ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।
ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রবন্ধ রচনা
ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ
সূচনা
ভারতের ভাগ্যাকাশে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা, নানা দিকে চলছে ভারত ভাঙ্গার চক্রান্ত, সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা, রাজনৈতিক ভেদাভেদের চক্রান্ত, বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে জেগে উঠছে। জাতীয় সংহতি আজ বিপন্ন। দেশের বুকে যখন তখন চলছে রক্তের হোলিখেলা।
ভারতের সংস্কৃতি
দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ফলে বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদ সক্রিয়, সৃষ্টি হচ্ছে বিবদমান জাতির। নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের মধ্যেও ভারতে রয়েছে মহামিলনের ঐতিহ্য। কন্যাকুমারিকা-হিমাচল জুড়ে একটি মাত্র জাতির বিকাশ এখানে। গঙ্গা, কাবেরী, কৃষ্ণা, গোদাবরী, সিন্ধু, সর্বত্র একই প্রাণ-ধারার স্রোত প্রবাহিত। পাঞ্জাব, সিন্ধু, গুজরাট, মারাঠায় ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন বিরাজমান।
স্বাধীন ভারতে জাতীয়তাবোধ ও সংহতি
বিভেদের মাঝে মহান ঐক্য থাকা সত্ত্বেও ভারতের জাতীয় সংহতি বার বার বিঘ্নিত হয়েছে। ভারতে কুটকৌশলী ইংরেজ যে দ্বিজাতি-তত্ত্বের বিষময় বীজ বপন করেছিল তার বিষময় ফল স্বরূপ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ ভাগ হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে হিন্দু-মুসলমান প্রভৃতি সমস্ত শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত সংগ্রামের মাধ্যমে। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সাম্প্রদায়িকতার শিকার দেশ ভাগ করে, স্বাধীনতা লাভের পরেও যেন দেখা যায় স্বদেশ-প্রেমে ভাটা, দেশের স্বার্থের পরিবর্তে ব্যক্তি স্বার্থের বাড়াবাড়ি। সাম্প্রদায়িকতা, প্রাদেশিকতা, রাজনীতির-ভেদবৃদ্ধি সম্প্রীতির বন্ধনকে আলগা করার চেষ্টা কখনও কখনও প্রকটরূপে প্রকাশ পাচ্ছে। তাই প্রয়োজন সকলের মধ্যে শুভ জাতীয়তাবোধের উন্মেষ, নিরক্ষরতা-কুসংস্কার থেকে জাতিকে মুক্ত করা।
স্বাক্ষরতা বলতে কি বুঝায়
স্বাক্ষরতা বলতে সমস্ত শ্রেণির মানুষকে শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত করতে হবে। পুরুষ ও নারীকে যেমন সুশিক্ষা গ্রহণ করতে হবে তেমনি কুসংস্কারের বাতাবরণ ত্যাগ করতে হবে। নারীরা অনেক সময় নানা ভাবে অত্যাচারিত হন। দেশের স্বাধীনতা বিপ্লবে পুরুষ ও নারী উভয়ে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সমগ্র জাতি মানে পুরুষ ও নারীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ সম্বন্ধে সচেতনাবোধ জাগ্রত করতে হবে। তা না করতে পারলে জাতীয়তাবোধের প্লাবন মন্থর হবে।
কুসংস্কার ও জাতীয় সংহতি
কুসংস্কার এক মারাত্মক ব্যাধি যা জাতীয় সংহতি সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করে। ভারতে জাতের নামে বজ্জাতি করে মানুষে মানুষে সৃষ্টি করা হয় বিভেদ। উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত জাতের দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির মানুষ অন্য শ্রেণির মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে আজও যা ভারতে সংহতি সৃষ্টির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। শিক্ষার প্রসারে সামাজিক চেতনাবোধ সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে ও কুসংস্কারের অবগুন্ঠন সরে যাবে।
উপসংহার
জাতীয় সংহতির অভাব হলে বিচ্ছিন্নতাবাদ জেগে ওঠার সুযোগ পায়। স্বদেশ প্রেম, মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন, পুরুষ ও নারী উভয়কে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোকে আনয়ন, সামাজিক কর্তব্যবোধ সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি প্রভৃতি জাতীয় সংহতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। দেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটাতে জাতীয় সংহতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম গভীর হলে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। জাতীয়তাবোধ ও সংহতির প্রধান জিয়ন- কাঠি শিক্ষার প্রসার।
আরও পড়ুন – ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা