে।

সংসদের অধিবেশন যখন স্থগিত থাকে তখন জরুরি প্রয়োজনে পার্লামেন্টের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন।

7. দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শনে রাষ্ট্রপতির দুটি ক্ষমতা লেখো।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন। তাঁর এই ক্ষমতা বিচারবিভাগীয় নিরীক্ষণের মধ্যে পড়ে না। এই ক্ষমতাগুলি হল-

ক্ষমা প্রদর্শন: রাষ্ট্রপতি দণ্ড এবং দোষী সাব্যস্ততা উভয়ই বাতিল করে অপরাধীকে সমস্ত শাস্তি (এমনকি মৃত্যুদণ্ড) থেকে সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দিয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন।

শাস্তি হ্রাস: এর মাধ্যমে কঠোর শাস্তিকে অপেক্ষাকৃত হালকা শাস্তিতে পরিবর্তন করতে পারেন।

এ ছাড়া সাজার মেয়াদ হ্রাস, সাজা পরিবর্তন এবং দণ্ডাদেশ স্থগিত করতে পারেন।

8. সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে কাকে অভিহিত করা হয়?

উঃ ‘সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য’ বলে প্রধানমন্ত্রীকে অভিহিত করা হয়। কারণ মন্ত্রীসভায় বা ক্যাবিনেটে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে সভার যাবতীয় কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়। ক্যাবিনেটের নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এমনকি তাঁর পরামর্শক্রমেই রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের নিয়োগ ও পদচ্যুত করতে পারেন।

9. বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কর্মদফতর কাদের নিয়ে গঠিত?

উঃ ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর কর্মদফতর। এই দফতর প্রধানত মুখ্য সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, কয়েকজন উপসচিব ও অন্যান্য কর্মীদের নিয়ে গঠিত। এই দফতরটি মূলত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

10. মন্ত্রীসভার সদস্যগণ কার দ্বারা নিযুক্ত হন? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা কার কাছে দায়বদ্ধ থাকে?

উঃ সংবিধানের ৭৫ (১) নং ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মন্ত্রীসভার সদস্যগণ নিযুক্ত হন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকেন কারণ লোকসভা হল জনপ্রতিনিধি কক্ষ।

11. ভারতের মন্ত্রীসভার দুইটি কাজ লেখো। অথবা, ভারতের ক্যাবিনেটের যে-কোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অতি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উঃ ভারতের মন্ত্রীসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল-

  • জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যাসমূহ পর্যালোচনা করে সুচিন্তিত নীতি নির্ধারণ করা।
  • শাসন বিভাগকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা হল ক্যাবিনেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

12. ভারতীয় সংবিধানে মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্বশীলতা বলতে কী বোঝো?

উঃ যৌথ দায়িত্বশীলতা: সংসদীয় ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভার কোনো একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের দ্বারা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে সমগ্র মন্ত্রীসভারই পদচ্যুতি ঘটে। একেই মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্বশীলতা বলা হয়। অর্থাৎ লোকসভার কাছে মন্ত্রীসভার সমবেতভাবে দায়িত্বশীলতাকে বোঝায়।

13. রাজ্যপালের কার্যকালের মেয়াদ কত দিন? রাজ্যপালকে শপথবাক্য পাঠ করান কে?
অথবা, রাজাপাল কার সম্মুখে শপথবাক্য পাঠ করেন?

উ: সাধারণত রাজ্যপালের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর তবে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্বেই রাজ্যপালকে অপসারিত করতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কিংবা তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রবীনতম বিচারপতি রাজ্যপালকে শপথবাক্য পাঠ করান।

14. রাজ্যপালের ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা’ বলতে কী বোঝো? ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের যে-কোনো একটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা উল্লেখ করো।

উঃ রাজাপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা : রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলতে এমন এক বিশেষ ধরনের ক্ষমতাকে বোঝায়, যা প্রয়োগ করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করতে বাধ্য নন এবং যে ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না।

রাজ্যপালের একটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হল-রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার যে-কোনো বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারেন (২০১নং ধারা)।

15. রাজ্যপালকে প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করার পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।

উঃ রাজ্যপালকে প্রকৃত শাসক বলার পক্ষে যুক্তি: রাজ্যপালকে প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করার পক্ষে দুটি যুক্তি হল- ৪২তম সংবিধান-সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শক্রমে কাজ করতে বাধ্য। কিন্তু রাজ্যপালের এরূপ কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালের সন্তুষ্টির উপর মন্ত্রীদের কার্যকাল নির্ভরশীল।

16. ভারতের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা থাকা আবশ্যক?

উঃ মুখামন্ত্রীর যোগ্যতা: ভারতের সংবিধানে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ যোগ্যতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেমন মুখ্যমন্ত্রী পদে আবেদনকারী ব্যক্তিকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। ন্যূনতম ২৫ বছর বয়স্ক হতে হবে। রাজ্য আইনসভার যে-কোনো কক্ষের সদস্য হতে হবে। রাজ্য আইনসভার সদস্য না হলে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়োজিত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তাকে আইনসভার সদস্য হতে হবে। নতুবা তিনি তার পদ থেকে অপসারিত হবেন।

17. মুখ্যমন্ত্রীর দুটি কাজ লেখো।

উঃ মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখযোগ্য দুটি কার্যাবলি হল- মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন করা এবং প্রতিটি দফতরের কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা। মন্ত্রীসভার বৈঠক আহবান করা এবং বৈঠকে সভাপতিত্ব করা।

18. কাকে ‘রাজ্য ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভবলে আখ্যা দেওয়া হয়?

উঃ রাজ্য ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ। রাজ্য ক্যাবিনেটের নেতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বণ্টন ও পুনর্বণ্টন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীসভার বৈঠক আহবান ও সভার সভাপতিত্ব করার দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত থাকে। এইভাবে রাজ্য আইনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সর্বাত্মক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তাকে ‘রাজ্য ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

19. রাজ্য মন্ত্রীসভার দুটি কাজ লেখ।

উঃ রাজ্য মন্ত্রীসভার কাজ: রাজ্য মন্ত্রিসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল- সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিসমূহ বাস্তবে রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রাজ্যের যাবতীয় আইনের খসড়া বা বিল প্রণয়নে নির্দেশ দান করা।

20. কাদের আমলা বলা হয়? অথবা, আমলাতন্ত্রকে কেন স্থায়ী প্রশাসনের অংশ বলা হয়?

উঃ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে আমলারা নিযুক্ত হন। এদের সঙ্গে নির্বাচনি রাজনীতির কোনো সম্পর্ক থাকে না। ফলে এরা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ক্ষমতায় আসীন থাকেন। রাজনৈতিক নেতাদের মতো কয়েক বছরের জন্য পদে আসীন থাকেন না একারণে তাঁদের প্রশাসকের স্থায়ী অংশ বলা হয়। আর এই অরাজনৈতিক স্থায়ী সরকারি কর্মীদের রাষ্ট্র কৃত্যক (Civil Servant) বা আমলা (Bureaucrat) বলা হয়।

21. কোন শব্দ থেকে আমলাতন্ত্র শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে? অথবা, বুৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্র বলতে কী বোঝায়?

উঃ আমলাতন্ত্র শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ফরাসি শব্দ ‘ব্যুরো’ (Bureau) এবং গ্রিক শব্দ ‘ক্রেটস’ (Kratos) থেকে। ‘ব্যুরো’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় টেবিল বা ডেস্ক অর্থে এবং ‘ক্রেটস’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় শাসন অর্থে। অর্থাৎ বুৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্র বলতে বোঝায় ‘টেবিলকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা’ বা ‘ডেস্ক জব’।

22. আমলাতন্ত্রের দুটি বৈশিষ্টা লেখো।

উঃ আধুনিক শাসনব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের যেসকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

চাকরির স্থায়িত্ব: আমলারা বিভিন্ন শর্ত ও নিয়ম মেনে নিযুক্ত হন এবং একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারেন।

নিরপেক্ষতা: সরকারি আমলাদের রাজনীতি নিরপেক্ষ থেকে কাজ পরিচালনা করতে হয়।

23. আমলাতন্ত্রের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।

উঃ আমলাতন্ত্রের ত্রুটি: আমলাতন্ত্রের দুটি ত্রুটি হল-

উদাসীনতা: আমলাতন্ত্র জনস্বার্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। তারা সর্বদা শাসকদল ও নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করে।

রুটিন মাফিক কাজ : আমলারা সর্বদা বুটিনমাফিক কার্য সম্পাদন করে। ফলে প্রশাসনিক কাজকর্মে ধীর গতি লক্ষ করা যায়।

24. আমলাতন্ত্রকে কয়টি পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও কী কী?

উঃ আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি: বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার তিনটি পদ্ধতি বর্তমান। যথা- অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, আইনগত নিয়ন্ত্রণ।

25. ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উঃ ভারতে অতি প্রাচীনকাল থেকেই আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাটির অস্তিত্ব ছিল। ব্যবস্থাটি ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই গড়ে উঠেছিল। এটি বর্তমানে ভারতীয় শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী অংশ রূপে বিবেচিত হয়। ভারতের রাষ্ট্রকৃত্যক তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যকসমূহ, রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যকসমূহ এবং সর্বভারতীয় কৃত্যকসমূহ।

26. সর্বভারতীয় কৃতাকসমূহ কীভাবে গঠিত হয়?

উঃ সংবিধানের ৩১২নং ধারায় বলা হয়েছে রাজ্যসভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের প্রস্তাব অনুসারে জাতীয় স্বার্থে সর্বভারতীয় কৃত্যক গঠন করা যেতে পারে। এরা রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ের হয়েই কার্য সম্পাদন করে থাকে। মূলত ভারতীয় প্রশাসন কৃত্যক (IAS), ভারতীয় পুলিশ কৃত্যক (IPS) প্রভৃতি পদগুলি এর অন্তর্গত।

27. ভারতে আমলা হতে গেলে কী কী যোগ্যতা লাগে?

উ: ভারতে জনপালনকৃত্যক বা আমলা হতে গেলে ব্যক্তির বেশকিছু যোগ্যতা লাগে। এগুলি হল- ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, বয়স ২১-৩২ বছর-এর মধ্যে হতে হবে, স্নাতক বা সমতুল্য ডিগ্রিধারী হতে হবে।

28. পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি কটি তালিকাভুক্ত ও কী কী? এবং বর্তমানে কটি করে বিষয় কোন্ তালিকাভুক্ত আছে?

উঃ পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি ৩টি তালিকাভুক্ত। যথা-

কেন্দ্রীয় তালিকা: বর্তমানে ১০০টি বিষয় এই তালিকার অন্তর্গত। যথা-প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি।

রাজ্য তালিকা: বর্তমানে ৬১টি বিষয় এই তালিকার অন্তর্গত। যথা-জনস্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি।

যুগ্ম তালিকা: বর্তমানে ৫২টি বিষয় এই তালিকার অন্তর্গত। যথা- বিবাহ, শিক্ষা ইত্যাদি।

29. ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা কী নামে পরিচিত? সংবিধানের কত নং ধারায় কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে?

উ: ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা পার্লামেন্ট বা সংসদ ভবন নামে পরিচিত।

ভারতীয় সংবিধানের ৭৯নং ধারায় কেন্দ্রীয় আইনসভা বা পার্লামেন্ট গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই ধারানুযায়ী কেন্দ্রীয় আইনসভা দুটি কক্ষ (লোকসভা ও রাজ্যসভা) এবং রাজ্যপালকে নিয়ে গঠিত।

30. পার্লামেন্ট সম্পর্কে আলোচনা আছে ভারতীয় সংবিধানের কোন অংশে? ভারতীয় পার্লমেন্ট গঠিত হয় কীভাবে?

উঃ পার্লামেন্ট সম্পর্কে ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম অংশে ৭৯-১২২ নং ধারায় আলোচনা করা হয়েছে।

ভারতীয় পার্লামেন্ট গঠিত হয় লোকসভা, রাজ্যসভা ও রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে। প্রসঙ্গত লোকসভার সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে রাজ্যসভার সদস্যগণ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

31. রাজ্যসভাকে কেন স্থায়ী কক্ষ বলা হয়?

উঃ রাজ্যসভাকে পার্লামেন্টের স্থায়ী কক্ষ বলা হয় কারণ রাজ্যসভাকে লোকসভার মতো ভেঙে দেওয়া যায় না। সাধারণভাবে রাজ্যসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর। প্রতি ২ বছর অন্তর রাজ্যসভার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন।

32. রাজ্যসভার সদস্য হতে গেলে প্রয়োজনীয় কয়েকটি যোগ্যতা সম্পর্কে লেখো।

উঃ রাজ্যসভার সদস্য হতে গেলে প্রার্থীকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী সরকারি লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা যাবে না। প্রার্থীকে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে।

33. রাজ্যসভার দুটি কার্যাবলি লেখো।

উঃ রাজ্যসভার দুটি কার্য: রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনে রাজ্যসভার সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন এবং নতুন সর্বভারতীয় চাকরি সৃষ্টি করতে পারেন।

34. পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের নাম কী? সংবিধান অনুসারে লোকসভা অনধিক কত জন সদস্য নিয়ে গঠিত?

উঃ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের নাম হল লোকসভা বা House of the people!

সংবিধান অনুসারে লোকসভা অনধিক ৫৫২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হতে পারে। বর্তমানে লোকসভার সদস্যসংখ্যা ৫৪৩ জন।

35. লোকসভার সদস্য হতে গেলে প্রয়োজনীয় যে-কোনো দুটি যোগ্যতার উল্লেখ করো।

উঃ লোকসভার সদস্যদের যোগ্যতা: লোকসভার সদস্য হতে গেলে প্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী সরকারি লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা যাবে না।

36. লোকসভায় কোরামের জন্য কত জন সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন? কোরাম না হলে অধ্যক্ষ কী করেন?

উঃ লোকসভায় কোরামের জন্য এক-দশমাংশ সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। কোরাম না হলে অধ্যক্ষ সাময়িকভাবে সভার কাজ বন্ধ রাখেন।

37. স্পিকারের দুটি কার্য সম্পর্কে লেখো।

উঃ স্পিকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য হল-

পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও তার যথার্থতা বিচার: লোকসভার কোনো সদস্যের পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছেই জমা দিতে হয়। তিনি পদত্যাগের কারণ অনুসন্ধান করেন এবং পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন।

সদস্যপদ বাতিলের ক্ষেত্রে ভূমিকা: লোকসভার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রযুক্ত হবে কি না, সেই ব্যাপারে স্পিকার অনুসন্ধান চালাতে পারেন। তিনি সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল বা খারিজ করে দিতে পারেন।

38. লোকসভার দুটি কার্য সম্পর্কে লেখো।

উঃ লোকসভার কাজ: লোকসভার দুটি কার্য হল-

মন্ত্রীসভার গঠন সংক্রান্ত : নেতা মন্ত্রীসভার গঠন সম্পূর্ণরূপে পার্লামেন্টের উপর নির্ভরশীল। মূলত লোকসভায় যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দল বা জোট সরকার গঠন করে। রাষ্ট্রপতি এই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন এবং তাঁর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ করে থাকেন।

বিচার সংক্রান্ত : লোকসভার ভূমিকা রাজ্যসভার মতো লোকসভাও আইনসভার অবমাননা কিংবা অধিকার ভঙ্গের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কক্ষের সদস্য নন এমন যে-কোনো ব্যক্তিকে শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে পারে।

39. স্পিকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য সংবিধান প্রণেতারা যেই সমস্ত ব্যবস্থার কথা বলেছেন তার মধ্যে যে-কোনো দুটি আলোচনা করো।

উঃ স্পিকারের নিরপেক্ষতা: দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে স্পিকার যাতে নিরপেক্ষভাবে তাঁর ভূমিকা পালন করতে পারেন সেজন্য সংবিধান প্রণেতারা কতকগুলি বিশেষ ব্যবস্থার কথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এর মধ্যে দুটি হল- স্পিকারের বেতন, ভাতা ইত্যাদি ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে দেওয়া হয়। এসব ব্যয়ের জন্য পার্লামেন্টের অনুমোদনের দরকার হয় না। স্পিকারকে পদচ্যুত করতে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। স্পিকারের বিরুদ্ধে পদচ্যুতির প্রস্তাব আনতে হলে কমপক্ষে ১৪ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়।

40. ভারতীয় আইনসভার স্পিকার পদটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উঃ ভারতের স্পিকার পদটির গুরুত্ব আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভার সুষ্ঠু কার্য পরিচালনা করার জন্য স্পিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। স্পিকার লোকসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, সভার শৃঙ্খলা বজায় রাখেন এবং সর্বোপরি তিনি সভায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকেন। একারণেই তিনি সভায় কোনো ভোটাভুটিতে অংশ নেন না। কেবল কোনো বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে সমসংখ্যক ভোট পড়লে অচলাবস্থা কাটাতে তিনি একটি নির্ণায়ক ভোট দিতে পারেন (১০০ নং) ধারা।

41. রাজ্য বিধানসভার দুটি কার্যাবলি আলোচনা করো।

উঃ রাজ্য বিধানসভার দুটি কাজ হল-

সংবিধান সংশোধনে রাজ্য বিধানসভার কিছু ক্ষমতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করতে গেলে অন্তত অর্ধেক রাজ্য আইনসভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। [৩৬৮(২) নং ধারা।। এই বিষয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষমতা বণ্টন, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট সম্পর্কিত বিষয় প্রভৃতি। জনসাধারণকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে সংবাদ ও তথ্য প্রদানের সরবরাহ-কেন্দ্র হিসেবে বিধানসভা কাজ করে থাকে। বিধানসভা এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের দ্বারা তথ্য সরবরাহ করে।

42. রাজ্য বিধানসভার দুটি সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো।

উঃ রাজ্য বিধানসভা: রাজ্য বিধানসভার দুটি সীমাবদ্ধতা হল-

  • রাজ্যসভার উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ যদি মনে করে, যে জাতীয় স্বার্থে রাজ্য তালিকাভুক্ত কোনো বিষয়ে পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন করা উচিত সেক্ষেত্রে পার্লামেন্ট তা করলে রাজ্য বিধানসভার কোনো ক্ষমতা থাকে না।
  • জাতীয় জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকার সময় এবং রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি থাকার সময় পার্লামেন্ট রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ভোগ করে।

43. সুপ্রিমকোর্ট কীভাবে গঠিত হয়?

উঃ সুপ্রিমকোর্টের গঠন: মূল সংবিধানের ১২৪ নং ধারা অনুসারে ভারতে সুপ্রিমকোর্ট স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। সাধারণত ১ জন প্রধান – বিচারপতি এবং অন্যান্য কয়েকজন বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হয়। বর্তমানে ১জন প্রধান – বিচারপতি ও ৩৩ জন সহকারী বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হয়। অর্থাৎ বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট । ৩৪ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত।

44. বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ কী?

উঃ বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ বা Habeas Corpus একটি লাতিন শব্দ। যার অর্থ হল-বন্দিকে – সশরীরে আদালতে হাজির করা। এর মূল উদ্দেশ্য হল বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া। এর মাধ্যমে আদালত আটক ব্যক্তিকে কোর্টে হাজির করার নির্দেশ দেয়।

45. বিচারবিভাগীয় অতি সক্রিয়তা বলতে কী বোঝায়?

উঃ বিচারবিভাগীয় অতি সক্রিয়তা: বিচারবিভাগীয় অতি সক্রিয়তা বলতে, বিচার বিভাগের বিশেষ ধরনের কার্যকলাপকে বোঝায়, যার দ্বারা বিচারপতিরা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের উপর নির্দেশ জারি করতে পারে।

46. হাইকোর্ট কীভাবে গঠিত হয়?

সংবিধানের ২১৪ নং ধারানুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে হাইকোর্ট গঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক অঙ্গরাজ্যের জন্য একটি সাধারণ হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও অন্য কয়েকজন এর বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয়। এই অন্যান্য বিচারপতিদের সংখ্যা প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রপতিই রনির্ধারণ করে থাকেন।

47. হাইকোর্টের বিচারপতিদের দুটি যোগ্যতা লেখো।

উঃ হাইকোর্টের বিচারপতিদের যোগ্যতা :

হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত যে-কোনো বিচারবিভাগীয় পদে কমপক্ষে ১০ বছর আসীন থাকতে হবে।

48. হাইকোর্টের এক্তিয়ারভুক্ত দুটি প্রধান বিচারের এলাকা উল্লেখ করো। হাইকোর্টের মূল এলাকায় কী ধরনের মামলার বিচার হয়?

উঃ হাইকোর্টের বিচারের এক্তিয়ারভুক্ত দুটি প্রধান এলাকা হল মূল এলাকা, আপিল এলাকা।

হাইকোর্টের মূল এলাকায় রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার বিচার হয়।

49. লেখ জারি করার ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের মধ্যে কে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে ও কেন? অথবা, কোন্ ক্ষেত্রটিতে হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট অপেক্ষা বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন?

উঃ লেখ জারির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের থেকেও বেশি। সুপ্রিমকোর্ট কেবল মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য লেখ জারি করতে পারে, কিন্তু হাইকোর্ট মৌলিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য আইনগত অধিকার বলবৎ করার জন্য লেখ জারি করতে পারে। যদিও জরুরি অবস্থায় এই অধিকার খর্ব হয়। তবে ৪৪তম সংবিধান-সংশোধনীতে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থার সময়েও হাইকোর্টের ‘বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ’ সংক্রান্ত লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করার ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করা যাবে না।

50. বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তা কী?

উঃ সুপ্রিমকোর্টের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার ধারণাকে অনুকরণ করে ভারতে বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষতার ধারণা গৃহীত হয়েছে। শাসন ও আইন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণমুক্ত। মূলত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা ও আইনের অনুশাসনকে সুনিশ্চিত করার জন্য বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষতা প্রয়োজনীয়।

51. PIL-এর পুরো কথা কী? কাকে PIL-এর জনক বলা হয়?

উঃ PIL এর পুরো কথাটি হল-Public Interest Litigation যার বাংলা অর্থ হল জনস্বার্থ মামলা।

ভারতের বিচারপতি পি এন ভগবতীকে জনস্বার্থ। মামলার জনক নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়া বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণআইয়ারও জনস্বার্থ মামলার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।

52. জনস্বার্থ মামলা বা Public Interest Litigation বলতে কী বোঝো?

উঃ জনস্বার্থ মামলা: ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় একটি নতুন সংযোজন হল ‘জনস্বার্থ মামলা’। জনস্বার্থ মামলা বলতে বোঝায় এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া যেখানে জনগণের স্বার্থ, বিশেষত সমাজের প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষার্থে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এরূপ মামলায় ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থের পরিবর্তে জনগণের বৃহৎ স্বার্থ জড়িত থাকে। জনস্বার্থ মামলা কেবল কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করা যেতে পারে, যদি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা জনগণের বা সম্প্রদায়ের স্বার্থ লঙ্ঘিত বা অবহেলিত হয়।

53. ভারতে জনস্বার্থ মামলার উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে?

উঃ ভারতে জনস্বার্থ মামলার উৎপত্তি: ১৯৬০-এর দশকে জনস্বার্থ মামলার ধারণাটি সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভূত ও বিকশিত হয়েছিল। মূলত প্রতিনিধিত্বহীন গোষ্ঠী তথা দরিদ্র অক্ষম জনগণ, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের আইনি প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য জনস্বার্থ মামলা গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে ১৯৮০-এর দশকে ভারতে জনস্বার্থ মামলা বা PIL জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও ১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময় থেকেই ভারতে এই ধরনের মামলার ধারণা গড়ে ওঠে।

54. জনস্বার্থ মামলার দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উঃ মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা প্রদান: সরকারের কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে জনস্বার্থ, মূলত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার যখন ক্ষুণ্ণ হয় তখন তা প্রতিকারের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এই মামলার অন্যতম উদ্দেশ্য।

সামাজিক সমস্যার সমাধান: এরূপ মামলা সামাজিক সমস্যাগুলি তুলে ধরে সরকার বা প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। এর মাধ্যমে পরিবেশদূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস ও স্বাস্থবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিকারকে সুনিশ্চিত করা হয়। ফলে এই মামলা সমাজ পরিবর্তনে অনুঘটকের কাজ করে।

55. জনস্বার্থ মামলার দুটি সুফল লেখো।

উঃ ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় জনস্বার্থ মামলার কিছু সুফল লক্ষণীয়। যথা-

মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক : জনস্বার্থ মামলা মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারি প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে সমাজের প্রান্তিক মানুষজনের অধিকার লঙ্ঘিত হলে জনস্বার্থ মামলায় বিচার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

সরকারি সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ: জনস্বার্থ মামলা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা প্রশাসনিক সংস্থাগুলিকে তাদের ক্ষমতার সীমানার মধ্যে থেকে কাজ করতে বাধ্য করে।

56. জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার দুটি উপায় লেখো।

উঃ জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার দুটি উপায় হল-

সরকারি জবাবদিহি নিশ্চিত করা: জনস্বার্থ মামলা সরকারকে জনগণের কল্যাণ ও অধিকার রক্ষায় জবাবদিহি করতে বাধ্য করে। এটি প্রসাশনিক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি। শক্তিশালী করে। জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্ব। ও ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়।

মৌলিক অধিকার রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা: জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হয়, যা গণতন্ত্রের মূলস্তম্ভ।

57. ক্রেতা সুরক্ষা আদালত কী? ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উঃ ক্রেতা সুরক্ষা আদালত হল এমন একটি আদালত যা বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের জন্য গড়ে উঠেছে, যেমন-ক্রেতার সমস্যা ও অভিযোগগুলির বিচার এই আদালতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকে তিনটি স্তরে ভাগ আদালত), রাজ্য স্তর (রাজ্য ক্রেতা আদালত) করা যায়। যথা জেলা স্তর (জেলা ক্রেতা জাতীয় স্তর (জাতীয় ক্রেতা আদালত)

58. ক্রেতা আদালত গঠনের উদ্দেশ্য লেখো।

উঃ ক্রেতা আদালত গঠনের উদ্দেশ্য: ক্রেতা আদালত গঠনের উদ্দেশ্য হল-ক্রেতা যেন ন্যায্য দামে সঠিক জিনিস কিনতে পারে। অর্থাৎ ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান। ক্রেতার স্বার্থ দেখাই-এর মূল কাজ। প্রবঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতার অভিযোগ বা নালিশের আইনসম্মত সুষ্ঠু প্রতিকার বা নিষ্পত্তি বিধানই এর উদ্দেশ্য। দেশের অগণিত ক্রেতা সাধারণের উপকার এবং সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয় ক্রেতা আদালত।

59. ২০১৯ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনানুযায়ী ক্রেতার অধিকারগুলি লেখো।

উঃ ২০১৯ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনানুযায়ী ক্রেতার অধিকার গুলি হল-নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যের অধিকার, পণ্য চয়নের অধিকার, শুনানির অধিকার, প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, উপভোক্তা শিক্ষার অধিকার।

60.উপভোক্তা আদালতের দুটি কাজ লেখো।

উঃ উপভোক্তা আদালতের দুটি কাজ হল-

উপভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষিত করা: ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের প্রাথমিক দায়িত্ব হল উপভোক্তার স্বার্থকে সুরক্ষিত করা। ক্রেতাগণ বিক্রেতার নিকট থেকে কোনো জিনিস বা পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করলে সত্বর তার প্রতিবিধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে ক্রেতা সুরক্ষা আইন (ত্রিস্তরীয় আইন) যথা-কেন্দ্র, রাজ্য এবং জেলা স্তরের ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সাংবিধানিক দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা: ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় দেওয়ানি বিভাগের আদালত যেসব দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা ভোগ করে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতও অনুরূপ দণ্ডবিধি প্রয়োগ করে কোনো সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে উপযুক্ত নথি এবং দলিল দস্তাবেজ-সহ ক্রেতা আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করতে পারে।

61. ভারতের বিচারব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উঃ ভারতের বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য:

ভারতের বিচারব্যবস্থার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- ভারতে সারা দেশের জন্য এক ও অখণ্ড বিচারব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। এর পরবর্তী স্তরে রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যগুলির হাইকোর্ট। সারা ভারতে প্রায় একই দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন মেনে বিচারকার্য সম্পাদন করা হয়।

আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment