প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব
সূচনা
এমন এক সময় ছিল যখন প্রচারের আলোকে আসাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হত না। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চিন্তাধারারও পরিবর্তন হচ্ছে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এসেছে প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞাপনের যুগ, অন্যান্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রেও। বিজ্ঞাপন কথাটির অর্থ হল বিশেষভাবে জ্ঞাপন করা। বিজ্ঞাপন বলতে বুঝায় জনসাধারণের অবগতির জন্য গণমাধ্যমে প্রচারিত বা প্রকাশিত ইস্তাহারকে। বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য হল কোনো বিষয়কে প্রচারের আলোকে আনা। বিজ্ঞাপনে সাধারণত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য বেশি গুরুত্ব পেলেও ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু বিষয় প্রচারের স্বার্থে বিজ্ঞাপনের সাহায্য নেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপণের যৌক্তিকতা
যে বিষয়ে গণমাধ্যমের দ্বারা বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা হয় সে বিষয়ের উৎকর্ষতা প্রচারের বা গুণাগুণ সম্বন্ধে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপন দাতা তার পণ্যের উৎকর্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করে। পণ্যক্রেতা এর মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ মূল্যায়ণ করে। আবার বিভিন্ন সময়ে সরকারী-বেসরকারী ক্ষেত্রে তাদের কাজের অগ্রগতির মূল্যায়ণ, শিক্ষা-সংস্কার, এমন কি কোনো রোগের হঠাৎ প্রাদুর্ভাব সম্বন্ধে সতর্কীকরণ, জন-সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস প্রভৃতি যে কোন বিষয়ে বিজ্ঞাপনের দ্বারা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনসাধারণের সেই বিষয়ের সম্যক ধারণা জন্মায় এবং নিজের বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে বিষয়টির যৌক্তিকতার মূল্যায়ন করে।
বিজ্ঞাপনের কুফল
আলোর নীচে যেমন অন্ধকার থাকে তেমনি বিজ্ঞাপনের ভালো ও মন্দ দিক আছে। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনেক সময় মন্দ জিনিসকে উৎকর্ষতার প্রচারের মাধ্যমে ক্রেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। কিছু কিছু বিজ্ঞাপনে এমন বিষয় প্রচার করা হয় যা পূর্ণবয়স্কদের উপযোগী এবং শিশুমনের প্রতিসারী হওয়ায় তাদের মনোবিকাশে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি, তাদের মনে অকারণ হিংসা, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস প্রভৃতি প্রভাব বিস্তার করে। অকারণে জনমানসে অসুস্থ ও বিকৃত মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারে বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নানা বিকৃত মূল্যবোধ আমাদের চিন্তন-মনন, আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, প্রভাবিত করে, চিন্তায়-চেতনায় ঢুকে পড়ে বিকৃত মূল্যবোধ, অপ্রয়োজনীয় বস্তুর চাকচিক্য মনকে আকৃষ্ট করে, ভোগসর্বস্বতা আধিক্য বিস্তারে এগিয়ে আসে। যেমন নারীর সৌন্দর্যকে পণ্যীকরণ করে যে বিজ্ঞাপনের এখন রমরমা দেখা যায় তার কুপ্রভাবের কথা কারও অজানা নেই। –
বিজ্ঞাপন শিল্পও
বিজ্ঞাপনের নান্দনিক দিকও আছে। শৈল্পিক চিত্রকলার সমাহার দেখা যায় বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে পণ্য সম্বন্ধে বিশেষ বার্তা পাঠায় তার মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি আছে ক্রেতাদের হাতে। অনেক সময় ক্রেতা বিজ্ঞাপন দেখে সেই পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং বিজ্ঞাপনের চমকে সবচেয়ে সেরাও অপরিহার্য মনে করে। বিজ্ঞাপনদাতাদের উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞাপনের ভাষা ও দৃষ্টিনন্দন ছবি প্রভৃতির মাধ্যমে ক্রেতার কৌতূহল সৃষ্টি করা। বিজ্ঞাপন এখন কলা-বিজ্ঞানের সম্মিলনে ইন্ডাষ্ট্রি হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞাপন আমাদের মনে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর প্রতি পাওয়ার বাসনার উদ্রেক করে, পারিপার্শ্বিক জীবনযাত্রার সাথে বাহ্যাড়ম্বরের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে, বিজ্ঞাপনের চটকদারিতে আকর্ষিত হয়ে মানুষ অপরিহার্যতার প্রত্যয়ে নিমজ্জিত হয়ে বহ্নিবিক্ষুব্ধ পতঙ্গের মতো বস্তুটি প্রপ্তির জন্য বাসনায় লিপ্ত হয়।
উপসংহার
বিজ্ঞাপন আমাদের মধ্যে পাওয়ার আকাঙ্খা বৃদ্ধি করে, সুখ-স্বাচ্ছন্দের স্বপ্ন দেখায়, আর্থিক সীমাবদ্ধতার চিন্তা না করে অকারণে প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় আমরা ঝাঁপ দেই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন মানুষের উপকারও করে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া প্রভৃতি রোগের যখন প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোগের কারণ ও রোগ যাতে না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক বার্তা কি মানুষের উপকারে লাগে নি? কর্মসংস্থান, শিক্ষা বিষয়ক বিজ্ঞাপন মানুষের প্রয়োজন মেটায় যে তা সকলে জানে। বিজ্ঞাপন দেখে ভালো-মন্দ না বিচার করে তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়। বিজ্ঞাপনে নির্বিচারে সাড়া না দিয়ে বিচার-বুদ্ধি মূল্যবোধকে সজাগ রেখে নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। তা করতে পারলে বিজ্ঞাপন আমাদের জীবনের সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন – বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র প্রবন্ধ রচনা