ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

ভারতের বেকার সমস্যা

ভূমিকা

প্রায় দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের ফলে ভারতের বেকার- সমস্যা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতা লাভের পরেও সেই সমস্যার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হয়েছে, জন্যসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে কর্মসংস্থান তাল রেখে বৃদ্ধি হতে পারছে না। স্বাধীনতা লাভের পরে যুব-সমাজ যে স্বর্ণযুগের স্বপ্ন দেখছিল তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। কর্মহীনতার অভিশাপ দেশের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। যুব-সমাজের মধ্যে বাড়ছে হতাশা, অপরাধ প্রবণতা।

ভারতের বেকার-সমস্যার কারণ

২০১১ সালের লোকগণনায় ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি। উত্তর প্রদেশে ১৯ কোটি ৯৫ লাখ, মহারাষ্ট্রে ১১ কোটি ২৩ লাখ, বিহারে ১০ কোটি ৩৮ লাখ, পশ্চিমবঙ্গে ৯ কোটি ১৩ লাখ। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান চতুর্থ স্থানে। ব্রিটিশ শাসন ভারতে ধবংস করে কুটির শিল্প, যার ফলে বেকার সমস্যার কালো ছায়া নেমে আসে। ইংরেজরা এদেশের শিল্পের অগ্রগতির পথ স্তব্ধ করে তাদের দেশের প্রস্তুত পণ্যের বাজার গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয় অধিক মুনাফার লোভে। যার ফলে সহজলভ্য সস্তায় শ্রমিক নিয়োগ হয়নি সে সময়। তারা মুনাফার লোভে মানব-শক্তির পরিবর্তে যন্ত্রশক্তির ব্যবহারে মন দেয় ও যন্ত্রশক্তি প্রয়োগ করে মানুষের রুজি- রোজগারের পথ বন্ধ করে দেয়। এইভাবে ক্ষুদ্রশিল্প ও ধবংস হয়ে যায়।

শিল্প ধ্বংস ও বেকারত্ব বৃদ্ধি

ভারত কৃষিনির্ভরদেশ ও উন্নত কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন না থাকায় পেশাগত কারণে অবসর সময় ক্ষুদ্রশিল্পে নিয়োগ করত এখানের মানুষ নিজেদের। এখন উন্নত কৃষ্টি ব্যবস্থার ফলে ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটে গেছে একথা ঠিক। কিন্তু জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ও ক্ষুদ্রশিল্পের অবলুপ্তির ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের বৃদ্ধির পরিবর্তে বিগত কয়েক দশক ধরে ধবংস হয়েছে বেশি। যার ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে চলেছে। শিল্প প্রসারের জন্য যে ‘ইনফ্রাস্টাচার’ প্রয়োজন তা না থাকায় নতুন শিল্প গড়ে ওঠায় ও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্বায়নের ফলে সস্তায় বিদেশী পণ্য ভারতের বাজারে এসে যাওয়ায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে ক্ষুদ্রশিল্পে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেশী হওয়ার ফলে ও দেশীয় শিল্পের বাজারে আসছে মন্দা। যার ফলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে। দেশ-ভাগের ফলে ভারতের পাট-এলাকা বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বহু চটকল এবং বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে। যুদ্ধের প্রয়োজনে একসময় চাহিদা মেটানোর জন্য দেশে অনেক কারখানা স্থাপিত হয়েছিল। সেসব এখন বন্ধ হয়ে গেছে এবং অনিবার্যরূপে দেখা দেয় বেকারত্ব। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে ম্যানপাওয়ার বা শ্রমের লাঘব হওয়ায় বর্তমানে বহু শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, অথচ বিকল্প শিল্প গড়ে উঠছে না। তাই বেকার সমস্যা সমাধান সম্ভব হচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গে বেকার সমস্যা ও সমাধান

ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বেকার সমস্যা অত্যন্ত তীব্র যা তার অর্থনীতিকে জরাজীর্ণ করে ফেলছে। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত বহু মানুষ অসচ্ছলতায় ভুগছে। বেকারত্বের জ্বালা সহ্য না করতে পেরে অনেকে আত্মহননের পথ ও বেছে নিচ্ছে। বেকার বলতে শুধু কর্মক্ষম বেকারকে বুঝায় না, যারা কর্মে অক্ষম পশ্চিমবঙ্গে তাদের সংখ্যাও কম নয়। মনুষের যে শক্তি সমাজের সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারত তা না ব্যবহারের অর্থ সামাজিক ক্ষতি। কর্মহীন ব্যক্তির উৎপাদন নৈপুণ্যকে বিনষ্ট করে জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে এনে দেয় গভীর নৈরাশ্য বোধ, যার ফলে মানুষ সামিল হয় বিক্ষোভ-বিপ্লবে।

বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য দেশময় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। চাষবাসকে ঋতুগত পেশা হিসাবে না রেখে সার, উন্নত-প্রথায় ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষি- শ্রমিকের সারা বছর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে অনেক মানুষ বেকারত্বের হাত থেকে রেহাই পাবে। ক্ষুদ্র, গ্রামীণ ও মাঝারি শিল্পে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করে তাদের পুনরুজ্জীবিত করতে পারলেও অনেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।

উপসংহার

সমাজের তরুণ সতেজ শক্তির এই দুঃসহ অপচয় বন্ধ করা এখন খুবই প্রয়োজন। কৃষির আধুনিকীকরণ, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ, পথ ও পরিবহণের উন্নয়ন, শিক্ষার বৈচিত্রকরণ, ঘরোয়া ও বৈদেশিক বাণিজ্যের নব নব দিগন্ত উদ্ভাবন ইত্যাদির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। তখন কর্মহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশার দুঃসহ নিশার অবসানে জন্মলাভ করবে এক নতুন জনসমাজ।

আরও পড়ুন – প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment