ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা 800+ শব্দে

ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা

ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা
ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা

ঈশ্বর কণা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং পিটার হিল্স একটি কণার কথা বলেছিলেন যা অন্য কণাকে ভর যোগায়। এই কণা না থাকলে সবকিছু বিদ্যুৎবেগে ছুটে চলতো, সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যেত। ১৯২৪ সালে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এই বোসন জাতীয় কণার কথা প্রথম বলেন। নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী পিটার হিগস ও এই কণার কথা জানিয়েছিলেন। কণাটির বৈজ্ঞানিক নাম হয়েছে হিপ্স বোসন। ভরের দিক থেকে একটা ঈশ্বরকণার কাছাকাছি। চরিত্রে আলাদা ও হতে পারে। তাঁরা এই জাতীয় কণার ধর্ম ও ব্যাখ্যা করেছিলেন।

পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য খুঁজতে গিয়ে জেনিভার ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্ন এর বিজ্ঞানীরা ২০১২ সালের ৪ঠা জুলাই এই ঈশ্বরকণার কথা ঘোষণা করলেন সারা বিশ্বের সামনে। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অনুমান প্রায় সত্যি বলে প্রমাণিত হল। ১৮ মাস ধরে সার্নের বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষা চালান। এর মধ্যে ছিলেন পাঁচজন বাঙালি বিজ্ঞানী যা আমাদের কাছে খুবই গর্বের ব্যাপার।

ঈশ্বরকণা কী

পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিষ্কারের গুরুত্ব অপরিসীম ও এই কণার আবিষ্কার যুগন্তকারী। সার্ণের ভাষায় বলা যায়, এমন কণার সন্ধান পাওয়া গেছে যার চরিত্রের মিল আছে ঈশ্বর কণার সাথে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিস্ফোরণের ফলে আলোক বিন্দু অতিদ্রুতবেগে ছিটকে বেরিয়ে আসে এবং এই কণার সৃষ্টি হয় সেই সময়। এই বিস্ফোরণকে বিগব্যাং নামে সূচিত করা হয়েছে এবং সেইসময় থেকে স্পেস-টাইমের যাত্রা শুরু। সুতরাং মহাবিশ্বের মূল ভিত্তি হল এই কণা। হিপ্স কল্পিত কণাটি শুধুমাত্র পদার্থের ভরকে ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু ‘নিউপার্টিকল’ সমাধান করতে পারে ব্রহ্মান্ডের আরও আরও বহু রহস্য। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য, মহাবিশ্বের গঠন, ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি অজানা রহস্যে মোড়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে ‘নিউ পার্টিকল’।

ঈশ্বর কণা সম্বন্ধে বলা হয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের গঠনগত একক হিপ্স- বোসন কণা। বিগব্যাং পরবর্তী সেকেন্ডের একশো কোটি ভাগের প্রথম সময়ে সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে অসংখ্য ভরহীন কণা আলোর মত বেগে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল এবং এই সময় যে তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি হয় বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন হিপ্স ক্ষেত্র। ক্ষেত্রের তড়িৎ আকর্ষণে প্রভাবিত হয়ে যুগ্ম কণাগুলির মধ্যে শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ, যার ফলে সৃষ্টি হয় ভরের। বিজ্ঞানীদের মতে ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের সূচনা এই কণা থেকে। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং আলবার্ট আইনস্টাইন প্রথম এই কণার অস্তিত্বের কথা বলেন। তাঁদের নাম অনুসারে এই কণার নাম রাখা হয় ‘বোসন’। এর পরে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার হিল্স এই কণার চরিত্র সম্বন্ধে নতুন কিছু তথ্যের সন্ধান দেন বলে নতুন কণার নাম রাখা হয় ‘হিগ্‌-বোসন’।

ঈশ্বর কণা এই নামকরণের কারণ

বিশ্বব্রহ্মান্ডে বস্তুর ভরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং কোন কণার ভর না থাকলে তা আলোর মতো বেগে ছুটবে। বস্তুর অস্তিত্বের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন যে গ্রহ-নক্ষত্র বা তার মধ্যের বস্তু- সবকিছুর মূলে বস্তুর ভর কাজ করছে। ভর যদি না থাকত তাহলে সব কিছু প্রবল বেগে ছুটত। ব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে সফল তত্ত্বের নাম ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’। এই তত্ত্বানুসারে যতগুলি কণার কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে ঈশ্বর কণার খোঁজ মেলেনি। পদার্থবিজ্ঞানে এই কণার গুরুত্ব বোঝাতে নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ্‌ লিয়ন লিভারম্যান তাঁর গ্রন্থে হিপ্স-বোসন সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘Goddamn Particle‘ | তাঁর ধারণা ছিল এই কণার অস্তিত্ব সম্বন্ধে কেউ হয়তো প্রমাণ করতে পারবেন না। যদিও চরিত্রে কিছু পার্থক্য আছে তবুও নব আবিষ্কৃত কণাটি ভরের দিক থেকে ঈশ্বর কণার কাছাকাছি।

ঈশ্বর কণা (God Particle) নামটি হয়েছে ‘Goddamn Particle’ থেকে। নব আবিষ্কৃত কণাটির ভর ১২৫ প্রোটন কণার প্রায় সমান। এই তত্ত্বের জনক যে ভারত সে কথা সার্নের এক মুখপাত্র ইতিমধ্যে জানিয়েছেন। দুই বিপরীত মুখী কণা স্রোতের সংঘর্ষে জন্ম নেয় এই ঈশ্বর কণা। ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য ও এর মাধ্যমে উন্মোচিত হবে। বলা হচ্ছে নিউ পার্টিকল। বিজ্ঞানীরা বলেছেন নিউ-বোসন। ১৮৯৭ সালে ইলেকট্রনের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। আলাদা পরমাণু, নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব জানা যায় ১৯১১ সালে। প্রোটন আবিষ্কার হয় ১৯১৯ সালে। ১৯২৮ সালে ম্যাক্স বর্ণ ভেবেছিলেন এই বুঝি শেষ।

নিউট্রনের আবিষ্কার হয় ১৯৩২ সালে। প্রায় একই সময় আবিষ্কার হল প্রতি-কণা বা অ্যান্টি পার্টিকল, যেমন পজিট্রন যার ভরের স্বভাব ইলেকট্রনের মতো এবং আধান ধনাত্মক অর্থাৎ ইলেকট্রনের বিপরীত। এইভাবে অসংখ্য কণার আবিষ্কার ঘটেছে। মেন্ডেলিভ পদার্থের ‘পর্যায়সারণী’ সাজিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন, বিভিন্ন মৌলের ধর্ম ব্যাখ্যার জন্য ইলেকট্রন প্রোটন এবং নিউট্রন যথেষ্ট, তেমনি প্রোটন, নিউটন পায়ন-কেয়নের গঠন বোঝা যায় আরও মৌলিক কণা কোয়ার্কের নিরিখে। প্রোটনের স্থানে এল কোয়ার্ক। আবিষ্কার হল ছয়টি কোয়ার্ক ও ছয়টি লেপটন (নিয়ন, টাওলের মতো হাল্কা)। নিয়ন কিছুটা ঈলেকট্রনের মতো, তবে ভর কয়েকগুণ বেশি, টাওলের ভর আরও বেশি, এছাড়া আছে তিন ধরণের নিউট্রিনো- ইলেকট্রন নিউট্রিনো, নিয়ন নিউট্রিনো, টাওল নিউট্রিনো। বোসন কণার সাথে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম যুক্ত। ‘হিগস্’ আরও একটি বোসন। সম্ভবত নতুন আবিষ্কৃত কণাই হল ‘নিউ বোসন’।

লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার: লার্জ হ্যাড্রন কোলাইভার, সংক্ষেপে এল এইচ সি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী এই পার্টিকল অ্যাক্সেলারেটর তড়িৎ ক্ষেত্রের সাহায্যে বিপরীতমুখী প্রোটন কণার স্রোতকে পরস্পরের ওপর তীব্র গতিতে আপতিত করে। এভাবে প্রোটন কণার ঝাঁক মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে জন্ম নেয় ভরযুক্ত হিগ্বোসন কণা বা ঈশ্বর কণার। এল এইচ সিতে তড়িৎ ক্ষেত্র সৃষ্টি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সলিলয়েড জাতীয় তড়িৎচুম্বকের স্তর। এ এফ পির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এমনই একটি বিশাল তড়িৎ চুম্বক। দুই বিপরীতমুখী স্রোতের সংঘর্ষে জন্ম নিচ্ছে ঈশ্বরকণা।

উপসংহার

প্রশ্ন হচ্ছে সুড়ঙ্গের মধ্যে অবিরাম প্রোটন যুদ্ধে ব্ল্যাক হোল তৈরী হবেনা তো? তবে ব্ল্যাকহোল বা ঈশ্বরকণা সৃষ্টি হবে কিনা এই প্রক্রিয়ায় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুন- ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment