বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও গ্রিনহাউস এফেক্ট প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও গ্রিনহাউস এফেক্ট প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।
বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও গ্রিনহাউস এফেক্ট
বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও গ্রিনহাউস এফেক্ট প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
একসময় সারা পৃথিবী সবুজ গাছপালা, ঘন বনজঙ্গলে আচ্ছাদিত ছিল। তখন মানুষ বাস করত বনজঙ্গল, গুহা প্রভৃতিতে। সভ্যতার ক্রম বিকাশে মানুষের জীবনযাত্রার রূপরেখা পরিবর্তন হল। প্রয়োজনের তাগিদায় মানুষ গঠন করল সমাজ। চলল মানুষের আধিপত্য বিস্তার প্রকৃতির ওপর। প্রকৃতি ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। প্রকৃতি পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট নিয়মে। হারাতে লাগল প্রকৃতির ভারসাম্য। যার কুপ্রভাবে সমস্ত পৃথিবীর প্রাণীজগৎ জরাগ্রস্থ হতে শুরু করেছে।
‘গ্রিনহাউস এফেক্ট’-কথাটির ইতিহাস
যতদূর জানা গেছে, ফরাসী গণিতজ্ঞ যোসেফ ফুরিয়র ১৮২৪ সালে প্রথম পৃথিবীর তাপমাত্রার হিসাব দেন। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আবদ্ধ সৌর বিকিরণ (Solar radiation) আবার পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের দিকে ফিরে এসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। নোবেল বিজয়ী স্যাভান্তে অ্যারহেনিয়াস এই সৌর বিকিরণের নাম দিয়েছেন ‘গ্রিনহাউস এ্যাফেক্ট‘। এই কথার অর্থ হল সবুজ পৃথিবীর ওপর সৃষ্ট কোনও প্রভাব পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওপর তাপমাত্রার প্রভাবকে প্রমাণ করলেন ১৯৫০-এর দশকে জি.এস.ক্যালেনডার। তারপর বিজ্ঞান জগতে চঞ্চলতা ছড়িয়ে পড়ে-এর কারণ বিশ্লেষণে। বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হল যে অবিবেচকের মতো মানুষের প্রকৃতির ওপর প্রভাব বিস্তার ও নিজের প্রয়োজনে তাকে যেমন খুশি ব্যবহারের ফলে তার প্রতিক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস-অক্সাইড, ক্রোরোফ্লুরো-কার্বন প্রভৃতির দহনশীল পদার্থগুলির যৌগের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে সবুজ পৃথিবীর বুকে তাপমাত্রার পরিমান মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এই উষ্ণায়ণ দাহিকা শক্তির বৃদ্ধিই গ্রিনহাউস গ্যাস।
উষ্ণায়ণের কুফল
পৃথিবীর বুকেনানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে প্রমাণ হয়েছে যে আশির দশক থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে বেড়ে গেছে ০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৬২০ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী নিয়ে গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ের আন্ত-সরকারি প্যানেল বা পি.সি.সি অনুসন্ধান করে জেনেছে যে গত শতাব্দীতে তাপমাত্রার পরিমাণ বেড়েছে ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইউ.এন.ও বা রাষ্ট্রসংঘের সদস্য ১৮৯ টি দেশ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে স্বাস্থ্য-অনাময় বা রোগমুক্ত স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যু, খাদ্য, ক্ষুধা, জল- প্রভৃতি আটটি বিষয়ে উন্নয়নের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছাবে। কিন্তু এসব পরিকল্পনার সফলতা নির্ভর করছে পৃথিবী- বুকের উপযোগী জলবায়ুর ওপর।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতি নির্দিষ্ট নিয়মে ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে না, হিমালয়ের মতো পর্বতেরও বরফ গলে গিয়ে উচ্চতা কমছে, নদী-সমুদ্রে জলস্ফীতির ফলে ধ্বংসের সংকেত দিয়ে ধেয়ে আসছে প্লাবন প্রভৃতি, মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা জটিল রোগে, যথা সময়ে বৃষ্টিপাতের অভাবে নেমে আসছে সর্বগ্রাসী খরা প্রভৃতি। রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংগঠনের (এফ.এ.ও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ষাট ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর কৃষি বৃদ্ধির হার আশানুরূপ ঘটেনি বন্যা-খরা প্রভৃতির কারণে। এই বৃদ্ধির হার ০.২ শতাংশের ও কম।
কম বৃষ্টির ফলে জল সংরক্ষণের পরিমাণ এখন মাথাপিছু ২১৩ কিউবিক মিটার। কানাডা ও আমেরিকায় তার পরিমাণ ৪,৭৩৩ ও ১,৯৬৪ কিউবিক মিটার। তা আবার বর্ষাকালের বৃষ্টির ওপর নির্ভর করছে। বৃষ্টির পরিমাণ কমছে অথচ প্রতিবছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে মাথা পিছু জল সংরক্ষণের পরিমাণ ও কমছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলতে থাকায় সাগর- নদী প্রভৃতির তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হবে এবং জলে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাবে ও নদীর স্রোত স্তব্ধ হওয়ায় দূষণের পরিমান বাড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউ, এইচ, ও) মতে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে পৃথিবীতে রোগ জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি, মানসিক চাপজনিত রোগের গ্রাস, প্রকৃতি-পরিবেশের সাথে শরীরেরর ভারসাম্য হ্রাস প্রভৃতি কারণে বছরে তিন লক্ষের বেশী মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। বাড়বে দারিদ্র, অপুষ্টি, খাদ্যাভাব, মহামারী, অকালমৃত্যু, দুরারোগ্য অসুখের প্রাদুর্ভাব।
উপসংহার
রাষ্ট্রসংঘের সদস্য ১৮৯টি দেশ উষ্মায়ণ মোকাবিলায় এখনও উল্লেখযোগ্য ভাবে সফলতা আনতে পারেনি যদিও এব্যাপারে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে ভারত উন্নত দেশগুলির কাছে মাথা নত না করে দূষণ কমানোর জন্য আটটি জাতীয় কর্মসূচি (নেশান্যাল এ্যাকশন প্ল্যান অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) গ্রহণ করছে যা আমাদের দেশকে উষ্মায়ণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপ কমাতে পারবে।
আর পড়ুন – ভারতের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা