বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা 800+ শব্দে

বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ

বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

মানবসভ্যতার ইতিহাস বারে বারে রঞ্জিত হয়েছে রক্তে, লাঞ্ছিত হয়েছে। শান্তির বাণী, মাথা কুটে কেঁদেছে বিবেক। আত্মরক্ষার ও আত্মপ্রতিষ্ঠার জৈব প্রেরণা মানুষকে যখন তখন ঠেলে দিয়েছে ভয়াল সংগ্রামের দিকে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে একবিংশ শতাব্দীতে ও মানুষে মানুষে পাশবিক হানাহানি, জিগীষা ও জিঘাংসা সভ্যতার অগ্রগতিকে করেছে কলুষিত। কুরুক্ষেত্র, লঙ্কা, ট্রয়ের কাহিনী আজও কবি- সাহিত্যিকের লেখায় হয়ে আছে অবিস্মরণীয়। সেকালে মানুষ যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতার সাক্ষ্য রেখেছে বাহুবলে-বীরত্বে। রণনীতি ও মানবতা তখনও ধর্মবোধকে নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘন করেনি। যেদিন ছিল বিজ্ঞানের শৈশব।

আধুনিক যুদ্ধ ও বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে অভাবনীয়রূপে পরিবর্তিত হয়েছে রণনীতি ও সমরকৌশল, ধর্ম হয়েছে ব্রাত্য, বাহুবলের গুরুত্ব গেছে কমে, সর্বব্যাপী হয়েছে সমরক্ষেত্রের পরিধি। সাম্প্রতিক কালের যুদ্ধে মানুষের বুদ্ধির সূক্ষতা দৈহিক শক্তিকে অতিক্রম করে হয়েছে সুদূর প্রসারী। আধুনিক সংগ্রাম সর্বনাশারূপ পরিগ্রহ করেছে বিজ্ঞানের নিত্যনূতন মারণ-অস্ত্রের আবিষ্কারের ফলে। তাই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর দিকে বিমূঢ়-বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে একটি প্রশ্নঃ বিজ্ঞান কী চায়- সভ্যতার অগ্রগতি, না বিনাশ? জীবন, না মৃত্যু?

একালের যুদ্ধ সম্পূর্ণ যান্ত্রিক

প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও মারণ-অস্ত্রের এমন ভয়াবহ আত্মপ্রকাশ দেখা যায়নি। পরিখার অন্তরালে থেকে সংগ্রাম পরিচালনা করা ও দূরপাল্লার কামানে শত্রুকে বিপর্যস্ত করা ছিল সেই যুদ্ধের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আবিষ্কার হল ব্রিটিশ ট্রাঙ্ক। যুদ্ধের পদ্ধতির হল পরিবর্তন। পরাজয় স্বীকার করল প্রবল জার্মান শক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র আরও ভয়ংকর। জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পড়ল প্রলয় ভয়ংকর আনবিক বোমা। শিল্প-সমৃদ্ধ দুটি নগরী মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে। স্তব্ধ হল অজস্র মানুষের প্রাণের স্পন্দন। এই যুদ্ধের দীর্ঘ বছর পরে এখনও পর্যন্ত তার কু-প্রভাব থেকে সেখানের মানুষ মুক্ত হতে পারেনি।

হিংসার দ্বারা সৃষ্টি হয় প্রতিহিংসা

আক্রমণ ও আত্মরক্ষার ঘাত-প্রতিঘাতে উগ্র হয়ে উঠছে প্রতিহিংসা, বেড়েছে বিজ্ঞানীর সন্ধান-তৎপরতা। কোনও মারাত্মক অস্ত্রকে প্রতিহত করার জন্য পৃথিবীব্যাপী চলছে তার থেকে ধবংসাত্মক অস্ত্র আবিষ্কারের প্রতিযোগিতা। বোমারু বিমান ধ্বংসের জন্য বিমানধবংসী কামান, ট্যাঙ্কের পরিবর্তে ট্যাঙ্ক ধবংসী অস্ত্র, টর্পেডোর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ‘র‍্যাডার-বীম’- আকাশে বাতাসে বিষের দাবানল। ইউরোপীয় দেশগুলি নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র আবিষ্কারে ব্যস্ত, হিংসা সৃষ্টি করে হিংসা। বিশ্বের নর- নারী আজ হিংসার যুপকাষ্ঠে মৃত্যুমুখী প্রাণীর মতো অসহায়, তাদের চোখে সন্ত্রস্ত

বিজ্ঞান সভ্যতাকে কি ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে

সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে দৃষ্টি। ধধ্বংস করার জন্য কি বিজ্ঞানীর অতন্দ্র সাধনা? শুধু যুদ্ধকে ভয়াবহ করে তোলার জন্য কি বিজ্ঞানের অভিযান? মানুষ বিজ্ঞান সাধনা শুরু করেছিল দুর্জয় প্রকৃতি শক্তিকে জব্দ করার জন্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীবৃন্দ মানুষের কল্যানের জন্য ডুব দিয়েছেন অজ্ঞাত-রহস্য অনুসন্ধানে রহস্যসমুদ্রে, তার আবরণ উন্মুক্ত করে আশ্চর্য প্রতিভার দ্বারা আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন সম্পদ ও শক্তি যা ছিল আগে গোপন। জলে, স্থলে, মহাকাশে সর্বত্র আজ মানুষের অপ্রতিহত অভিযান। কল্পনার চাঁদে সুতো কাটছে বসে বুড়ি, কেউ এখন আর সে কথা বিশ্বাস করবে না।

কারণ, পৃথিবীর মানুষ পৌঁছে গেচে চাঁদে। লাল গ্রহ মঙ্গলে উন্নত জীবের অস্তিত্ব নিয়ে জল্পনার অবসান ঘটেছে যখন মানুষের তৈরী মহাকাশ যান মঙ্গলে পৌঁছাল। বিজ্ঞান সাধনার মূলমন্ত্র ভয়ংকরকে শুভংকর করে তোলা, যা সত্য, সুন্দর, মঙ্গলদায়ক তার অনুসন্ধান করা। বিজ্ঞান সংগ্রামশীল মানুষের জীবনে শক্তি ও শান্তির বাণী বহন করে আনার জন্য, পৃথিবীকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য, সমাজকে সুন্দর থেকে সুন্দরতম করার জন্য তার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে বিশ্বশান্তি ও বিশ্বকল্যাণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান ব্যর্থ হতে চলছে কেন?

বিজ্ঞান কি সত্যি মৃত্যু-সাধনায় ব্যাপৃত

বিজ্ঞানীর কাছে মানুষের ঋণ অপরিমেয়, বিজ্ঞানের কল্যাণজনক দিক অবশ্যই স্বীকার্য। প্রশ্ন ওঠে, জীবন রক্ষার সাধনার পরিবর্তে বিজ্ঞানী বিধবংসের কাজে নিজের শক্তি ও মনীষাকে নিয়োজিত করল কেন? কোন্ শক্তির কাছে বিজ্ঞানীর মহান আদর্শ, বিবেক পরাজয় স্বীকার করল? মানবসভ্যতা ধবংসোন্মুখ হওয়ার জন্য কি বিজ্ঞানী দায়ী না অন্য কোন দানবীয় শক্তি অলক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে?

পুঁজিবাদী মানুষের বিকৃত ক্ষুধার পরিণাম

আধুনিক সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রধর্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এই কল্যাণ জনক কাজের মধ্যে আত্মগোপন করে আছে কিছু মানুষের সীমাহীন লোভ, অন্য জাতিকে শাসন ও শোষণের হিংস্র প্রবৃত্তি। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের রক্তক্ষয়ী- আগ্রাসন মনোবৃত্তির ফলে পৃথিবী আজ ভয়ার্ত ও উৎকণ্ঠিত। স্বার্থান্ধ ধনিক শ্রেণীর কাছে বিজ্ঞানী অনেক সময় বিকিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের প্রতিভাকে। রাষ্ট্রের স্বার্থ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে মানবতার ধবংসের জন্য। সাম্রাজবাদ হিংস্র দানবের মতো পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইছে, ঘটছে জীবনাদর্শের বিপর্যয় আধুনিক কিছু রাষ্ট্রের অশুভ শক্তির প্রভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে কোনো কোনো বিজ্ঞানী বিশ্বে নরমেধযজ্ঞের অনুষ্ঠানে ইন্ধন যোগাতে এগিয়ে আসছেন।

অশুভ শক্তির পরাজয়

লোভীর বিকৃত ক্ষুধা ও দন্ত মানুষের আত্মিক শক্তিকে, ন্যায়ধর্মকে চিরকাল পঙ্গু করে রাখতে পারবেনা। মানুষের বিবেক যখন জেগে উঠবে- সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসীবাদ, নাজীবাদ, সামরিকবাদ একদিন পরাজয় স্বীকার করবেই। মানুষের শ্রোয়োবুদ্ধি ও মানবতাবোধের অমোঘ প্রভাবে প্রকৃতির নিয়মে সমাজতন্ত্র- সাম্য-মৈত্রী প্রতিষ্ঠা অবশ্যম্ভাবী, নতুন আদর্শে প্রলুব্ধ বিজ্ঞানীদের চিত্তে জাগবে মানবকল্যাণের প্রেরণা।

উপসংহার

বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। বিজ্ঞানের শুভ- অশুভ নির্ভর করে তার প্রযোগের ওপর। বিজ্ঞান পৃথিবীকে চিরকাল সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞান অভিশাপ হতে পারে না, বিজ্ঞানের আশীর্বাদ একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীকে পৌঁছে দিচ্ছে উন্নতির শীর্ষে। শুভ শক্তির কাছে অশুভ শক্তির পরাজয় হবেই।

আরও পড়ুন – আধুনিক সভ্যতায় তথ্য-প্রযুক্তির ভূমিকা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment