বিপর্যয় ও তার মোকাবিলা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে বিপর্যয় ও তার মোকাবিলা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।
বিপর্যয় ও তার মোকাবিলা প্রবন্ধ রচনা
বিপর্যয় ও তার মোকাবিলা
ভূমিকা
বিপর্যয় যেকোনো দেশে, যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। দেশ-জাতি তথা সমগ্র সমাজের অগ্রগতির বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিপর্যয়। বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বা দুর্ভিক্ষ, সুন্দরবনের আইলা, মহারাষ্ট্রে ভূজে ভূকম্পন, ওড়িশায় সাইক্লোন, জাপানের সুনামি ভয়াবহ বিপর্যয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রকৃতি চলে নিজের নিয়মে। মানুষ প্রকৃতিকে যতই বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবনের দ্বারা করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে, ততই সে হচ্ছে ক্ষিপ্ত।
আবার মানুষই ভূপালের গ্যাস দুর্ঘটনা বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে এ্যাটমবোম নিক্ষেপের দ্বারা বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। বিপর্যয় কখন তার কালো-হাত প্রসারিত করে ধবংসলীলায় উন্মত্ত হবে তা অনেক সময় আগে থেকে জানা সম্ভব হয় না। বিপর্যয়ের ফলে জনজীবনের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে সর্বগ্রাসী বিভৎসতা, ব্যাহত করে উন্নয়নকে, ধবংসের অতলে হারিয়ে যায় তিল তিল করে গড়ে তোলা পৃথিবীর বুকের সুন্দর সভ্যতা। তাই বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা খুবই জরুরী।
বিপর্যয় ও তার রূপভেদ
সাধারণত বিপর্যয় সৃষ্টি হয় প্রকৃতির দ্বারা। ঝড়, বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প প্রভৃতি হল প্রকৃতির লীলাখেলা। এসবের হাত থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয়ের কথা ভাবলে ও তার বিভৎস রূপ দেখলে মানুষের হৃৎকম্প সৃষ্টি হতে পারে।
বিপর্যয় ও তার মোকাবিলা
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অব্যাহত। মানুষের মধ্যে বেড়েছে সচেতনতাবোধ। তাই প্রয়োজন বিপর্যয় থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সুপরিকল্পিত বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা। সবসময় বিপর্যয়কে যে এড়ানো সম্ভব নয় তা ঠিক। কিন্তু বিপর্যয় ঘটে গেলে তার থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি পাওয়া যেতে পারে, হতে পারে কম প্রাণহানি বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা থাকলে।
বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা। এজন্য প্রয়োজন ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম’ বা বিপর্যয় মোকাবিলার উপযুক্ত সংস্থা। এই কাজের সাথে যাঁরা যুক্ত হন তাঁদের উপযুক্ত ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়। বিপর্যয় ঘটলে তাঁরা চলে যান উদ্ধার কাজে। এরপরে প্রয়োজন হয় বিপর্যস্ত এলাকার পুর্নগঠন। প্রসঙ্গক্রমে ভারতের উত্তরাখন্ডে যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছিল তার বিভৎসতার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা না করলে আরও অধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারত। বিপর্যয় মোকাবিলার প্রধান উদ্দেশ্য উদ্ধার কাজে ব্রতী হওয়া এবং বিপর্যস্ত অঞ্চ লের পুর্নগঠন করা।
ভারতে বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা
ন্যাশানাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (NDMA) ন্যাশানাল ডিজাস্টার ফোর্স গঠন করে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ্যাক্ট ২০০৫-এই আইন অনুসারে। ন্যাশানাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির শীর্ষে আছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অথরিটি বিপর্যয় মোকাবিলার নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা, নির্দেশিকা প্রভৃতির ব্যবস্থা করে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় নির্দেশিকা বাস্তবে রূপায়িত হয়।
পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, ডিজাস্টার ম্যানজমেন্ট অথরিটি যেকোনো বিপর্যয়ে ত্রানের কাজ করবে, ত্রান সামগ্রীর ব্যবস্থা করবে এবং উদ্ধার কাজে ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সকে কাজে লাগাবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর ও সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়। দেশে খনি বিপর্যয়, সমুদ্র বন্দর এলাকার সমস্যা, রাসায়নিক ও জৈব সন্ত্রাস, অস্ত্রসন্ত্রাস, বিমান দুর্ঘটনা, বোমাবর্ষন, দেশের আইন- শৃঙ্খল প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটলেও এমন কি দাবানল ও তৈলখনিতে আগুন লাগলে বিপর্যয়ের মোকাবিলায় এগিয়ে আসে এই অথরিটি।
উপসংহার
বিপর্যয় মোকাবিলায় মানুষ যখন বিপদের সম্মুখিন হয় তখন শুধু সরকার নয় সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতির ছাত্র-ছাত্রীরাও এগিয়ে আসে সাহায্যের মনোভাব নিয়ে। সৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে আছে সৃষ্টিকর্তার ধবংসের অদৃশ্য হাত, সৃষ্টি-লয় প্রকৃতির খেলা। লয় বা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সৃষ্টির প্রথম লগ্ন থেকে মানুষ চেষ্টা করে আসছে বলেই এখনও মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পেরেছে।
আরও পড়ুন- ভারতে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা প্রবন্ধ রচনা